শনিবার , ১৭ আগস্ট ২০১৯ | ১৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

শুদ্ধাচারের গণশুনানি নাকি দায় মুক্তি

Paris
আগস্ট ১৭, ২০১৯ ৬:২০ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

সরকার তার সকল দাপ্তরিক কাজ-কর্ম ও ভবিষ্যৎ কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি থেকে মুক্তির লক্ষ্যে রাষ্ট্রের নাগরিকদের মতামত গ্রহণের জন্য জাতীয় শুদ্ধাচার নামে গণশুনানির আয়োজন করে থাকে। আমাদের দেশে এ গণশুনানির ধরণ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। গণশুনানির মধ্যে সবচেয়ে অগ্রগামী বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

আইন অনুযায়ী এই কমিশন একটি স্বাধীন সার্বভৌম নিয়ন্ত্রক সংস্থা। যেকোনো জ্বালানী বা এনার্জি মূল্য সরকার চাইলেই বাড়াতে বা কমাতে পারে না। সরকার বা কোম্পানির ট্যারিফ নির্ধারণের প্রস্তাব কমিশনের দাখিল করলে কমিশন সংশ্লিষ্ট সকল স্টেক হোল্ডার ও নাগরিকদের জন্য মুক্ত গণশুনানি করে ট্যারিফ নির্ধারণ করে থাকে।

যদিও এত স্বচ্ছতার পরেও এই কমিশন ও গণশুনানির মূল্যায়ন নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। দেশের বেশ কয়েকটি কমিশনে গণশুনানিতে আমার অংশগ্রহণের সুযোগ হয়েছিল। একেকটি কমিশনের ধরণ ও আইন যেমন ভিন্ন আবার জবাবদিহিতাও ভিন্ন। সেই দিক থেকে বিবেচনা করছে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে প্রথম স্থানে রাখা যায় নিঃসন্দেহে।

এই কমিশনের চেয়ারম্যান একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি। তারপরও ব্যক্তি ইমেজ দিয়ে কি কমিশন চলে! তাঁর উপরে সরকারের প্রভাব কতটুকু বা তিনি সেই প্রভাবকে কীভাবে মোকাবেলা করবেন সেই মুখ্য বিষয়।

বর্তমান সরকার প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দিয়েছে যে, তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে নাগরিকদের মূল্যায়ন করার বা তা নির্ধারণ করা জন্য গণশুনানির আয়োজন করার। যার ধারাবাহিকতায় গত ১২ জুন ২০১৯ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল, কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে “টেলিযোগাযোগ সেবা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যক্রম” সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন, বাংলাদেশ মিলনায়তনে এক গণশুনানির আয়োজন করে।

অবশ্য টেলিযোগাযোগ আইনে ৮৭ ধারাতে গণশুনানির ব্যাখ্যা রয়েছে। এ কমিশন এর পূর্বে গণশুনানি করেছিল ২২ নভেম্বর ২০১৭ সালে। ওই গণশুনানিতে আমি বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে অংশগ্রহণ করি। এছাড়া প্রায় ৩০০ প্রশ্নকারী নিবন্ধন করে আবেদন করেছিল।

গণমাধ্যম কর্মীরাও গ্রাহক হিসেবে তাদের অভিযোগ উপস্থাপন করেছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় ওই শুনানিতে আনিত অভিযোগ ও নিষ্পত্তির বিষয় প্রকাশ করা হলো প্রায় ৩ বছর পর অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে। বিইআরসি’র আইনে বলা আছে, গণশুনানির ৯০ দিনের মধ্যে রায় প্রদান করতে হবে। কিন্তু বিটিআরসি’র আইনে এ রকম কোন বাধ্যবাধকতা নেই।

বিইআরসি একটি স্বাধীন সার্বভৌম প্রতিষ্ঠান। যার চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক। আর বিটিআরসি’র আইনে স্বাধীন কমিশনের কথা থাকলেও এর চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন সরকারিভাবে। ফলে ক্ষমতা ও বিচারের মধ্যে একটা প্রভাব থাকার যথেষ্ট কারণ আছে।

আইনে যাই থাক না কেন, আমরা ১২ তারিখের গণশুনানির বিষয়ে আপনাদের জানাতে চাই। গণশুনানির জন্য দু’টি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। কমিশন চিঠি ইস্যু করে ৯ তারিখে। ১১ তারিখে চিঠি প্রাপ্তির পর তড়িঘড়ি করে ১৪টি প্রশ্ন তৈরি করে পরদিন হাজির হলাম গণশুনানিতে।

গণশুনানি শুরু পর আমি বক্তব্য রাখার জন্য দাঁড়ালেও আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলা হয়, আপনি বক্তব্য রাখতে পারবেন না। কারণ যারা নিবন্ধন করে তাদের মতামত নিবন্ধন করেছেন শুধু তারাই বক্তব্য রাখবেন। এরপর নিবন্ধনকৃত ভুক্তভোগী গ্রাহকদের মতামত নেওয়া শুরু হয়। এর মধ্যে আমি আবার কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আমাকে বলা হয়, আপনাকে শেষের দিকে বলার সুযোগ দেওয়া হবে।

