রাজশাহীতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের কাছে টাকা চাইলেন যাচাই-বাছাই কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী:
নতুন করে নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য রাজশাহীর মোহনপুরে একাত্তরের এক শহিদের সন্তানের কাছে টাকা দাবি করেছেন যাচাই-বাছাই কমিটির নেতারা। টাকা না দিলে তার বাবার নাম শহিদের তালিকায় উঠবে না বলে ছাফ জানিয়ে দিয়েছেন তারা। সেই শহিদের সন্তান শনিবার রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে এ অভিযোগ করেছেন। এছাড়া অভিযোগের কপি প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

 
অভিযোগে শহিদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মিজারুল শেখ উল্লেখ করেছেন, তার বাবা মোহনপুরের বগপাড়া গ্রামের বশির উদ্দিন ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর শহিদ হন। তাদের গ্রামে যে শহিদ মিনার আছে সেখানে তার বাবার নামও লিপিবদ্ধ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। এমনকি সরকারের আগের সব তালিকায় শহিদ হিসেবে বশির উদ্দিনের নাম রয়েছে।
কিন্তু সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির নেতা জেলা কমান্ডার ফরহাদ ও থানা কমান্ডার সিদ্দিকুর রহমান মেজারুলের কাছে তার বাবার ভারতে ট্রেনিং করার সার্টিফিকেট চান। মেজারুল তখন জানান যে, তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এবং শহিদ হয়েছেন এটা সবাই জানেন। কিন্তু তার ট্রেনিংয়ের সনদ নেই। তখন তারা দুই জন মেজারুলের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। মেজারুলের মতো আরো অনেকের কাছেই তারা টাকা দাবি করেছেন এবং অনেকে তাদেরকে টাকা দিয়েছে বলেও মেজারুল তার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন।

 
এ ব্যাপারে ফরহাদ আলী জানান, একাত্তরে যারা গণশহিদ তাদের বঙ্গবন্ধু দুই হাজার করে টাকা দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে আর কোনো সরকারই তাদের ব্যাপারে কিছু করে নি। তবে যারা ভারতে গিয়ে ট্রেনিং নিয়েছেন এবং যুদ্ধকালে শহিদ হয়েছেন তারা মুক্তিযোদ্ধা এবং শহিদ। তাদের পরিবার কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পাবে। তবে তিনি যে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন সেটা ট্রেনিংয়ের সনদ অথবা দুইজন সহযোদ্ধার সাক্ষ্য থাকতে হবে।

 
তিনি আরো বলেন, যাচাই-বাছাই কমিটি টাকা নিচ্ছে এমন অভিযোগ মেজারুল ছাড়াও আরো অনেকে করছেন। কিন্তু কখন কারা কত টাকা নিয়েছেন এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই অভিযুক্তদের কাছে। ফলে এ বিষয়ে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি কারো কাছে টাকা দাবি কখনো করিনি, করতে পারি না। এসব মিথ্যা কথা’।

 
উল্লেখ্য, শহিদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মেজারুল শেখ ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে রাজাকারদের বিরুদ্ধে মোহনপুর থানায় দেশের মধ্যে প্রথম মামলা দায়ের করে আলোচনায় আসেন। সেসময় রাজাকারদের হুমকি-ধামকিতে তিনি দেশছাড়া হয়েছিলেন। ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই শুরু হওয়ায় তিনি আবার দেশে ফিরেছেন।
স/শ