শ্রমিক নিয়োগে ফের জিটুজি পদ্ধতিতে ফিরতে চায় মালয়েশিয়া

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:  বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগে পুরনো ব্যবস্থা জিটুজিতে ফেরত যাওয়ার কথা ভাবছে মালয়েশিয়া। বর্তমান জিটুজি প্লাস প্রক্রিয়া থেকে জিটুজি (গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট) প্রক্রিয়া বেশি নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী বলে মনে করছে সে দেশের সরকার। সে কারণেই পুরনো পদ্ধতিতে ফিরতে চায় মালয়েশিয়া। তবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মালয়েশিয়া সরকার এমন কোনও তথ্যই জানায়নি বাংলাদেশকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে জিটুজি পদ্ধতি চলমান থাকাকালে ২০১৬ সালে বেসরকারিভাবেও কর্মী নিয়োগের সুযোগ রেখে জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগে দুই দেশের সরকার চুক্তি করে। এই পদ্ধতিতে বেসরকারি পর্য়ায়ে মাত্র ১০টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লোক নিয়োগ করে মালয়েশিয়া। এতে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এরপর মালয়েশিয়া কর্মী নিয়োগ বন্ধের ঘোষণা দেয়।

সম্প্রতি মালয়েশিয়ার স্থানীয় পত্রিকা স্টার অনলাইন সে দেশের সরকারের বরাত দিয়ে জিটুজিতে ফেরার কথা প্রকাশ করেছে। গত ২৯ জুলাই মালয়েশিয়ার স্থানীয় পত্রিকা স্টার অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম কুলাসেগারান বলেন, ‘মালয়েশিয়ার সরকার শ্রমিক নিয়োগে আবারও পুরনো ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চাচ্ছে। আমরা জিটুজি প্লাস আর চাচ্ছি না। যদি আবার কিছু হয় তাহলে জিটুজিতেই হবে। জিটুজিতে শ্রমিক নিয়োগ করলে মধ্যসত্ত্বভোগীদের আর কোনও ভূমিকা থাকবে না এবং দুর্নীতি হওয়ারও সুযোগ কম থাকবে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ রফতানির ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার জিটুজি প্লাস পদ্ধতির কারণে নেপাল নড়েচড়ে বসেছে। মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি বন্ধ রেখেছে দেশটি। নেপাল সরকার বর্তমান ব্যবস্থায় মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি প্রক্রিয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে।

নেপালের লেবার এটাশে সুত্রে জানা গেছে, সেদেশের সরকার মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানিতে অনেক অনিয়ম খুঁজে পায়। নেপাল সরকারের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে— বেসরকারি কোম্পানির মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু রেখে একচেটিয়া ব্যবসা ধরে রাখতে চাচ্ছে মালয়েশিয়া।

মালয়েশিয়ার গণমাধ্যমকে দেওয়া বক্তব্যে মালয়েশিয়ার মানব সম্পদমন্ত্রী আরও বলেন, ‘শ্রমিকরা কখন দাস নয়। বিদেশি শ্রমিকদের সম্মান দিতে হবে। আগে জিটুজিতে কোনও সমস্যা ছিল না, তাই আমরা আবার জিটুজিতে ফেরত যেতে চাই।’

এর আগে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর নেতৃত্বে পরিচালিত একটি মানবপাচারচক্র মালয়েশিয়ায় শ্রমিকদের কাজ দিয়ে দুই বছরে অন্তত ২০০ কোটি মালয়েশিয় রিঙ্গিত হাতিয়ে নিয়েছে। স্টার অনলাইনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় এর প্রায় ৪ হাজার ২০০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে ওই বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগও রয়েছে। প্রতিবেদনের পর জিটুজি প্লাসে দশ সিন্ডিকেট চক্রের কর্মী নিয়োগের চলমান প্রক্রিয়া স্থগিত ঘোষণা করে মালয়েশিয়া সরকার। ওই চক্রের বিষয়ে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বহাল রাখা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো বন্ধের ব্যাপারে মালয়েশিয়া সরকার কিছুই জানায়নি। আর লোক পাঠানোও বন্ধ নেই।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর দেওয়া তথ্যমতে, এ বছরের জুন ও জুলাই মাসে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক গেছে প্রায় ৩০ হাজার।

এদিকে, মালয়েশিয়া সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানে না মন্ত্রণালয় এবং মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাস। মালয়েশিয়ার বাংলাদেশের লেবার কাউন্সিলর সায়েদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনও তথ্য আমাদের কাছে নেই। মালয়েশিয়া সরকার এমন কোনও তথ্য আমাদের জানায়নি।’

বিএমইটির পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘না ঠিক নয়। এমন কোনও আলোচনা হয়নি। জিটুজি প্লাস পদ্ধতিই রয়েছে।’

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে দুই দেশ শুধু সরকারি মাধ্যমে জিটুজি পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাতে চুক্তি সই করে। ২০১৬ সালের তা পরিমার্জন করে ১০টি বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিকে জিটুজি প্লাসের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০১৬ সালের শেষের দিক থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ শ্রমিক মালয়েশিয়া গেছেন। এর মধ্যে ২০১৮ সালে জুলাই মাস পর্যন্ত ১ লাখ ৯ হাজার ৫৬২ জন শ্রমিক পাঠায় বাংলাদেশ।