শ্রেণিকক্ষে মোবাইল ফোন, আমরা কি করতে পারি?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

দুনিয়াটা সত্যিই খুবই কোলাহলপূর্ণ। যন্ত্রের গর্জন, মানুষের কথা আরো কতো কিছুই না শব্দ সৃষ্টি করে চলেছে।

এ পরিবেশে মনোযোগ এত সহজে আসে না। তাই কোনো কিছুতে মন দেওয়ার ক্ষমতা বিশেষ এক গুণ। এটা এমন এক ক্ষমতা যা সবার মাঝেই আসা উচিত। যারা কাজে ব্যস্ত থাকেন তারাই বোঝেন। কাজে মনোযোগ ধরে রেখে অন্যান্য কোলাহলে নজর না দেওয়া কত কঠিন এক কাজ।

অতি সাধারণভাবেই আমাদের মন-প্রাণ ঢেলে দেওয়া মনোযোগ নষ্ট হতে পারে। কাজের সময় পকেটা থাকা মোবাইল বেজে উঠলেই সব শেষ। ই-মেইল আসলেই তার শব্দ ধ্যান ভেঙে দেয়। কোনো আপডেট বা নিউজফ্ল্যাশে কাজের মেজাজ নষ্ট হতে সময় লাগে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্মার্টফোন আমাদের মনোযোগ নষ্টের অন্যতম কারণ হয়ে থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। তারা ক্লাসরুমে স্মার্টফোন নিয়ে যাচ্ছে।

অভিভাবকরা নানা কারণেই চান তার সন্তানের কাছে একটা ফোন থাকুক। আমরা জানতে চাই তারা কোথায় আছে বা কি করছে। তারা কখন বাড়ি ফিরবে বা পথে কোনো সমস্যা হলো কিনা তা জানতে চাই। কিন্তু তারপরও অনেক কিছুই ঘটে। ফোনের ব্যাটারি শেষ হয়ে যায়। তারা ফোন হারিয়ে ফেলে। আসলে সন্তানের কাছে একটা ফোন আছে মানে বাবা-মায়েরা অনেকটা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।

আসলে পড়াশোনার অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে স্মার্টফোন। তাই ‘বিওয়াইওডি’ তত্ত্বটা অনেক স্কুলেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এর অর্থ ‘ব্রিং ইওর ওন ডিভাইস’। প্রত্যেকে স্মার্টফোন বা ট্যাব আনবে ক্লাসে। এর মাধ্যমেওই তারা হিসাব-নিকাশে ক্যালকুলেটর ব্যবহার করবে, নোট তৈরি করবে, বই পড়বে, যোগাযোগ করবে এবং সমন্বয় করবে। স্কুল থেকেই এ বিষয়ে অভ্যস্ত করে ফেলা হবে শিক্ষার্থীদের। তাদের নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহার শেখানো হবে। শিশুদের টার্গেট করেই এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ বয়স থেকে চর্চা করালে তাদের প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে কোনো আশঙ্কা থাকবে না।

কিন্তু এ পদ্ধতির কিছু বাজে দিকও রয়েছে। শিক্ষা অর্জনের বিষয় চিন্তা করা হলে এর ব্যবহার ভালো বলেই মনে হয়। কিন্তু বাস্তবে এই ফোন কতটা শিক্ষা প্রদানের কাজ করবে তা ভাববার বিষয়।

আসলে সবাই যুক্ত থাকতে চান। কিন্তু কিসের বিনিময়ে? ফোন বের করে একটা মেসেজ দেখ কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে। সব শিক্ষার্থীর মেধা এক নয়। এর ব্যবহার একেক জনের কাছে একেক রকমের হতে পারে। অনেকে ক্ষতিকর কাজেও ব্যবহার করতে পারে। তবে একটা বিষয় নিশ্চিত করা যাবে। তা হলো, সবাই একই ধরনের প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে লেখাপড়া করতে পারবে। এর জন্য কিছু আলাদা ব্যবস্থাও থাকতে হবে। যেমন- ক্লাসে সব শিক্ষার্থীর ফোন যেন চার্জশূন্য না হয়ে পড়ে তার জন্য কতগুলো প্লাগপয়েন্ট লাগবে? এটা কর্তৃপক্ষেরই চিন্তা করতে হবে।

আমেরিকার ইউনিভার্সিটিগুলোতে ডিজিটাল যন্ত্রের ব্যবহার বিষয়ে এক জরিপে বলা হয়, ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী জানায় যে ক্লাসরুমে তাদের মনোযোগ নষ্ট করে প্রযুক্তি যন্ত্র। তারা শিক্ষকের লেকচার অনেকটাই শোনেন না। আরেক জরিপে বলা হয়, ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসে মোবাইল নিয়ে আসেন। ক্লাস চলাকালে টেক্সট করেন ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থী। এমনকি পরীক্ষা চলাকালে টেক্সট করেন ১০ শতাংশ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৪১ শতাংশ মোবাইল ব্যবহার করেই সাইবার বুলিং এর কাজটি করেন। অনলাইনে হুমকি-ধামকি দেওয়ার মাধ্যমে পরিণত হয়েছে এটি।

অতি জরুরি জিনিসে পরিণত হয়েছে স্মার্টফোন। তরুণ প্রজন্ম প্রযুক্তির সঙ্গে থাকতে চায়। জীবনের সব কাজেই প্রযুক্তি উপকারিতা খুঁজে পাচ্ছেন তারা। আসলে এগুলো অভিশাপ না আশীর্বাদ তা নির্ভর করে তা কি কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে তার ওপর। এটি প্রযুক্তির দোষ নয়। তাই স্কুলে ব্যবহার করতে হলে কর্তৃপক্ষকে ব্যবহারের নীতিমাল প্রণয়ন করতে হবে। এর বাস্তবায়নও জরুরি। শিক্ষা প্রদানকালে শিক্ষকরাই ঠিক করবেন শিক্ষার্থীরা ওয়াই-ফাইয়ের মাধ্যমে কোন অংশগুলোতে ঢুঁ মারতে পারবেন।

শিক্ষার্থীরা যে কেবল শারীরিকভাবেই ক্লাসে থাকবেন তা চান না শিক্ষকরা। তারা মানসিকভাবেও ক্লাসে উপস্থিত হবেন। এক গবেষণায় বলা হয়, যে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে বসে লেখপড়া সংক্রান্ত টেক্সট করেন স্মার্টফোনে, তারা পরীক্ষায় ১০-১৭ শতাংশ নম্বর বেশি পান।

তাই শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সুযোগ সৃষ্টি করতে প্রযুক্তির ব্যবহার ঘটাতে হবে ক্লাসরুমে। কিন্তু একে অন্য কাজে লাগালে পড়া থেকে মনোযোগ সরে আসবে নিঃসন্দেহে। তাই প্রয়োজনে ক্লাসে মোবাইলটি বন্ধ রাখার নিয়ম থাকতে হবে। বন্ধ থাকবে ততক্ষণ, যতক্ষণ না পর্যন্ত তা খোলা জরুরি হয়ে পড়ে। সূত্র: হাফিংটন পোস্ট