মুস্তাফিজের কাটারে কাটবে নিউজিল্যান্ডও?

এখানে আসার আগে লিংকন আর মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের অনুশীলন শিবিরে বহু ব্যবহারে জীর্ণ উইকেটই বেছে নিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। যাতে প্রস্তুতির জন্য উইকেটটা বাংলাদেশের কাছাকাছি পর্যায়ের ধীরগতির হয়। যদিও সফরে আসার কয়েক দিনের মধ্যে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের নেটে বোলিং করেই নিজেদের আঙিনার সঙ্গে পার্থক্যটা আরো ভালো করে বুঝেছেন ফাস্ট বোলার বেন সিয়ার্স। সেন্টার উইকেটেও বোলিংয়ের অভিজ্ঞতা জোরে বল করলে মার খাওয়ার ধারণা নিশ্চয়ই আরো গভীর করেছে এই তরুণের।

মিরপুরের উইকেটে একজন পেসারের পক্ষে পাল্টা আক্রমণে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের বিচলিত করার মহৌষধ অবশ্য অস্ট্রেলিয়া সিরিজে আরো বেশি বাজারজাত করে রেখেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। এই বাঁহাতি পেসারের হাত থেকে বের হওয়া একের পর এক আস্তে বলের কারিকুরি অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের এমন ধন্দে ফেলেছিল যে তিনি স্লো মিডিয়াম পেসার না কুইক স্পিনার, পাঁচ ম্যাচের সিরিজজুড়েই তা ছিল অমীমাংসিত এক রহস্য। এই সফরে ভালো কিছুর আশায় তাই কিউইরা সেই রহস্যের কূল-কিনারা করতে চাইবে স্বাভাবিক।

সেটি তারা করছেও। কিন্তু দলীয় আলোচনায় মুস্তাফিজকে নিয়ে ছক কষলেই তো আর সব হয়ে যায় না। পাল্টা আক্রমণের পরিকল্পনা মাঠেও ঠিকঠাকমতো প্রয়োগ করা চাই। দিন দুয়েক আগে নিউজিল্যান্ড দলের কোচ গ্লেন পকনেল তাই জোর দিচ্ছিলেন পরিকল্পনার বাস্তবায়নেই, ‘(অস্ট্রেলিয়া সিরিজে) অসাধারণ বোলিং করেছে সে। যেভাবে ও ডেলিভারিগুলো (স্লোয়ার) দিয়েছে, দেখার পক্ষে দারুণ। বাংলাদেশের অন্য বোলারদের মতো সে-ও আমাদের জন্য হুমকি। ওকে নিয়ে কাজ করেছি আমরা। কিভাবে ওকে টার্গেট করা যায়, আলোচনা হয়েছে তা নিয়েও। কিন্তু আসল ব্যাপার হলো মাঠে আমরা পরিকল্পনার প্রয়োগ কতটা করতে পারব। ভিন্ন কিছু করে ওকে চাপে রাখাই আমাদের লক্ষ্য।’

অস্ট্রেলিয়ার পর এবার নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদেরও তাঁর ‘ব্যাক অব হ্যান্ড’ ডেলিভারিতে ভোগানোর লক্ষ্যে অবিচল থাকতে চাইবেন মুস্তাফিজও। সাত দিনের মধ্যে পাঁচ ম্যাচ খেলেও যেখানে ‘কাটার মাস্টার’কে অবলীলায় খেলার উপায় খুঁজে পায়নি অস্ট্রেলিয়া, তখন কিউইদের জন্যও কাজটি খুব সহজ হওয়ার কথা নয়। গতিময় ডেলিভারি ধেয়ে আসার বদলে স্লোয়ার আর কাটার আসবে জেনেও অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের কাছে মূর্তিমান বিভীষিকাই ছিলেন মুস্তাফিজ। আইপিএলের এক মৌসুমে তাঁর সতীর্থ মোজেস হেনরিকস তাই বিস্ময় না লুকিয়ে বলেছিলেন, ‘আইপিএলে কিন্তু সে এত স্লোয়ার করে না। এখানে দেখছি ২৩-২৪টি বলই স্লোয়ার করছে।’

স্লোয়ার করার সে ফর্মুলা দলের আরেক তরুণ বাঁহাতি পেসার শরীফুল ইসলামও এমন আত্মস্থ করেছিলেন যে অস্ট্রেলিয়া সিরিজে সাফল্য পেতে বেগ পেতে হয়নি তাঁকেও। ৪-১ ব্যবধানে জেতা সিরিজে মুস্তাফিজকে কোনো ম্যাচেই নতুন বলে বোলিং করতে দেখা যায়নি। এই সিরিজেও তা দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা কম বলে আগাম জানিয়ে রেখেছেন বাংলাদেশের হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো, ‘(কন্ডিশন উপযোগী হলে) যদি কিছুটা সুইং থাকে, তাহলেই কেবল প্রথম ওভারটি করতে পারে মুস্তাফিজ। না হলে কাটারের জন্য ওকে আমরা পরেই ব্যবহার করব।’

অস্ট্রেলিয়া সিরিজে পরেই আক্রমণে এসেছেন মুস্তাফিজ। ডেথ ওভারে তাঁর বোলিং ম্যাচের ভাগ্যও গড়ে দিয়েছে। স্লোয়ার আর কাটারে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তুলে ছাড়া বোলার পুরো সিরিজে ৫০ শতাংশেরও বেশি ডেলিভারিই দিয়েছেন ডট। ১০২ বলের মধ্যে ডট বলই ৫৮টি! ম্যাচপিছু তাঁর ডট বলের সংখ্যা দেখাচ্ছে এ রকম—১২, ১১, ১৫, ১৭ এবং ৩ (শেষ ম্যাচে ৬২ রানে অলআউট অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র এক ওভারই বল করতে পেরেছিলেন)!

আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া সিরিজেও তাই মুস্তাফিজকে নিয়ে সতর্ক না থেকে উপায় নেই নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টম ল্যাথামের। একদিকে তাঁর দলের ব্যাটসম্যানদের সামনে বাংলাদেশের স্পিনারদের চ্যালেঞ্জ সামলানোর অগ্নিপরীক্ষা, অন্য দিকে মুস্তাফিজকে নিয়েও চলছে ভাবনার নানা দিগন্তে ঘোরাঘুরি, ‘মুস্তাফিজ তো ওর স্লোয়ারের জন্য বিখ্যাত। আমরা দেখেছি, অস্ট্রেলিয়া সিরিজে কী দারুণ বোলিংটাই না সে করেছে!’

স্লোয়ারের পর স্লোয়ারের পুনরাবৃত্তি হবে জেনেও পারেনি অস্ট্রেলিয়া। নিউজিল্যান্ড পারবে?

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