রাণীনগর সাব-রেজিষ্ট্রী অফিসে একই জমি দুই মৌজার নামে দলিল

রাণীনগর প্রতিনিধি:

নওগাঁর রাণীনগর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে একই জমি দুই মৌজা নাম উল্লেখ্য করে দলিল করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও ওই জমির আন্ডার ভ্যালু কেলেংকারীর ২ মাস অতিবাহিত হলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছে সচেতন মহল।

এছাড়াও বর্তমানে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস দুর্নীতির আতুর ঘরে পরিণত হয়েছে। সাধারণ সেবা গ্রহীতাদের নিকট থেকে সরকারি বিভিন্ন ফিসের কথা বলে ভাওতাবাজী করে টাকা আদায় করলেও তা সরকারি কোষাগারে জমা না হয়ে কয়েকটি ভাগে ভাগ হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। অতিরিক্ত দলিল রেজিস্ট্রেশন ফিস ও সার্টিফাইড কপি ফিস আদায়সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে এই জনগুরুত্বপূর্ন দপ্তরের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বাজার মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে ধরে (আন্ডার ভ্যালু) অতি সম্প্রতি একটি দলিল রেজিস্ট্রেশন করা হয়। অনিয়মের এই কাজটি তড়িঘড়ি করে সম্পাদন করতে গিয়ে জমিটি প্রকৃত মৌজা কোনটি তার পরির্বতন করে ফেলা হয়েছে। রেজিস্ট্রেশনকৃত ওই দলিলের তপশীলে মৌজার নাম আমগ্রাম দেখানো হলেও ভিতরের বর্ণনায় জমিটি কালীগাও মৌজার দেখিয়ে পুরো দলিল সম্পাদন করা হয়েছে। ফলে জমিটি আদৌ কোন মৌজার অন্তর্ভূক্ত হবে তা নিয়ে ধু¤্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।

আরো জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলার কালিগ্রাম ইউনিয়নের আমগ্রাম গ্রামের মৃত-মনির উদ্দিনের ছেলে সেকেন্দার সরদার আমগ্রাম মৌজার মাঠের ৪ শতাংশ ধানী জমি বিক্রয় করেন একই গ্রামের মৃত-রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে দুলু সরদার ও হেলাল সরদারের কাছে। ওই মৌজার সরকার নির্ধারিত প্রতি শতক ধানী জমির দাম ১২ হাজার ৬ শত ১৩ টাকা। সে হিসেবে বিক্রি জমির সরকারি মোট মূল্য (ভ্যালুয়েশন) হওয়ার কথা ৫১ হাজার টাকা। দলিলটি দলিল লেখক সমিতির সভাপতি বাচ্চু মুহুরীর সেরেস্তার মাধ্যমে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে দলিল লেখক সাইদুর রহমান অর্ধেক মূল্য মাত্র ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দলিল প্রস্তুত করে। পরে দাখিলকৃত উক্ত দলিল নি¤œ মূল্য (আন্ডার ভ্যালু) হওয়ার পরেও অজ্ঞাত কারণে সাব-রেজিস্ট্রার রাশিদা ইয়াসমিন মিলি দলিলটি চুড়ান্ত অনুমোদন প্রদান করেন। যার দলিল নং-২১৪৯, তারিখ ১৮/০৬/২০১৯ইং। তবে আন্ডার ভ্যালু দলিল হওয়ার বিষয়টি জানা জানি হলে দলিল রেজিষ্ট্রশনের পর ৬ কার্যদিবসে আবার ঘারতি রাজস্ব আদায় দেখানো হয়। এছাড়া এঘটনার ২ মাস অতিবাহিত হলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ঘটনার পৃষ্ঠপোষককারী হিসেবে সাব-রেজিস্ট্রারের দিকেই সন্দেহের তীর তার দিকেই ঘুরপাক খাচ্ছে।

অন্যদিকে অভিযোগ উঠেছে, বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা থেকে দায়মুক্তি ও পরিত্রাণ পেতে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দুটি শক্তিশালী চক্র মাঠে নেমেছে। একটি গ্রপ বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মোটা অংকের বাজেট মাঠে নেমে বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাপ ও তদবির নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন বলে শোনা যাচ্ছে। অপর গ্রুপ বালাম বই (মূল ভলিয়ম) সংশোধন করে নতুন ভাবে আগের তারিখেই মূল দলিল তৈরি অথবা মূল দলিল সংশোধনের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্র মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে।

জমি গ্রহীতা দুলু বলেন, তিনি ও তার ভাই আমগাও মৌজায় ৪ শতাংশ জমি কিনেছেন। কিন্তু কালীগাও মৌজা কোথায় থেকে এলো তা তিনি জানেন না। কারণ দলিল লেখক কি করে দিয়েছেন পরবর্তিতে তিনি তা আমলে নেননি।

এ ব্যাপারে রাণীনগর সাব-রেজিষ্ট্রী অফিসের সাব-রেজিস্ট্রার রাশিদা ইয়াসমিন মিলি বলেন, এটি হয়তো বা ভুল করে হয়েছে। আর আমগাও মৌজা কালীগাও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অধীনে তাই হয়তো বা দলিলে কালীগাও কথাটা এসেছে। তবে এটি তেমন কোন গুরুত্বর বিষয় নয়। আমি এটি খতিয়ে দেখবো।

এ ব্যাপারে নওগাঁ জেলা রেজিস্ট্রার সৈয়দ মজিবর রহমান বলেন, এক দাগের জমি কখনোও দুই মৌজার নামে দলিল হতে পারে না। এটি হয়তো বা ভুলক্রমে হয়েছে। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।

স/অ