সড়ক দূর্ঘটনায় যাবজ্জীবন!!

প্রথম আলো’য় প্রকাশিত সর্বশেষ খবরে দেখলাম সড়ক দূর্ঘটনায় ১২৪জনের নির্মম মৃত্যু। এটা আমাদের দেশের একটা স্বাভাবিক ব্যপার। নিত্যদিনে আমাদের চা-সিগারেট খাওয়ার মতই একটা ঘটনা। দুই বিখ্যাত চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর নিহতের ঘটনায় আসামী বাসচালক জামির হোসেন উপযুক্ত শাস্তিই পেয়েছেন।

এর কারণ বলতে গেলে আমি বলব চালক জামির হোসেনের বাস পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ইচ্ছাকৃতভাবেই তাদের মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দেয়। যার ফলে মিশুক মুনীর ও তারেক মাসুদসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় ৩৯জন সাক্ষীর মধ্যে ২৪জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। আমার প্রশ্ন, যাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় তারা কি দূর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন? তারা সাক্ষ্য দিয়েছেন তার মানে তারা জানতেন এখানে এখন দূর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। আর গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে যে স্থানে দূর্ঘটনা ঘটেছে সে স্থানটি জনমানবহীন নির্জন জায়গা। তাহলে এই সাক্ষীগুলো কারা? কোথা থেকে এলো তারা?

একটা অভিজ্ঞতার কথা বলি। ছয় বছর আগের কথা। ‘ভিআইপি ২৭’ নম্বর বাসে একদিন খুব সকালে গাজীপুর থেকে ঢাকার নিউ মার্কেট যাচ্ছিলাম। আমাদের বাসচালকটি উত্তরা থানার জসিমউদ্দীন মোড়ে একজন ভদ্রমহিলাকে (বয়স প্রায় ৪০বা এর কাছাকাছি) চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। চালককে জসিমউদ্দীন মোড়ের পুলিশের মদদে ঢাকা বিমানবন্দর রাস্তার মোড়ে টহলরত পুলিশ গ্রেফতার করে। বাসের হেলপার আমাদের চোখের সামনে থেকেই পালিয়ে যায়। আমি তো খবরের কাগজ সম্পূর্ণ না পড়েলেও অন্তত শিরোনামগুলোর উপর দিয়ে চোখ বুলিয়ে যাই। কই, সেই বাসচালকের বিচারের খবর তো দেখলাম না।

দূর্ঘটনার দিন চালক জামির হোসেন চুয়াডাঙ্গা থেকে  ভোর চারটায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। ঢাকায় পৌঁছে কোন বিরতি না দিয়েই সকাল সাড়ে দশটায় আবার চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে  ছেড়ে যান (প্রথম আলো, ২৪.০২.১৭)।

আরে ভাই চালকও তো মানুষ, নাকি? আপনি দুইঘন্টা ভ্রমণ করেই বলেন জার্নি করে এসেছি। মাথা ব্যথা করছে। আর চালক সেই কাকডাকা ভোরে বেরিয়েছে। তাকে কি ক্লান্তি আচ্ছন্ন করে না?

পাঁচজন মৃত্যুর ঘটনায় জামির হোসেনের যাবজ্জীবন! তাহলে যারা ১২৪জনের মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের বিচার আশা করি খুব শীঘ্রই  দেখতে পাবো।

আমাদের দেশের শাসনব্যবস্থা দেখে খুব অবাক হই। জামির হোসেন ইচ্ছাকৃতভাবে দূর্ঘটনা ঘটানোর দায়ে তার এই শাস্তি। আর আমাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল স্যারকে দিনে দুপুরে রাস্তায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী হাফিজ এই হত্যায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার হন। জেলখানায় তিনি রক্তশূন্যতায় মারা যান। হায় কপাল! জেলে গিয়েই তার রক্তশূন্যতা দেখা দেয়ার ছিল? আবাসিক হলে আমাদের বিভাগেরই বড়ভাই মোতালেব হোসেন খুন হন। চারমাস পেরিয়ে গেলেও তার সুরতহালের প্রতিবেদন মেলেনি। এরপর সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকা-সহ ব্লগার হত্যার ঘটনা ঘটলো। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে এগুলো অনিচ্ছাকৃতভাবে করা খুন। মামলার অগ্রগতি দেখে কারোরই ঠাওর করতে খুব অসুবিধা হবার কথা নয়। তা না হলে কি সড়ক দূর্ঘটনায় এত বড় সাজা! আর যাদেরকে প্রকাশ্য দিবালোকে অনিচ্ছাকৃতভাবে খুন করা হচ্ছে তাদের হত্যাকারীদের ব্যপারে আর কি বলব, তাদের তো কোন দোষ নাই। তারা যে অনিচ্ছাকৃত খুনী।

রেদওয়ানুল হক বিজয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়