মসজিদে যাওয়ার সময় যেসব দোয়া ও আমল করবেন

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

মসজিদকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্থান হিসেবে গণ্য করা হয়। মসজিদে ইবাদত-বন্দেগি ও আমল-আজকার করা হয়। মসজিদ মুসলিম সমাজের মূলকেন্দ্রও বটে। মসজিদে প্রবেশ করতে হলে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নাতার সঙ্গে প্রবশে করতে হয়। অপবিত্রতার নিয়ে মসজিদে প্রবেশ জায়েজ নেই। মসজিদের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হলো মসজিদ আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট জায়গা হলো বাজার।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৪১৪)

নামাজের উদ্দেশ্যে ঘরে থেকে বের হয়ে মসজিদে দিকে হেঁটে যেতে যেতে চমৎকার একটি দোয়া পড়তেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তার এ দোয়ায় আবেদনগুলো ছিল হৃদয়গ্রাহী ও অনেক উপকারী। দোয়াটি হলো :

اَللهُمَّ اجْعَلْ فِىْ قَلْبِىْ نُوْراً وَفِىْ لِسَانِىْ نُوْراً وَاجْعَلْ فِىْ سَمْعِىْ نُوْراً وَاجْعَلْ فِىْ بَصَرِىْ نُوْراً وَاجْعَلْ مِنْ خَلْفِىْ نُوْراً وَمِنْ أَمَامِىْ نُوْراً وَاجْعَلْ مِنْ فَوْقِىْ نُوْراً وَ مِنْ تَحْتِىْ نُوْراً اَللهُمَّ أَعْطَنِىْ نُوْراً

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাজ‘আল ফি ক্বালবি নুরাও ওয়া ফি লিসানি নুরাও ওয়াঝআল ফি সাময়ি নুরাও ওয়াঝআল ফি বাসারি নুরাও ওয়াঝআল মিন খালফি নুরাও ওয়া মিন আমামি নুরাও ওয়াঝআল মিন ফাউক্বি নুরাও ওয়া মিন তাহতি নুরা। আল্লাহুম্মা আঅত্বানি নুরা।’

অর্থ: হে আল্লাহ! আমার অন্তরে আলোর ব্যবস্থা করে দাও; আমার জিহ্বায় আলো দাও; আমার কানে আলো দাও; আমার চোখে আলো দাও; আমার পেছনে আলো দাও; আমার সামনে আলো দাও; আমার উপর থেকে আলো দাও; আমার নিচ থেকে আলো দাও। হে আল্লাহ! আমাকে আলো দান করো।’

এছাড়া মসজিদে যাওয়ার সময়কার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত রয়েছে। সেগুলো এখানে তুলে ধরা হলো। যা পালন করলে অসীম সওয়াব ও ফজিলত লাভ করা যায়।

  • আজানের জবাব ও দরুদ পাঠ
    আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন তোমরা মুয়াজ্জিনকে আজান দিতে শুনবে, তখন সে যেরূপ বলে, তদ্রূপ বলবে। এরপর আমার ওপর সালাত পাঠ করবে; করণ যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার সালাত পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে ১০ বার সালাত (রহমত) প্রদান করবেন। এরপর আমার জন্য অসিলা চাইবে, কারণ ওসিলা জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান। আল্লাহর একজন মাত্র বান্দাই এই মর্যাদা লাভ করবেন এবং আমি আশা করি আমিই হব সেই বান্দা। যে ব্যক্তি আমার জন্য অসিলা প্রার্থনা করবে, তাঁর জন্য শাফায়াত পাওনা হয়ে যাবে।’ (সহিহ মুসলিম: ১/২৮৮, হাদিস নং: ৩৮৪)
  • পরিপূর্ণ অজু করা ও দোয়া পড়া
    হজরত ওমর (র.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে অজু করে, অতঃপর বলে—‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।’ তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে। যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা, সে প্রবেশ করতে পারবে।’ (মুসলিম: ১৭/২২৪, মেশকাত, পৃ-৩৯)
  • পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া
    মসজিদের দিকে কদম ফেলা আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয়। বান্দা এর মাধ্যমে অনেক উঁচু মর্যাদা অর্জন করেন। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয়ের দিক নির্দেশনা দেব না যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা পাপরাশি ক্ষমা করেন এবং মর্যাদা উঁচু করেন? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, জি আল্লাহর রাসূল! তখন মহানবী (স.) বললেন, কষ্টের সময় ভালোভাবে অজু করা এবং অধিক পরিমাণে মসজিদ অভিমুখে পা ফেলা।’ (মুসলিম: ২৫১)
  • মসজিদে প্রবেশের দোয়া পড়া
    মসজিদে প্রবেশের সময় আল্লাহর কাছে রহমতের দোয়া করা। হজরত আবু উসাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে তখন যেন সে বলে ‘আল্লাহুম্মাফতাহ লি আবওয়াবা রাহমাতিকা’ অর্থাৎ, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন’; আর যখন বের হবে তখন যেন বলে ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিকা’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি।’ (নাসায়ি: ৭২৯)
  • ডান পা আগে প্রবেশ করানো
    মসজিদে প্রবেশের সময় আদবের প্রতি সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা। পবিত্র যে কাজ ডান দিক দিয়ে করা নবীজীর শিক্ষা। মসজিদে প্রবেশের সময়ও ডান পা আগে প্রবেশ করানো। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন ‘এটাও সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত যে, তুমি ডান পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করবে এবং বাম পা দিয়ে তা হতে বের হবে।’ (মুসতাদরাকে হাকেম: ৭৯১)