মধ্যম আয়ের ফাঁদে পড়ার আশঙ্কা পরিকল্পনামন্ত্রীর

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নীত হয়ে মধ্যম আয়ের দেশের ফাঁদে পড়ার আশঙ্কা আছে, কোথাও যেন কিছু একটা হচ্ছে। আমরা মধ্যম আয়ের দেশের ফাঁদে পড়ে যাই কি না, সন্দেহ হচ্ছে আমার।’

গতকাল মঙ্গলবার ‘করোনা-ভাইরাসের থাবা কাটিয়ে শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের পথে অর্থনীতি’ শীর্ষক ওয়েবিনারে মন্ত্রী তাঁর আশঙ্কার কথা জানান। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে।

মন্ত্রী বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের পর ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে এই অবস্থায় পড়ে থাকতে হয় কি না, এ ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোসহ পৃথিবীর বহু দেশ মধ্যম আয়ের দেশের ফাঁদে আটকে আছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এই বিষয়কে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে কাজ করার জন্য গবেষণা সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি গবেষকদের উদ্দেশে বলেন, ‘সামাজিক, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, একে অন্যের সঙ্গে খোঁচাখুঁচির আর্থিক মূল্য কত, তা আপনারা গবেষণা করে খুঁজে বের করুন। নিশ্চয়ই তার আর্থিক ক্ষতি আছে।’

প্রবাস আয়, রপ্তানি ও কৃষির ওপর বাংলাদেশের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এই তিন খাতেই সরকারের অবদান রয়েছে। করোনাকালে প্রবাসীদের আয়ের ওপর প্রণোদনা দিয়েছি, ফলে তারা বৈধ পথে দেশে টাকা পাঠিয়েছে এবং তারাই দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী কৃষিতে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী করোনায় সর্বাত্মক লকডাউন না দেওয়ায় রপ্তানি আয় বাড়ছে, বিশেষ করে পোশাক খাতে।’

ওয়েবিনারে পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান যায়েদী সাত্তার তাঁর মূল প্রবন্ধে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি বিবেচনায় চলতি বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাসে রপ্তানি খাতে ৪৬.৫০ বিলিয়ন ডলার আয় হবে, বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ প্রায় তিন লাখ ৯৫ হাজার ২৬০ কোটি (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা মূল্যে)। পাশাপাশি এ খাতে ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে প্রবন্ধে আশা প্রকাশ করা হয়।

যায়েদী সাত্তার আরো বলেন, জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আদমানি খাত হবে ৭২.৮০ বিলিয়ন ডলারের। টাকার অঙ্কে তা ছয় লাখ ১৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এই খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ২০ শতাংশ। এ ছাড়া জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রবাস আয় হবে ২২.৩০ বিলিয়ন ডলার। টাকার অঙ্কে তা এক লাখ ৮৯ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। এ সময় সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার সহজে হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ওয়েবিনারে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘আমরা দেখছি অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হচ্ছে। তবে এটি সবার জন্য সমান নয়। কেউ কেউ তার আগের অবস্থায় এখনো ফিরে যেতে পারেনি, বিশেষ করে দিনমজুর, নিম্ন আয়ের মানুষ। শিক্ষায় আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। বাল্যবিবাহ বেড়েছে। এসব দিকে আগে আমাদের নজর দিতে হবে।’

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