দিনমুজুরের মেয়ে সজনীর সাফল্য, শংকা উচ্চ শিক্ষা নিয়ে

মঞ্জুরুল আলম মাসুম, বাগাতিপাড়া:

পেটে ভাত জোটে না, পরনে চাহিদামতো কাপড় থাকে না। দরিদ্রতা আর নানা অসঙ্গতির সঙ্গে নিত্য লড়াই যেন নিয়তি। তারপরও লেখাপড়া করার ইচ্ছা প্রকাশটা বুঝি অযৌক্তিক। তবুও সে দমেনি। হার মানেনি দারিদ্র্যের কাছে। নানা প্রতিকুলতার বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রাম করেও জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে সে। মূল লক্ষ্য যথাযথ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দারিদ্র্য দূর করে পরিবারের দুখী বাবা-মার মুখে হাসি ফোটানো। সে অনুযায়ী জীবনযুদ্ধে নেমে শত বাধা পেরিয়ে সজনী খাতুন দেখিয়েছে বিশেষ কৃতিত্ব।
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার চকগোয়াশ-বেগুনিয়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তার পড়ালেখায় ছেদ পড়েনি। তার স্বপ্ন বড় হয়ে মানুষের মতো মানুষ হওয়া। কিন্তু চরম দরিদ্রতা তার সেই স্বপ্নপূরণের পথে বিশাল বাধা।

এ বাধা ডিঙিয়ে সেই স্বপ্নপূরণ হবে কিনা সে চিন্তাই এখন সারাক্ষণ সজনীর। বেগুনিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম ও নাজমা বেগমের মেয়ে সজনী। পরিবারে দুই-ভাই বোনের মধ্যে সজনী  ছোট। বড় ভাই সজল আলী গত বছর বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ- ৪.১৭ পেলেও  পড়ালেখার খরচ জোগাড় করতে না পেরে মানবিকে একাদশ শ্রেণীত ভর্তি করিয়েছেন বাবা-মা। সজল নিজেও মাঝে মধ্যে বাবার সাথে দিনমুজুরের কাজ করে।

অন্যদিকে অর্থের অভাবে সজনীকে নতুন বই কিনে দিতে পারেননি বাবা। পুরাতন বই আর শিক্ষকদের বিনা পয়সায় প্রাইভেট পড়ে পড়া-লেখা চালিয়েছে সজনী। এমনকি প্রতিবেশির দেওয়া পোষাকেই দিতে হয়েছে এসএসসি পরীক্ষা। সজনীর বাবা দিনমজুরের কাজ করে। বর্তমানে তিনি প্রায়ই অসুস্থ থাকেন। কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে সংসার চলছে। সজনী শহরের ভালো কলেজে পড়াশোনা করতে চায়। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও সামর্থ্য নেই বাবা-মায়ের। তার ইচ্ছা শহরের ভালো কলেজ থেকে পাস করে চিকিৎসক হওয়ার। কিন্তু ইচ্ছা পূরণ হবে কিনা জানে না সে। অর্থের অভাবে স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যাবে কি না।
চকগোয়াশ বেগুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আসলাম আলী বলেন, অত্যন্ত মেধাবী সজনী গরিব ঘরে জন্ম নিলেও  অভাবী সংসারে খেয়ে না খেয়ে কষ্ট করে লেখাপড়া করে সার্থক হয়েছে। দোয়া করি, সে যেন মানুষের মতো মানুষ হয়ে সমাজের সেবা করে।

স/অ