রাসায়নিক সারের ব্যবহার: দ্রুত মাটিতে কমছে জৈব পদার্থের পরিমাণ

মাহবুব হোসেন, নাটোর:
দ্রুতই দেশের মাটিতে কমছে জৈব পদার্থের পরিমাণ। নাটোরসহ সারা দেশের ফসলি জমিতে অধিক মাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের কারণে আশঙ্কাজনক হারে কমেছে জৈব পদার্থের পরিমান। উত্তরাঞ্চল সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মাটিতে নূন্যতম ৫শতাংশ জৈব পদার্থ থাকার কথা থাকলেও সেখানে রয়েছে এক শতাংশেরও নিচে। এ অবস্থায় আগামী দিনে কৃষিতে অশনি হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
কৃষি বিভাগ জানায়, দেশের মোট আবাদি জমির শতকরা ৮৭ দশমিক ৭৬ভাগ নিয়ন্ত্রণ করে এদেশের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকরা। বৃহৎ এই জনগোষ্ঠির জন্য খাদ্য চাহিদা পুরন করতে গিয়ে একই জমিতে বারবার ফসল ফলাতে হচ্ছে প্রান্তিক কৃষকদের।
মাটি নিয়ে গবেষণা করে এমন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মৃত্তিকা সম্পদ গবেষনা উন্নয়ন ইন্সটিটিউট বলছে, মাটিতে  নূন্যতম ৫শতাংশ জৈব পদার্থ থাকা জরুরী। কিন্তু গবেষনায় দেখা যাচ্ছে উত্তরাঞ্চল সহ দেশের বেশির ভাগ মাটিতে শূণ্য দশমিক ৮০শতাংশ জৈব পদার্থ পাওয়া যাচ্ছে। যা দেশের কৃষিতে অশনি সংকেত হিসেবে বিবেচনা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
মাটি পরীক্ষা কেন্দ্র রাজশাহী আঞ্চলিক গবেষনাগার সুত্রে জানা যায়, দেশের মোট আবাদি জমির মধ্যে ৩৭লক্ষ হেক্টর জমিতে ফসফরাস, ২৭ দশমিক ২ লক্ষ হেক্টর জমিতে পটাশিয়াম, ৩৩ দশমিক ১ লক্ষ হেক্টর জমিতে গন্ধক, ২৭ দশমিক ৫ লক্ষ হেক্টর জমিতে দস্তা, ২৪ দশমিক ৯লক্ষ হেক্টর জমিতে বোরন, ৩৫দশমিক ৬লক্ষ হেক্টর জমিতে অত্যাধিক থেকে অধিক অম্ল এবং ৩ দশমিক হেক্টর জমিতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের অভাব রয়েছে। আর ৩৬ দশমিক ৪লক্ষ হেক্টর জমিতে জৈব পদার্থের পরিমান রয়েছে মাত্র ১দশমিক ৭ শতাংশের নিচে।
বিজ্ঞানীরা বলছে, অধিক ফলনের জন্য কৃষকরা আবদি জমিতে বারবার রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার করেন। এতে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশকের প্রভাবে জমির জৈব পদার্থ নষ্ট হয়ে উর্বরা শক্তি হারিয়ে ফেলে। যার কারনে ফসলের ফলনও কমে যায়।
বিজ্ঞানীরা আরো বলছেন, কৃষকরা একবছর লাভবান হলে পরের বছর ওই জমিতেই একই ফসল করছেন। যার কারনে থাকছেনা ফসলের শ্রেনী বিন্যাস। তাছাড়া ক্রমবর্তমান জনসংখ্যার বাড়তি খাদ্য চাহিদা মেটাতে গিয়ে একই জমিতে বর্তমানে বছরে ৩ থেকে ৪টি ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। আবাদ করা হচ্ছে উচ্চ ফলনশীল অথবা হাইব্রীড জাতের ফসল। এসব উচ্চ বা হাইব্রীড জাতের ফসল মাটি থেকে শোষন করছে বিপুল পরিমান পুষ্টি উপাদান। ফলে জমি হারচ্ছে তার স্বাভাবিক উৎপাদন ক্ষমতা।
মাটি পরীক্ষা কেন্দ্র রাজশাহীর আঞ্চলিক গবেষণাগারের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, একটি আদর্শ মাটিতে সাধারণ ১০৭ধরনের পদার্থ থাকে। যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ২১টি পদার্থ। ফসল ফলাতে এই ২১টি পদার্থের মধ্যে যদি জৈব পদার্থ না থাকে তাহলে ফসল ফলাতে কৃষকদের বেগ পেতে হবে।
তিনি আরো বলেন, কৃষক তার চাহিদা পুরন করতে গিয়ে একই জমিতে বারবার একই ফসল ফলাচ্ছে। ফলে ফসলের নিবিড়তা থাকছেনা। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে জৈব পদার্থও অনেকাংশে দায়ী।
তবে  মৃত্তিকা গবেষানর ফলাফল মাথায় নিয়ে ইতোমধ্যে প্রান্তিক কৃষকদের সচেতন করতে প্রকল্প হাতে নিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কৃষকদের সচেতন করতে কম্পোষ্ট,কেঁচো কম্পোষ্ট সার ব্যবহারে উৎসাহিত করতে মাঠ দবিস করছে কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরে কর্মকর্তারা। মাঠ দিবসের মাধ্যমে কৃষকদের সতেন করার চেষ্টা করছে তারা।
মাটি পরীক্ষা কেন্দ্র রাজশাহীর আঞ্চলিক গবেষণাগারের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আইয়ুব-উর রহমান সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, আবাদী জমিতে দ্রুত জৈব পদার্থের পরিমান কমে যাওয়া ঠেকাতে শষ্যের শ্রেনী বিন্যাসের পাশাপাশি রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক নির্ভরতা কমিয়ে এনে  মাটি পরীক্ষা করে সুষম সার ব্যবহার করলেই এ সংকট থেকে উত্তরন সম্ভব।

 

স/আর