রাণীনগরে বাড়ছে সোনালী মুরগি পালন, বছরে ২শ’ মেট্রিকটন মাংস উৎপাদনের সম্ভবনা

সুকুমল কুমার প্রামানিক:

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় দিন দিন বাড়ছে সোনালী মুরগির খামার। রোগ-বালাই ও মৃত্যুর ঝুঁকি কম থাকায় এবং লাভ বেশি হওয়ায় সোনালী মুরগি পালন বেড়েই চলেছে। তবে খামার স্থাপনে সঠিক নিয়ম জানা না থাকা এবং প্রশিক্ষনের অভাবে অনেকেই লোকসান গুনে সরে যাচ্ছেন মুরগি পালন থেকে।

সোনালী মুরগি পালন বৃদ্ধি পাওয়ায় পুরো উপজেলা মিলে বছরে প্রায় ২শ মেট্রিকটন মাংস উৎপাদন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর।

জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলায় ছোট-বড় প্রায় মুরগির ৮০টি খামার রয়েছে। এসব খামারে প্রথম দিকে ব্রয়লার মুরগি পালন করলেও বাচ্চার দাম ও খাদ্যের দাম বেশি এবং রোগ-বালাইয়ে মুরগির মৃত্যুহার বেশি হওয়ার কারনে ইতি মধ্যে বেশ কিছু খামারীরা লোকসানের কারনে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। এছাড়া অধিকাংশ ব্রয়লার পালনকারীরা ব্রয়লার ছেরে সোনালী মুরগি পালনে ঝুঁকে পরেছেন। সোনালী মুরগি পালনে মৃত্যু ঝুঁকি কম হওয়ায় এবং লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে সোনালী মুরগি পালন। উপজেলার সব চেয়ে বড় মুরগি খামারী সিম্বা গ্রামের মৃত আব্বাস আলী আকন্দের ছেলে আবু সাইদ টিংকু ও তার ভাই সানোয়ার হোসেন রিংকু গত প্রায় ১১ বছর আগে ব্রয়লার মুরগি পালন শুরু করেন। বছর খানিক পর ব্রয়লারে লোকসান হওয়ায় স্বল্প পরিসরে সোনালী মুরগি পালন শুরু করেন তারা। মৃত্যু ঝুঁকি কম থাকায় ও বাজার দর ভাল পাওয়ায় ধীরে ধীরে ব্যবসার পরিধি বাড়াতে থাকেন। বর্তমানে তারা দুই ভাই আলাদা ভাবে মুরগি পালন করছেন।

তাদের দেখা-দেখি বেকারত্ব ঘোচাতে একই গ্রামের সোয়েব ইবনে প্রিন্স প্রায় ৩ বছর আগে সোনালী মুরগি পালন শুরু করেন। বর্তমানে এই তিন জনের ৫ টি খামারে প্রায় ৩৩ হাজার সোনালী মুরগি রয়েছে।

খামারী আবু সাইদ টিংকু জানান, দীর্ঘদিন যাবত এই ব্যবসার সাথে জড়িত থেকে লাভ লোকসান দুইটারই দেখা পেয়েছি। ব্যবসা শুরুর দিকে প্রশিক্ষণ ও বাস্তব অভিজ্ঞতা দিয়ে বর্তমানে ব্যবসার পরিধি বাড়িয়েছি। তিনি জানান, অপরিকল্পিত ভাবে ফার্ম নির্মাণ, মান সম্মত বাসস্থানের পরিবেশ তৈরি করতে না পারা, বায়ু সিকিউরিটি না মানা, গুনগত মানসম্পূর্ণ খাদ্য বাচাই করতে না পারা, স্বল্প পুঁজি ও অদক্ষ শ্রমিক এর কারণে মুরগি পালনে বেশিভাগ খামারী অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও পুঁজি হারিয়ে পোল্ট্রি ব্যবসা থেকে সড়ে যাচ্ছে। অথচ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, মানসম্মত খাদ্য, সঠিক সময়ে খাবার, ফার্মের উপযুক্ত আদ্রর্তা বজায়, সার্বক্ষিক নজরদারী ও প্রশিক্ষিত শ্রমিক থাকলে লোকসানতো দুরের কথা একই খরচে আরো অনেক অংশে মাংস উৎপাদন করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বি হওয়া সম্ভব।

খামারী সানোয়ার হোসেন ও সোয়েব ইবনে প্রিন্স জানান, সরকার পর্যায় থেকে বাচ্চার দর কমে মূল্য নির্ধারণ, খাদ্যের দাম স্বাভাবিক, খাদ্যের গুনগত মান ঠিক রাখতে বাজার মনিটরিং এর ব্যবস্থা এবং পাইকারি বাজার দরের উন্নতি হলে ব্যবসার পরিধি আরো বাড়বে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) ভেটেরিনারি সার্জন ডা: মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় হাঁস, মুরগি ও কবুতর থেকে মাংস উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তার চেয়ে বেশি মাংস উৎপাদন করছেন সোনালী মুরগি থেকে। বছরে প্রায় ২শ’ মেট্রিকটন মাংস উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

তিনি আশা করছেন, আগামীতে সোনালী মুরগি পালন আরো বাড়বে।

স/অ