ষোড়শ সংশোধনীর শুনানিতে ‘রাজনৈতিক বক্তব্য’ না দিতে আহ্বান

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের আপিল শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষকে ‘রাজনৈতিক বক্তব্য’ না দিতে বলেছে আপিল বিভাগ। আজ রবিবার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষের তৃতীয় দিনের শুনানি শুরু হওয়ার আগেই এই আহ্বান আসে আদালতের কাছ থেকে।

আদালতে এদিন রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের সঙ্গে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজাও ছিলেন।

যুক্তিতর্ক শুরুর আগে আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে বলে, “এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ মামলা। রাজনৈতিক বক্তব্য রাখবেন না, সাইড টক করবেন না। কোর্টের ডেকোরাম মেইনটেইন করতে হবে। ইমোশনকে কন্ট্রোল করতে হবে। ”

আপিলের আবেদনের শুনানি গ্রহণের দিন অ্যামিচি কিউরি ঠিক করে দেওয়ার কথা তুলে ধরে আদালত আর কাউকে অ্যামিকাস কিউরিয়া হিসেবে নেয়ার কিংবা কোনো ‘সাজেশন্স’ থাকলে তা দিতে মাহবুবে আলমকে আহ্বান জানান। তখন তিনি বলেন, “সাজেশন্স দিব না। ”

আদালত বলে, এখানে পলিটিক্যাল সাবমিশন শুনব না। সাংবিধানিক বিষয়ে শুনানি করতে হবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “সাংবিধানিকভাবে যদি বঙ্গবন্ধুর কথা চলে আসে তখন কী হবে? এছাড়া সাংবিধানিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলে পলিটিক্যাল বিষয়গুলো আসবেই। ”

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতেই ছিল। বঙ্গবন্ধুর সময় চতুর্থ সংশোধনী হলে তা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত হয়। কিন্তু জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে ন্যস্ত হয়। পরে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হয়। এর পর ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে আনা হয়। এর বিরুদ্ধে কয়েকজন আইনজীবী আদালতে গেলে গত বছরের ৫ মে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করা হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি এখন চলছে।

এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা বলেন, “আজকে আমার মূল বক্তব্য ছিল এই রিট পিটিশনটাই মেইনটেনেবল (গ্রহণযোগ্য) না। এটি কোনো অবস্থায়ই পাবলিক ইন্টারেস্টের (জনস্বার্থের) আওতায় পড়ে না। এই কেসেও যদি কেউ এগ্রিভড (সংক্ষুব্ধ) মনে করেন, তাদের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের জাজরাও মনে করতে পারেন। কিন্তু বর্তমান মামলাটি কোনোভাবেই পাবলিক ইন্টারেস্ট হতে পারে না, এটা ছিল আমার বক্তব্য। ”

তিনি বলেন, “হাইকোর্ট বিভাগ আপিল বিভাগের রায় খণ্ডন করেছেন। হাইকোর্ট বিভাগ আপিল বিভাগের সমস্ত রায় মানতে বাধ্য। হাই কোর্ট বিভাগ এটি খর্ব করেছেন। এ ছাড়াও বলেছি এ মামলাটি প্রিম্যাচিউরড। এখানে একটি আইন পাস করার কথা ছিল, সেটিও করা হয়নি। উদারহণ দিয়ে আমি বলেছি যে শিশুটির জন্মই হয়নি সেই শিশুটিকে গলাটিপে মেরে ফেলার প্রয়াস চালানো হয়েছে এ মামলা করে। ”

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আরো বলেন, “সংবিধানের ৯৬ ধারাটি সংবিধান প্রণেতারা প্রথম থেকেই রেখেছেন। মাঝখানে মার্শাল ল অথরিটি বেআইনিভাবে ক্ষমতা দখল করেছে। তারাই এ সংবিধানকে বিকৃত করে সুপ্রিম জুডিশিয়াল প্রভিশন ঢুকিয়েছেন। ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বরং আমরা সংবিধানের মূল জায়গায় ফিরে গেছি। এতে সংবিধানের বেসিক স্ট্রাকচারের কোনো পরিবর্তন হয়নি। মূল ধারায় ফিরে যাওয়া কোনোভাবেই সাংঘর্ষিক হতে পারে না। হাইকোর্ট ডিভিশন একটি ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে রায় দিয়েছেন।

সূত্র: কালের কন্ঠ