শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যুবলীগ নেত্রীর স্ট্যাটাস, সমালোচনায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও তাদের গাড়ি ভাঙচুরের কয়েকটি ছবি পোস্ট করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য ফারজানা আক্তার সুপর্ণা। স্ট্যাটাসে যানবাহন ভাঙচুরের কিছু ছবি দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘বিবেকবান মানুষরা কী এই অরাজকতা সমর্থন করে? এগুলো কাদের উস্কানিতে হচ্ছে ও কেন?’ স্ট্যাটাসটি ‘গুজবে কান দিবেন না’ নামে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সিক্রেট গ্রুপেও ট্যাগ করেন তিনি। এরপর ওই সিক্রেট গ্রুপের সদস্যরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে মন্তব্যের ঘরে তার সমালোচনা করতে থাকে।

মামুন নামের একজন লিখেছেন, ‘ছোট বাচ্চাদের আন্দোলন ঠিক আছে। ড্রাইভাররা কোনও কেয়ারই করে না।’

সাইফুল ইসলাম প্রধান লিখেছেন, ‘চাটুকারগুলো ভালোমন্দ সব জায়গায় চামচামি করে সব অর্জন ম্লান করে দিচ্ছে।’ অমিত কুমার নামের একজন লিখেছেন, ‘এখানেও আপনারা উস্কানি দেখতে পান? অন্ধ হয়ে গেছেন নাকি?’ আকিব আপন নামের একজন লিখেছেন, ‘কমিটি তো হয়ে গেছে আপু, এইবার থামেন একটু। এখনকার প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি ভাইরাও ছাত্রদের পক্ষে। আপনি না থাকলে কিছু যায় আসে না।’

মাইনউদ্দিন চৌধুরী লিখেছেন, ‘দালাল লীগ।’ লাভলী বয় রাতুল নামের একটি আইডি থেকে লেখা হয়েছে, ‘চাটুকারিতার নজির দেশে ভইরা গেছে। ছাত্রলীগের নাম ডুবাইতে এসব গাঁজাখোরগুলোই যথেষ্ট। একটু পরপর একটা করে পোস্টের স্ক্রিনশট দিয়ে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিই এদের উদ্দেশ্য। সেই সঙ্গে নতুন কমিটিকে বিতর্কিত করার হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তোদের বলি, তোরা কখনোই সফল হতে পারবি না।’

সাজিদ হাসান ইফতি লিখেছেন, ‘আপু আপনার কাছ থেকে এরকম আশা করিনি! আমি নিজে ছাত্রলীগ করি। এটা কোনও উস্কানি নয়। এটা ছাত্রদের অনেকদিন ধরে জমানো ক্ষোভ। ভাইবোনের হত্যার প্রতিবাদ। সবকিছুতে উস্কানি দেইখেন না দয়া করে।’

পারভেজ হাওলাদার লিখেছেন, ‘সব জায়গায় রাজনীতি খুঁজতে গিয়ে রাজনীতির আজ বারোটা বাজাইছে। তোর বিবেকের পোস্ট ডিলিট কর তাড়াতাড়ি।’ আজিজুল হক মামুন লিখেছেন, ‘বাহ্! ভালোই তো। দেশটা কি আপনার পৈতৃক সম্পত্তি মনে করেছেন? আপনারা আসলেই ছাত্রলীগ নামধারী কীট।’

নাঈম উদ্দিন লিখেছেন, ‘দলকানারা সবকিছুতেই উস্কানি আর ষড়যন্ত্রের গন্ধ পায়।’ ফাহিম ফারুক মিশুক লিখেছেন, ‘এ ধরনের পোস্টই উস্কানি। পরশু আমাদের ছাত্রনেতারা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ডিসির অনুমতি নিয়ে ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেটসহ রাস্তায় নেমে ফিটনেসহীন গাড়ি আর লাইসেন্সবিহীন চালকদের ধরলে আন্দোলন থাকতো। থাকতো জনগণের সমর্থনও। মন্ত্রী-এমপিদের বিশৃঙ্খলার দায় কেন প্রধানমন্ত্রী নেবেন?’

মারুফা সুমী লিখেছেন, ‘তেল একটু কম মারেন আফা।’ এমরান মৃধা লিখেছেন, ‘অতি উৎসাহী পোস্ট দিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করা ছাড়া আর কিছু না। অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ। দল আপনি একা করেন না। এই ছাগলগুলার অতি উৎসাহের জন্য জননেত্রীকে বাজে ভাষায় মানুষ গালি দেয়।’

তবে ফারজানা আক্তার সুপর্ণার ফেসবুক ওয়ালে গিয়ে (বুধবার সন্ধ্যা ৬টায়) ওই স্ট্যাটাস খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বুধবার (১ আগস্ট) সকাল থেকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে চতুর্থ দিনের মতো বিক্ষোভ ও অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এ কারণে রাস্তায় গাড়ি কম থাকায় সাধারণ মানুষ পায়ে হেঁটে গন্তব্যে গেছে। তবে এ নিয়ে বিরক্তি দেখায়নি কেউ।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোকে যৌক্তিক মনে করছেন সাধারণ মানুষ। এরমধ্যে রয়েছে দুই শিক্ষার্থীকে বাসচাপায় ‘হত্যার’ সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণ ও নৌপরিবহনমন্ত্রীর অনৈতিক বক্তব্যের প্রতিবাদসহ ৯ দফা দাবি।

গত ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অদূরে বিমানবন্দর সড়কে (র‌্যাডিসন হোটেলের উল্টোদিকে) বাসচাপায় রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। দুপুর সাড়ে ১২টায় বিমানবন্দর সড়কের বাঁ-পাশে বাসের জন্য অপেক্ষা করার সময় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলো দিয়া খানম মীম ও আব্দুল করিম। এ সময় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। পথচারীরা সঙ্গে সঙ্গে আহতদের নিকটস্থ কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে গুরুতর আহত কয়েকজনকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা জাবালে নূর পরিবহনের ওই বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় ও শতাধিক বাস ভাঙচুর করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।