রাণীনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে নানা অনিয়ম

নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁ: 

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস অনিয়ম আর দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গুটি কয়েক প্রভাবশালী শিক্ষকের হাতে জিম্মী হয়ে পড়েছে এই অফিস ও অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এসব প্রভাবশালী শিক্ষকদের ছাড়া কোন কাজই করতে পারে না অন্যান্য সব সাধারণ শিক্ষকরা। সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন গুটি কয়েক শিক্ষকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষক মারফত ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা গেছে, গুটি কয়েক প্রধান শিক্ষক একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। যে সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন যাবত রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস শাসন করে আসছেন। এ অফিসের কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এই সিন্ডিকেটের বাইরে এসে কাজ করতে পারে না। কারণ এই সিন্ডিকেটের বাইরে এলে তারা অর্থ পাবে না। বদলী বাণিজ্য, স্লীপের অর্থ নিয়ে দুর্নীতি, সংস্কার কাজের জন্য বরাদ্দকৃত লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করা বর্তমানে এই অফিসের রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও ভিন্ন মতের শিক্ষকদের নানা কারণে হয়রানী করা, সিনিয়র শিক্ষকদের বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে জুনিয়র শিক্ষকদের পছন্দমতো বদলী করা এই অফিসের রীতি-নীতিতে পরিণত হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়।

প্রতি বছর প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্লীপের মাধ্যমে ছোট-খাটো কাজ করার জন্য ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই প্রভাবশালী সিন্ডিকেট অফিসের কর্মকর্তাকে আয়ত্বে এনে তাদের পছন্দ মতো বিদ্যালয়গুলোতে বরাদ্দ দিয়ে বাকি প্রতিষ্ঠানের অর্থ কর্মকর্তার যোগসাজসে হরিলুট করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতি বছর কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের সংস্কার কাজের জন্য কয়েক লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও এই সিন্ডিকেট, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা কাজ না করেও অর্থ উত্তোলন করেছে বলে জানা গেছে। এদের বিরুদ্ধে কথা বললেই হয়রানীর সঙ্গে সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয় ওই শিক্ষককে। এছাড়াও অফিসে পেনশনের কোন কাজ করতে হলে উপঢৌকন না দিলে কোন ফাইল নড়তে চায় না। দিনের পর দিন হয়রানীর শিকার হতে হয় পেনশনে যাওয়া বৃদ্ধ শিক্ষকদের। এরকম অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে এ অফিসের বিরুদ্ধে। আর বিভিন্ন অনিয়মই এখন এই অফিসে নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, উপজেলার সরদার কয়াপাড়া সরকারি (নতুন সরকারিকরণ) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৌখিন উদ্দিনের মাধ্যমে কয়েকজন শিক্ষকের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি করা হয়েছে। অফিসের যত কাজ অর্থের বিনিময়ে এই সিন্ডিকের মাধ্যমে করতে হয় তাদেরকে। তা না হলে এরা তাদেরকে অহেতুক হয়রানী করে। কারণ অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এই সিন্ডিকেট যা বলে তাই করে। এদের প্রভাবের বাহিরে যেতে পারে না অফিসের কর্মকর্তারা। অফিসে কোন কাজ না থাকলেও স্কুল ফাঁকি দিয়ে সিন্ডিকেটের শিক্ষকরা প্রতিদিন উপজেলায় এসে সময় কাটিয়ে যায়। আর হাড়ভাঙ্গা খাটুনি করতে হয় ওই শিক্ষকদের। তাদের মতের বাহিরে গেলেই হয়রানীর শিকার হতে হয়। সৌখিন একজন সাধারণ শিক্ষক হয়েও বর্তমানে তিনি লাখ লাখ টাকার মালিক বুনে গেছেন। আমরা সাধারণ অবহেলিত শিক্ষকরা এই সিন্ডিকেট ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হাত থেকে মুক্তি চাই।

এ অভিযোগে প্রধান শিক্ষক সৌখিন উদ্দিন বলেন, আগে অফিসে বিভিন্ন কাজ নিয়ে যেতাম। কিন্তু এখন আর যাই না। তবে আমার বিরুদ্ধে যারা এই অভিযোগগুলো করেছে তা নিতান্তই মিথ্যা ও বানোয়াট। আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এই কথাগুলো বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: আতোয়ার রহমান বলেন, আমি এই অফিসে যোগদানের পর থেকে অফিসকে একটি স্বাভাবিক পর্যায়ে আনার জন্য প্রাণপন চেষ্টা করে যাচ্ছি। যারা সিন্ডিকেটের মধ্যে ছিলো আমি তাদেরকে অফিসে বিনা প্রয়োজনে আসতে নিষেধ করেছি। তারপরও যারা বেশি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না, তারা এসব মিথ্যা অভিযোগ ছড়াচ্ছেন বলে দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, আমার অফিসকে সকল প্রকারের দুর্নীতি থেকে মুক্ত করার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

স/শা