উপস্থিত অভিযোগকারীগণ ও গণমাধ্যমকর্মীরা বেশীর ভাগই অভিযোগ দায়ের করেন অপারেটরদের বিরুদ্ধে। এখানে লক্ষণীয় বিষয় অপারেটরদের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তাদেরকে তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের জবাব দেওয়ার সুযোগ না দিয়ে কমিশন নিজেই তাদের হয়ে জবাব দেয়।

এরপর আমাকে সুযোগ দেওয়া হলে, সর্বোচ্চ পাঁচটি প্রশ্ন করার কথা বলা হয়। সেই ১৪টি লিখিত প্রশ্ন কমিশন বরাবর প্রেরণ করি এবং বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উপস্থাপন করি। যার মধ্যে রয়েছে সেবার মান ও কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে। চেয়ারম্যান তাঁর বক্তব্যে কিছু উত্তর দেন। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আজকের এই গণশুনানির উত্তর ১৫-২০ দিনের মধ্যে প্রকাশ করা হবে।

মজার ব্যাপার হলো আজ প্রায় ২ মাস ৫ দিন অতিবাহিত হলেও কমিশনের জবাব মিলছে না। অথচ কমিশনের আইনেই আছে উপধারা (৪) গ্রাহকের অসুবিধা সংক্রান্ত কোন তথ্য বা অভিযোগ প্রাপ্তির পর সেবাপ্রদানকারী অনতিবিলম্বে নিষ্পত্তি করিবে এবং এ ব্যাপারে কমিশন কর্তৃক কার্যপদ্ধতি (Code of Practice) অনুসরণ করিবে।

উপধারা (৫) কোন গ্রাহক তাহার অসুবিধা বা অভিযোগ সম্পর্কে সেবাপ্রদানকারীকে অবহিত করা সত্ত্বেও উহা যথা সময়ে এবং যথাযথভাবে নিষ্পত্তি না করা হইলে উক্ত গ্রাহক কমিশনের নিকট লিখিত ভাবে বিষয়টি সম্পর্কে কমিশনের নিকট আবেদন করিতে পারিবে।

উপধারা (৬) এরূপ আবেদন প্রাপ্তির ৭ (সাত) দিনের মধ্যে কমিশন উক্ত অসুবিধা বা অভিযোগ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় অনুসন্ধানের পর সেবা প্রদানকারীর করণীয় সম্পর্কে যথাযথ নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে। দফা ৪১ (ক) উক্ত আদেশ লঙ্ঘনকারীর ওপর অনধিক ৩০০ (তিনশত) কোটি টাকা প্রশাসনিক জরিমানা এবং উক্ত আদেশের পর যত লঙ্ঘন চলিতে থাকে উহার প্রতিদিনের জন্য অনধিক অতিরিক্ত ১ (এক) কোটি টাকা প্রশাসনিক জরিমানা করিতে পারে।

এত কঠিন আইন থাকা সত্ত্বেও উক্ত গণশুনানির পূর্বেই অনেক গ্রাহক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন কমিশনে এবং আমরাও যে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলাম তারও কোন সুরাহা কমিশন না করে প্রকারান্তরে কমিশন নিজেই তার আইন লঙ্ঘন করল।

এবার একটি ভিন্নধর্মী গণশুনানির কথা বলছি। ২০১৬ সালে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) অফিস থেকে বলা হল, ঔষধ নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি গণশুনানিতে যেতে হবে। বেশকিছু প্রশ্ন তৈরি করে ক্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে সেই গণশুনানিতে হাজির হলাম।

উপস্থিত হয়েই অবাক হলাম, কোন লোকজন নাই। নেই কোন মিডিয়া। কর্মকর্তাদের প্রশ্ন করা হলে তাদের উত্তর, শুধু আপনারা এবং আমরা মিলে এই গণশুনানির আয়োজন। গণশুনানি হয়ে গেল গোলটেবিল আলোচনা। অধিদপ্তর থেকে এক সপ্তাহের মধ্যেই আমার আনিত প্রশ্নের উত্তর লিখিতভাবে পাঠানো হলো ঠিকই কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল এ শুনানির নামে তাদের ওপর জবাবদিহিতা নিশ্চিতের যে দায়িত্ব তা কোন রকমে মেনে দায় মুক্তি পাবার জন্যই এ ব্যবস্থা।

প্রিয় পাঠক, এবার আপনারই বিচার করুন, শুদ্ধাচারের কথাই বলি আর ট্যারিফ নির্ধারণের কথাই বলি কিংবা জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য, যাই বলি না কেন কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে এসকল গণশুনানি কমিশনগুলোর দায় মুক্তির জন্য।

সর্বশেষ - মতামত