শীতকালে নাকে জটিল রোগ হলে করণীয়

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

শীতকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। এ কারণে নানা জটিল রোগ বাসা বাঁধে শরীরে। বিশেষ করে সর্দি-কাশি এবং নাকের কিছু রোগ দেখা দেয়। নাকের অ্যালার্জি, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, পলিপ ও এডিনয়েড, সাইনাস এসব সমস্যা দেখা দেয়।

শীতকালে নাকের বিভিন্ন রোগের উপসর্গ ও চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন নাম কান ও গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সজল আশফাক।

নাক দিয়ে রক্ত পড়া

নাক দিয়ে রক্ত পড়ার অনেক কারণ আছে। ছোটদের ক্ষেত্রে সাধারণত নাক খোটার কারণে নাকে ক্ষত হয়ে রক্তপাত হয়। বড়দের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কারণে নাক দিয়ে রক্ত ঝরে। শীতে নাকের ভেতরটা শুকিয়ে চামড়া উঠে যায় এবং তখন নাকের ঝিল্লি ছিঁড়ে গিয়ে নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।

পলিপ

সাধারণত দীর্ঘদিন নাকে অ্যালার্জি থাকলে এমনটি হয়ে থাকে। নাকের মধ্যে মিউকাস ঝিল্লিগুলো ফুলে আঙুরের দানার মতো বিভিন্ন আয়তনের হয়ে থাকে। নাকের পলিপে নাক বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেইসঙ্গে সাইনাসের ইনফেকশন হয়ে মাথাব্যথা হতে পারে। এ সমস্যার জন্য অপারেশন করার দরকার পড়ে। সনাতন পদ্ধতির অপারেশনে আবার পলিপ দেখা দিতে পারে। আধুনিক অ্যান্ডোস্কোপিক সার্জারির মাধ্যমে রোগটি নিরাময়ে সাফল্য এসেছে। প্রাথমিক অবস্থায় স্টেরয়েড স্প্রে ব্যবহার করে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

নাকের অ্যালার্জি

এটি অ্যালার্জিজনিত নাকের প্রদাহ। ধূলাবালি, ঠাণ্ডা-গরমসহ বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি উদ্রেককারী উপাদান এর কারণ। রোগটি স্থায়ীভাবে নিরাময়যোগ্য না হলেও নিয়ন্ত্রণযোগ্য। ওষুধের ব্যবহার ও ঠাণ্ডা-অ্যালার্জি উদ্রেককারী উপাদান এড়িয়ে চলার মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা যায়।

সাইনাসের ইনফেকশন

সাধারণত নাকে অ্যালার্জি ও পলিপ, নাকের হাড় বাঁকা ইত্যাদি কারণে নাকের দুই পাশের ম্যাক্সিলারি সাইনাসে ইনফেকশন দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে মাথাব্যথাই মূল উপসর্গ। সাইনাসের একটি এক্স-রে করলেই রোগ সম্পর্কে অনেক ধারণা পাওয়া যায়। প্রাথমিক অবস্থায় ওষুধ ব্যবহার, পরবর্তী সময়ে সাইনাস ওয়াশ এবং শেষ পর্যায়ে অ্যান্ডোস্কোপিক সাইনাস সার্জারি করে রোগটি সারানো যায়। শীতে বারবার নাকের মধ্যে প্রদাহ হয়, নাক বন্ধ থাকে বলে সাইনাসের ইনফেকশন সহজেই হতে পারে।

টনসিল

শীতে গলাব্যথা হয় অনেকেরই। এই গলাব্যথার জন্য মূলত দায়ী হচ্ছে টনসিলের ইনফেকশন। এটি মূলত শিশুদের সমস্যা। বড়দেরও হয়। টনসিলের সমস্যায় গলাব্যথা, খেতে গেলে ব্যথা, সামান্য জ্বর ইত্যাদি থাকে। প্রথমত ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। বারবার হতে থাকলে সম্যক জটিলতা ও কষ্টের কথা বিবেচনা করে টনসিল অপারেশন করিয়ে নিতে হয়। সারা পৃথিবীতে শিশুদের যত অপারেশন হয়, তার মধ্যে টনসিল অপারেশনের অবস্থান সবার শীর্ষে।

এডিনয়েড

নাকের ছিদ্রের পেছন দিকে যে অঞ্চলটি রয়েছে, সেখানে এই এডিনয়েড নামক লসিকা গ্রন্থির অবস্থান। এটি অনেক সময় বড় হয়ে নাক আংশিক বন্ধ করে দেয়, ফলে নাক দিয়ে অধিকাংশ সময়ই সর্দি ঝরে। কানের সঙ্গে নাকের পেছনের অংশের যোগাযোগ রক্ষাকারী টিউবটির মুখও আংশিকভাবে বন্ধ থাকে। ফলে কানও বন্ধ থাকে। কানের মধ্যে পানির মতো তরল জমে কান ব্যথা করে। এডিনয়েড বড় হলে শিশু মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়। ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে জেগে ওঠে। রোগীর চেহারা ক্রমশ হাবাগোবা হয়ে পড়ে। অনেক অভিভাবকই এ সমস্যাটির ফলে সৃষ্ট ক্ষতি অনুধাবন করেন না। ফলে শিশুর অনেক ক্ষতি হয়। অপারেশনই হচ্ছে এর একমাত্র চিকিৎসা।

প্রতিকার

নাক, কান ও গলার এই অসুখের ঝামেলা এড়াতে শীত থেকে রক্ষার যাবতীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষ করে শীতবস্ত্র-গলাবন্ধনী, মাথা ঢেকে রাখা, হাত-পায়ে মোজা পরা, ঠাণ্ডা এড়িয়ে চলতে হবে। সেইসঙ্গে সকালে হাত-মুখ ধোয়ায় এবং গোসলে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। এত প্রস্তুতির পরও যদি অসুস্থতা পেয়েই বসে, তখন পরামর্শ নিতে হবে চিকিৎসকের।

সূত্র: যুগান্তর