সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
• টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর মধ্যেই আইপিএলেই সবচেয়ে বেশি বিনোদন
• আইপিএলে প্রায় কোনো ম্যাচেই গ্যালারি ফাঁকা থাকে না
• ম্যাচপ্রতি গড়ে ২৬ হাজার দর্শক উপস্থিতি
আইপিএল নিয়ে যেমন বিতর্কের শেষ নেই তেমনি জনপ্রিয়তাও দিন দিন আকাশচুম্বী। ২০০৮ সালে যাত্রা শুরুর পর এবার মাঠে গড়াচ্ছে ১১তম সংস্করণ। বিতর্ক থাকলেও ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগগুলোর মধ্যেই আইপিএলই সেরা। সংবাদ সংস্থা এএফপির বিশ্লেষণে আসুন জেনে নেই তার পাঁচটি কারণ:
বৈশ্বিক আবেদন
ভারতের ঘরোয়া টুর্নামেন্ট হলেও বিশ্বের নামজাদা ক্রিকেটারদের চারণভূমি আইপিএল। এবার স্টিভ স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নার না থাকলেও আইপিএল এতটুকু দ্যুতি হারাচ্ছে না। আছেন বেন স্টোকস, ক্রিস গেইল, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, কাইরন পোলার্ড, কাগিসো রাবাদাদের মতো একঝাঁক তারকা ক্রিকেটার। রাজস্থান রয়্যালসে সাত সপ্তাহ সময় দেওয়ার জন্য এবার বিদেশি হিসেবে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক (প্রায় ২০ লাখ ডলার) পাচ্ছেন স্টোকস।
আইপিএল কতটা বৈশ্বিক আসর, তার প্রমাণ হতে পারেন সন্দ্বীপ লামিচানে। নেপালের মতো খুদে ক্রিকেটশক্তির দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন তিনি। এ ছাড়া পাকিস্তান বাদে আইসিসির বাকি সব পূর্ণ সদস্য দেশের ক্রিকেটাররা খেলবেন আইপিএলে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জন্য আইপিএলে ব্রাত্য পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা।
অর্থের ঝনঝনানি
কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচের জন্য খ্যাতি রয়েছে আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলোর। এবারের নিলামেও কিন্তু তার ব্যত্যয় ঘটেনি। গত ফেব্রুয়ারির নিলামে আটটি ফ্র্যাঞ্চাইজি দল মিলে খেলোয়াড় কিনতে প্রায় ৭ কোটি ডলার খরচ করেছে। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট গত সেপ্টেম্বরে রুপার্ট মারডকের স্টার ইন্ডিয়া গ্রুপের সঙ্গে ২.৫৫ বিলিয়ন ডলারের সম্প্রচার স্বত্ব চুক্তি করে।
আইপিএলে মোট ৬০টি ম্যাচের প্রতিটির দাম প্রায় ৮৫ লাখ ডলার করে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ থেকে টুর্নামেন্টটি কিন্তু খুব বেশি পিছিয়ে নেই। ইংল্যান্ডের শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবল টুর্নামেন্টে প্রতি ম্যাচের দাম প্রায় ৯৬ লাখ ডলার।
গ্যালারিতে তিল ঠাঁই নেই!
ভারতীয়রা এমনিতেই ক্রিকেট–পাগল। আইপিএলটা তাঁদের কাছে উৎসবের মতো। আর তাই কোনো ম্যাচেই গ্যালারি ফাঁকা দেখা যায় না। টিভি দর্শকও প্রচুর। এ কারণেই আইপিএলকে অনেকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ক্রীড়াযজ্ঞ মনে করেন।
আইপিএলে গ্যালারিভর্তি দর্শক হওয়ার আরও একটি কারণ হলো দলগুলোর মধ্যে দ্বৈরথের আবির্ভাব। স্প্যানিশ ফুটবলে যেমন রিয়াল-বার্সা, ইংলিশ ফুটবলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-লিভারপুল, আইপিএলেও তেমনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলছে কলকাতা নাইট রাইডার্স-রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। আইপিএলে ম্যাচপ্রতি গড় দর্শকসংখ্যা ২৬ হাজার। তবে টুর্নামেন্ট গড়িয়ে চলার সঙ্গে দর্শকসংখ্যাও বাড়তে থাকে।
বিনোদন
ক্রিস গেইলের ব্যাটিং মানেই খুনে বিনোদন। বিরাট কোহলির ব্যাটিংয়েও রয়েছে ‘সার্জিক্যাল নাইফ’ দিয়ে প্রতিপক্ষকে চিরে ফেলতে দেখার মজা। আইপিএলে দর্শকদের চার-ছক্কার বিনোদন খোরাক জোগাতে এ দুই তারকার জুড়ি মেলা ভার। এ টুর্নামেন্টে ১০০ ইনিংসে গেইলের ছক্কাসংখ্যা ২৬৫! কোহলি বেঙ্গালুরুর হয়ে ১০ মৌসুমে মেরেছেন ১৬০ ছক্কা।
গেইল-কোহলি ছাড়াও কিন্তু দর্শকদের বিনোদন দিতে সক্ষম, এমন খেলোয়াড়ের অভাব নেই আইপিএলে। বাউন্ডারি সীমানার বাইরেও রয়েছে বিনোদন। ‘চিয়ারগার্লস’! চড়া সুরে পার্টির আমেজে বেজে চলা গানের সঙ্গে চিয়ারগার্লদের ছান্দিক নাচ অনেকেরই বিনোদনের খোরাক।
দুর্নীতি দমন
২০০৮ সালে আইপিএল যাত্রা শুরুর পর বিতর্কের শেষ ছিল না। নানা রকম অনিয়ম আর দুর্নীতিতে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। ২০১৩ স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারি তার মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিত। তাতে দর্শকদের চাহিদায় ভাটা পড়েনি। দুর্নীতি বন্ধ করতে ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলোর মালিকানা পাল্টানো হয়েছে। সাময়িক নিষিদ্ধও হয়েছে দু-একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি। চেন্নাই সুপার কিংস ও রাজস্থান রয়্যালস যেমন দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এবার ফিরে এসেছে আইপিএলে। এবার অনিয়ম রুখতে দুর্নীতি দমন বিভাগের প্রধান হিসেবে অজিত সিং নামের সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়েছে বিসিসিআই।
প্রথম আলো