মৌসুমি কশাইয়রা ভরসা নগরবাসির: কদর বাড়ায় বিড়ম্বনা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বন্ধু আরাফাত হোসেন রুবেল। রবিবার রাত নয়টার দিকে ফোন করলেন। ফোন করেই তিনি বললেন, ভাই কশাইরা যে ফোন ধরছে না। একজনকে ৫০০ টাকা অগ্রিম দিয়ে রেখেছিলাম। ঈদের দিন বাসায় এসে মাংস বানিয়ে দিবে। এখন সেও ফোন ধরছে না। আর আমারও টেনশন বাড়ছে।’

 

টেনশন বাড়ারই কথা, ‘যে মানুষ কখনো ছুরি-চাকু বা চাপাতিতে হাতই দেননি, তারা কী করে ঈদের খুশির দিনে ভয়ানক সেই অস্ত্রগুলো হাতে নিয়ে কোরবানির পশু জবাই করার পরে আবার মাংস বানাতে শুরু করবেন? তাই টেনশনে পড়েছেন বন্ধু আরাফাত হোসেন রুবেল।

173327eid_cow_kalerkantho_pic

শুধু তিনি নয়, তার মতো এমন টেনশনে বা বিড়ম্বনায় রয়েছেন রাজশাহী নগরীসহ জেলার হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। যারা পবিত্র ঈদ-উল-আজহার দিনে নামাজ আদায় শেষে পশু কোরবানি দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।

 

পশু কোরবানির পর তার মাংস ঠিকঠাক মত করে তৈরী করে সেগুলো বাড়ি অবধি নিয়ে যাওয়া এবং তার আগে গরিব ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বিতরণের যা পালা রয়েছে-তা সম্পন্ন করা একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে তেমন সহজ কাজ নয়।

 

যারা পশুর মাংস কদাচিৎ তৈরী করেন তাদের ক্ষেত্রেও এটি একটি জটিল কাজ। সে ক্ষেত্রে যারা কখনো মাংস তৈরীর কাজই করেননি তাদের জেন্য মহা জটিল কাজ। আর রাজশাহী নগরীতে এমন লোকের সংখ্যায় হাজারে হাজারে।

45

এসব মানুষদের একমাত্র ভরসা একজন দক্ষ কশাই অথবা মৌসুমি কশাই। যারা কিছু অর্থ এবং কিছু মাংসের বিনিময়ে কোরবানির পশু জবাইয়ের পর মাংস তৈরীর কাজ করে থাকেন।

 

কিন্তু এসব কশাইদের এখন কদর বেড়েছে আকাশচুম্বি। যারা দক্ষ কশাই তাদের তো পাত্তা পাওয়ায় দায়। দক্ষ কশাইদের এখন যেন পোয়া বারো। অনেকে টাকা নিয়ে তাদের পেছন পেছন ঘুরছেন। কিন্তু দক্ষ কশাইদের এখন এতো চাহিদা যে, তাদের নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকেই ফোন বন্ধ করে রেখেছেন।

 

তবে আশার কথা হলো কোরবানি উপলক্ষে ঈদের দিন ভোরেই গ্রাম থেকে রাজশাহী শহরে শত শত মৌসুমি কশাইয়ের আগমন ঘটে। কিছু বাড়তি অর্থ আয়ের আশায় ঈদের খুশি বিসর্জন দিয়ে গ্রামের কিছু দিনমজুর কশাইয়ের কাজ করতে আসেন শহরে।

images54

এসব মৌসুমি কশাইরা দক্ষ কশাইদের মত অতোটা ভাল মাংস বানাতে না পারলেও অনেকটাই উপকৃত হন শহরের মানুষরা।

 

তবে তারপরেও শত শত মানুষ এখনো বিড়ম্বনায় আছেন যদি ঈদের দিন কশাই ঠিকমতো না মেলে-তাহলে মাংস নিয়ে কি উপায় হবে তাদের?

