ভিটামিন ডি সম্পর্কে যা জানতে হবে

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

ভিটামিন ডি-এর অভাব যে কোনো বয়সের মানুষের জন্য একটি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সমস্যা। অনেক গবেষণা অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের মধ্যে ভিটামিন ডি’র অভাব প্রায় ৭০% বা তার বেশি। ল্যাবভিত্তিক গবেষণায় দেখা যায় যে, ঢাকার জনসংখ্যার ৮৬% এর মধ্যে হাইপোভিটামিনোসিস ডি রয়েছে।

বিশ্ব ভিটামিন ডি দিবস ২ নভেম্বর উদযাপিত হয়। ভিটামিন ডি’র অভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রত্যেক নাগরিক এবং তাদের পরিবারের রোগের ঝুঁকি কমাতে, রক্তে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি নিশ্চিত করন এবং তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরার জন্য এ দিবস পালন করা হয়।

ভিটামিন ডি একটি ফ্যাটে দ্রবণীয় ভিটামিন। এটি অন্ত্রে ক্যালসিয়ামের শোষণ এবং ক্যালসিয়াম হোমিওস্টাসিস নিয়ন্ত্রণ এর সাথে জড়িত। এটি হাড় গঠনের জন্যও অপরিহার্য এবং স্বাস্থ্যকর হাড় রক্ষার জন্য একটি অন্যতম উপাদান। যেহেতু এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, তাই এটি শ্বাসনালীর সংক্রমণ এবং কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে একটি সুরক্ষামূলক ভূমিকা পালন করে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে ভিটামিন ডি’র গুরুত্ব অপরিসীম। ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, অস্টিওপোরোসিস, বেশ কিছু অটোইমিউন রোগ, অন্ত্রের রোগ, সিলিয়াক রোগ, কিডনির রোগ, যকৃতের রোগ এবং প্যানক্রিয়াটাইটিসের মতো বিভিন্ন ক্রণিক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা জন্য ভিটামিন ডি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এটি ব্রেস্টফিড করানো শিশু, প্রাপ্তবয়স্ক ও যারা অল্প সময় সূর্যের সংস্পর্শে থাকেন সেই সব ব্যক্তির, কালো ত্বকের ব্যক্তির এবং স্থূলকায় ব্যক্তিদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভিটামিন ডি সূর্যের আলো, চর্বিযুক্ত মাছ, ডিম, যকৃত, মাখন এবং ভিটামিন ডি আছে এরকম সম্পূরক খাবার থেকে পাওয়া যেতে পারে। আজকাল ডায়াগনস্টিক ল্যাবগুলোতে এই রোগ বিশ্লেষনের জন্য বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় এবং বিভিন্ন ইমিউনোঅ্যাসে পদ্ধতিগুলো বিভিন্ন মান দেয়। সুতরাং, অস্ট্রেলিয়ার রয়্যাল কলেজ অফ প্যাথলজিস্টস অনুসারে, চিকিৎসার সময় রক্তের সিরামে ভিটামিন ডি এর মাত্রা একই ল্যাবরেটরিতে পর্যবেক্ষণ করার জন্য বিশেষ পরামর্শ দেওয়া হয়।

একই টেস্ট যদি কোনো ব্যক্তি ভিন্ন ভিন্ন ল্যাবে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে করে তাহলে একই রকম রিপোর্ট নাও আসতে পারে কারন টেস্টের রেজাল্ট নির্ভর করে কখন নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, টেস্টের পদ্ধতি এবং সঠিক পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে কিনা তার ওপর।

সুতরাং, একটি নির্ভরযোগ্য ল্যাব থেকে আপনার ভিটামিন ডি’র লেভেল টেস্ট করুন এবং আপনি যদি ল্যাবের ফলাফলের গুণমান ক্রস-চেক করতে চান তবে আরেকটি মান সম্পন্ন ল্যাবের সাথে রিপোর্টগুলো তুলনা করুন। এক্ষেত্রে একই সময়ে নমুনা সংগ্রহের পাশাপাশি একই প্রোটোকল ব্যবহার করে স্যাম্পল উভয় ল্যাবে পাঠানো উচিত।

যদিও ভিটামিন ডি’র অভাব বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগী বুঝতে পারে না, কারণ এর কোনো লক্ষণ থাকে না, তবে ভিটামিন ডি’র অভাবে হাঁড়ের ঘনত্ব কম যেমন- অস্টিওপোরোসিস এবং হাঁড়ে ফ্র্যাকচার, কার্ডিওভাসকুলার রোগ, ক্যান্সার, এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর মতো রোগ হতে পারে। অতএব আপনার স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসাবে ভিটামিন ডি’র লেভেল বছরে অন্তত একবার টেস্ট করানো উচিত। ভিটামিন ডি’র অভাব এড়াতে আপনার খাদ্য তালিকায় ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন যেমন- তৈলাক্ত মাছ এবং ডিমের কুসুম। প্রাকৃতিকভাবে শরীরে ভিটামিন ডি’র পরিমাণ বাড়াতে প্রতি সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টার মধ্যে সরাসরি সূর্যের আলোর সংস্পর্শে যান।

আপনার শরীরে ভিটামিন ডি’র অভাবের ওপর নির্ভর করে প্রয়োজন অনুসারে আপনার ডাক্তার চিকিৎসা পরিকল্পনা সুপারিশ করতে পারেন। ভিটামিন ডি’র ঘাটতি দূরীকরণে এর চিকিৎসার প্রধান লক্ষ্য হলো- আপনার শরীরে ভিটামিন ডি’র একটি নির্দিষ্ট মাত্রা তৈরি করা এবং তা দীর্ঘদিন ধরে রাখা। ভিটামিন ডি’সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ এবং সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসা ছাড়াও, আপনার ডাক্তার ভিটামিন ডি সম্পূরক ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন। ভিটামিন ডি’র ওষুধ বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে; যা সহজে কেনা যায়, তারপরও আপনার শরীরে ভিটামিন ডি’র মাত্রা পরীক্ষা করে এবং ডাক্তারের সাথে কথা বলে তার পরামর্শ অনুযায়ী এই ডোজগুলো গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

মাহবুবুর রহমান
ল্যাবরেটরি ডিরেক্টর, প্রাভা হেলথ

সূত্র:যুগান্তর