রাজশাহীতে সার সংকটে আলু চাষিরা, বাড়তি দামেও মিলছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আলু মৌসুমে রাজশাহীতে পটাশ সারের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ৭৫০ টাকা মূল্যের এক বস্তা পটাশ সার কৃষকদের কিনতে হচ্ছে ১১-১২শ টাকা দরে। তার পরেও চহিদা মতো সার পাচ্ছেন না কৃষকরা। লাইনে দাঁড়িয়ে সার কিনতে হচ্ছে হচ্ছে তাঁদের। ফলে এবার আলু চাষ ব্যাহত হওয়ার সঙ্কা দেখা দিয়েছে কৃষকদের মাছে। আবার সার পেলেও অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হওয়ার কারণে আলু চাষ করে কৃষকরা কতটুকু লাভবান হবেন সে নিয়েও তাঁদের কপালে এখনোই চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
তবে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, সারের কোনো সঙ্কট নাই। অতিরিক্ত সার প্রয়োগরোধে কৃষকদের সচেতন করা হচ্ছে। চাহিদামতো সার প্রাপ্তিতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে চলতি বছর আলু চাষ কমলেও প্রায় দ্বিগুন বাড়বে সরিষা চাষ। ভোজ্য তেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে চলতি বছর সরিষা চাষে কৃষি বিভাগ বেশি নজরদারি করছে বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র মতে, এ বছর রাজশাহীতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে। যা গত বছর ছিল ৩৮ হাজার ৫৪৩ হেক্টর জমিতে। ফলে গত বছরের তুলনায় এবার এক হাজার ৩৬৩ হেক্টর জমিতে আলু চাষ কম হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। যদিও গত এক সপ্তাহ আগ থেকে আলু চাষ শুরু হয়েছে মাত্র। এরই মধ্যে রাজশাহীতে ১৮৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। চলতি নভেম্বর মাস জুড়েই আলু চাষের মহোসব চলবে। সেই হিসেবে হাতে যে কয়দিন সময় আছে, এরই মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়ে যাবে বলেও আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
রাজশাহীর তানোর উপজেলা সারা দেশের মধ্যে আলু চাষে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। আমশো গ্রামের তূষার আহমেদ বলেন, ‘এ বছর আমি ৫ বিঘা জমিতে আলু চাষ করবো। এরই মধ্যে জমি প্রায় ঠিকঠাক করেছি। কিন্তু পটাশ সার ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। আলু চাষের জন্য পটাশই বেশি লাগে। কৃষি অফিসে না দিয়ে লাইন ধরে দুই বস্তা পটাশ পাইছি ৭৫০ টাকা করে। আর ৫ বস্তা সার কিনেছি ১২শ টাকা দরে অন্য জায়গা থেকে।’

মন্ডুমালা গ্রামের আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ডিলারের কাছ থেকে লাইন ধরে সার নিতে হচ্ছে। তার পরেও চাহিদামতো সার পাচ্ছি না। বাইরে এক বস্তা সার কিনতে হচ্ছে বস্তায় অন্তত ৫০০ টাকা বেশি দিয়ে।’
গোল্লাপাড়া গ্রামের নাজমুল হোসেন বলেন, ‘২০ বিঘা জমিতে এবার আলু চাষ করবো। দুই-তিন দিনের মধ্যে জমিতে বীজ লাগানো (বপন) শুরু করবো। কিন্তু সার চাহিদা মতো পাচ্ছি না। ২০ বস্তা পটাশ কিনেছি অন্য ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে ১১৫০ টাকা দরে। আমার আরও অন্তত ৩০ বস্তা সার লাগবে। কিন্তু এই দামে সার কিনে আলু চাষ করে লাভ তো দূরের কথা, লোকসান হবে কিনা সে নিয়েই চিন্তাই আছি।’
জানতে চাইলে তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহমেদ বলেন, ‘সারের কিছুটা সঙ্কট আছে। তবে এটি থাকবে না। আমরা চেষ্টা করছি আলু চাষিদের মাঝে সঠিকভাবে সার পৌঁছানোর জন্য।’
পবার আলু চাষি আকবর হোসেন বলেন, সার ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলেও দাম বেশি। এবার এমনিতেই সবকিছুর খরচ বেশি হবে। তার ওপর সারের দাম বাড়তি হলে আমরা আরও ক্ষতিগ্রস্থ হব।’
এদিকে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা উম্মে সালমা বলেন, ‘সারের কোনো সঙ্কট নাই। পর্যাপ্তÍ সার আছে। তার পরেও আমরা কৃষকদের অতিরিক্ত সার প্রয়োগ রোধে নিরুৎসাহিত করছি। অতিরিক্ত সার প্রয়োগ করে জমির ক্ষতি এবং অর্থ ব্যয় ছাড়া ফলন বেশি হয় না। ফলে যতটুকু আলু জমিতে সার প্রয়োজন আমরা ততটুকুই ডিলারদের মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করতে চেষ্টা চালাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, এবছর ভোজ্য তেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে আমরা সরিষা চাষে মনোযোগ দিয়েছি। ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর সরিষা চাষের লক্ষ্যামাত্রা রাজশাহীতে প্রােয় দ্বিগুন বেড়েছে। এরই মধ্যে সরিষা চাষ শুরু হয়েছে। আলু ও সরিষা দুটি ফসলই এক সাথে চাষ হয়। ফলে এবার আলুর চেয়ে সরিষা চাষ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
তিনি আরও জানান, গত বছর রাজশাহীতে সরিষা চাষ হয়েছিল ২৬ হাজার ৫৬ হেক্টর জমিতে। এ বছর সেখানে লক্ষ্যমাত্রা বেড়ে হয়েছে ৪০ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে। এ বছরই উৎপাদনও প্রায় দ্বিগুন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরিষা চাষে আলুর চেয়ে তিন-চার গুন পরিমাণ সার কম ব্যবহৃত হয়। আবার কোনো কোনো উর্বর জমিতে সরিষা চাষের জন্য সার প্রয়োজনই হয় না।