 

নগরীর উপশহর এলাকার বাসীন্দা ইয়াদ আলী বলেন, ‘আমার বাড়িতে লোক সংখ্যা ৭ জন। কিন্তু ঈদের দিন আমি ছাড়া কেউ পশুর কাছে ভিড়বে না। তাহলে কোরবানির পরে আমি একা একটি গরু কিভাবে কেটে-কুটে মাংস তৈরী করবো। তাই আমার প্রয়োজন একজন দক্ষ কশাইয়ের যিনি একাই আমার কোরবানির পশুটির মাংস তৈরী করে দিবেন। আর আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচবো।’

qurbani-meat-distrbution

‘কোরবানি ঈদের সময় কশাইদের কদর বাড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু এবার অন্যান্য বারের চেয়ে আরো বেশি কদর বেড়েছে। কারণ মানুষ বাড়ছে। কোরবানির পশুও জবাই হচ্ছে বেশি। সেই হারে তো আর কশাই তৈরী হয়নি। তাই এবার কদরটা একটু বেশিই বলে মনে-সিল্কসিটি নিউজকে বলছিলেন আরকে ব্যক্তি আকবর আলী।

 

নগরীর সাহেব বাজার এলাকার বাসীন্দা আবুল হোসেন বলেন, ঈদের খুশির দিনে মানুষ কাজ করে দেয়, এটাই বড় কথা। দুই টাকা বেশি নিলেও কিছু মানুষ যে মাৈংস তৈরীর কাজ করে দেয় তাতেই আমাদের অনেক বড় উপকার হয়।’

index

রাজশাহীর দুর্গাপুরের আমগাছী গ্রামের কশাই আবেদ আলী বলেন, ‘কোরবানির ঈদের দিন সবাই একজন দক্ষ কশাই খুঁজেন। কিন্তু অতো কশাই পাবে কয়জন। তাই আমাদের দুইটাকা আয় বেশি হয়। এই দিন আমরা কাজটা করে দেয়, যাতে করে সাধারণ মানুষও উপকৃত হয়, আমাদেরও কিছু টাকা পকেটে ঢুকে।’

 

রাজশাহী নগরীর ছোট বনগ্রাম এলাকার হযরত সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, ‘অন্য সময় রিকশা চালায়। কিন্তু প্রতি কোরবানির ঈদের দিন মাংস তৈরী করে দেই। বাড়ি চাপাতি, ছুরি এবং কাঠের গুড়া সবাই আগে থেকেই কেনা আছে। সেগুলো ঈদের আগে আগে শুধু একটু করে ধার করে নিই। আর তাতেই ঈদের দিন কশাই হয়ে যায়। মানুষও তাদের প্রয়োজনে আমার খোঁজ করে। দিন শেষে কিছু না হলেও হাজার দুয়েক টাকা পকেটে আসে।’

 

আরেক মৌসুমি কমাই আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বছরের একটা দিন কাজ করে কিছু টাকা আয় করি। যারা কোরবানি করেন, তারা অধিকাংশই দনি বা মধ্যবিত্ত। তাদের ক্ষেত্রে আমাদের পেছনে এক-দুই হাজার টাকা ব্যয় করা তেমন ব্যপার না। আর ওই টাকায় আমাদের কাছে অনেক বড় টাকা মনে হয়। তাই বছরের দিনও কাজে নেমে পড়ি। কিছু মাংসও পাওয়া যায়। যাতে করে বউ-ছেলে নিয়ে খাওয়া যায়। কারো কাছে হাত পাততেও হয় না।’

kawran-bazar-3

এদিকে ঈদ উপলক্ষে রাজশাহী নগরীতে বেড়েছে মাংস তৈরীর জন্য চাকু, ছুরি ও চাপাতির বেচা-কেনা। সেই সঙ্গে মাংস কাটার জন্য গাছের গুড়ি ও খেজুর পাতার পাটির চাহিদাও বেড়েছে ব্যাপক হারে।

 

নগরীর অলি-গলি থেকে শুরু করে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে এগুলো বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। আবার ছাগলের জন্য বিক্রি হচ্ছে কাঠাল পাতা। আজ সোমবার রাত পর্যন্ত এগুলো বিক্রি হবে ব্যাপক হারে-সিল্কসিটি নিউজকে এমনটাই জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

 

স/আর