লালপুরের পদ্মাপাড়ে যখন শখের জেলেদের দেখা মেলে

মেহেদী হাসান:

মাছ ধরাই যখন নেশা, তখন কার কি পেশা সেটা নিয়ে ভাবতে গেলে হারিয়ে যাবে দিশা। কেউ ডাক্তার, কেউ তাতী, কেউ বা বেকার। আবার কারো কাছে মাছ ধরাটা অবসরের সাথী। কেউবা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। এমনই চিত্র দৃশ্যমান হয়েছে নাটোর জেলার লালপুর থানার পাশ দিয়ে বয়ে চলা পদ্মা নদীর পাড়ে। বিকেল হলেই এখানে দেখা মেলে ভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষদেরকে; যারা মাছ ধরতে ব্যাস্ত থাকে। এরা মাছ ধরার সরঞ্জাম নদীতে প্রয়োগ করে তাকিয়ে থাকে নদীর পানির দিকে। কখন জানি একটা মাছ টুপ করে ধরা দেয়। এসব সরঞ্জাম বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন ‘তাগি’, ‘ছিপ’ বা ‘বর্ষি’ ইত্যাদি। এসময় বিভিন্ন পেশার মানুষ একই নদীর পাড়ে বসে কিছু সময়ের জন্য ‘শখের জেলে’তে পরিণত হয়। এরা সময় পেলেই নদীতে ছুটে আসে মাছ ধরার আশায়। এদের অনেক জনকে অনেক সময় খালি হাতেও ফিরতে হয়।

মাছ ধরতে আসা হাবিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তির সাথে কথা হয়। তিনি সিল্কসিটিনিউজকে তার মাছ ধরার অভিজ্ঞতা জানান। পেশায় তাতী। লালপুর উপজেলার গৌরিপুরে পদ্মা নদীর পাড়েই তার বাড়ী। তিনি বলেন, ‘সময় পেলেই চলে আসি মাছ ধরতে। আমরা অবসর সময়টা এখানে ওখানে ঘুরে ফিরে আনন্দ করি না বরং অবসরে মাছ ধরেই আনন্দ পাই।’ এসময় কথা হয় শরিফুল ইসলাম নামের আরেক ব্যক্তির সাথে যিনি মাত্র এমবিবিএস পড়াশোনা শেষ করেছেন। লালপুর বাজারের পাশে তার বাড়ি। তিনি বলেন, ‘মাছ ধরা আমার শখ। সময় পেলে আমি পুকুরেও ছিপ দিয়ে মাছ ধরি। সবসময় মাছ পাই না। তবে শখে মাছ ধরতে নদীতে চলে আসি।’

একটা সময় ছিলো, যখন পদ্মা নদীতে মাছ ধরে দু’বেলা কোনোমতে আহার যোগানোই এই পদ্মা নদীর পাড়ের মানুষের প্রধান লক্ষ্য ছিলো। এমন শত শত পরিবার ছিলো, যে পরিবারে বাবা বড় বড় মাছ ধরেছে কিন্তু সন্তানের মুখে তুলে দিতে পারতো না। কারণ পরিবারের অভাব পূরণ করতেই মাছগুলো বাজারে তুলতে হতো। পরিবারের আহার যোগাতে হতো। এখন প্রায় সবার পরিবারেই সচ্ছলতা চলে এসেছে। তাই এখন আর ‘শখের জেলে’দেরকে বাজারে মাছ বিক্রি করে আহার যোগাতে হয় না। যে মাছ পায় সেগুলোই তারা পরিবারের সাথে ভাগ করে নেন। তবে এখনো পেশাদার জেলে রয়েছে। কিন্তুু পূর্বের সেই বেদনাদায়ক জীবনযাপন পার করে এসেছে তারা।

স/শা