ভারত সঙ্গে বিমান চলাচলে, কী সতর্কতা নিচ্ছে বাংলাদেশ

অক্টোবরের ২৮ তারিখে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিমান চলাচল শুরু হচ্ছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী তিনমাস এই বিমান চলাচল হবে এয়ার-বাবল প্রক্রিয়ায়, অর্থাৎ নির্দিষ্ট দুইটি দেশের কর্তৃপক্ষের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নির্ধারিত স্বাস্থ্য বিধি মেনে বিমান ভ্রমণ করতে হবে।

এ প্রক্রিয়ায় সাধারণত স্বাস্থ্য বিধি কিছুটা শিথিল হয়ে থাকে।

কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী এই মুহূর্তে বিশ্বে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হারে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত।

ফলে ভারতের সাথে বিমান চলাচল নতুন উদ্যমে চালু হবার পর সেটি বাংলাদেশের করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিকে আরো নাজুক অবস্থায় ফেলবে কিনা, এমন উদ্বেগ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের।

কী সতর্কতা নিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার?

বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারতের প্রস্তাবের পটভূমিতে কয়েক-দফা আলোচনা করে বিমান চলাচলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, যা প্রথম তিন মাস চলবে এয়ার-বাবল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।

এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলে বিবিসিকে বলেছেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ মহিবুল হক।

তিনি বলেছেন, “শর্ত সাপেক্ষে এ অনুমতি দেয়া হয়েছে। শর্তসমূহ নিয়ে কয়েকবার আলাপ-আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।”

যেসব শর্তে দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচল করবে, সেগুলো নিম্নরূপ:

* উভয় দেশের যাত্রীদের জন্য ৭২ ঘণ্টার মধ্যকার পিসিআর টেস্টের নেগেটিভ সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করতে হবে। কোভিড ফ্রি সার্টিফিকেট ছাড়া কেউ বোর্ডিং পাস পাবে না।

* যেহেতু একজন যাত্রী পিসিআর টেস্টের নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে আসবেন, সে কারণে কোন যাত্রীকে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে না।

* উড়োজাহাজ সেটা যে আকারেরই হোক, পেছনের দুই সারি ফাঁকা রাখতে হবে।

* সামাজিক দূরত্বের নিয়ম মেনে সপ্তাহে কেবল নির্দিষ্ট সংখ্যক ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে।

তবে, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ মহিবুল হক জানিয়েছেন, ভারত শর্ত দিয়েছিল কোন রোগীর ক্ষেত্রে একজনের বেশি ”অ্যাটেনডেন্ট” থাকতে পারবে না।

কিন্তু পরবর্তীতে বাংলাদেশের আলোচনার প্রেক্ষাপটে এখন দুই বা তিনজন ”অ্যাটেনডেন্ট” থাকতে পারবেন এমন নিয়ম করা হয়েছে।

সপ্তাহে দুই দেশ মিলে মোট ৫৬টি ফ্লাইট পরিচালনা করবে।

এদিকে, বাংলাদেশের সঙ্গে এয়ার-বাবল চালু হলেও আপাতত টুরিস্ট ভিসা বন্ধ থাকবে।

বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ৯টি বিভাগে অনলাইনে ভারতীয় ভিসা দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন।

শুরুতে কোলকাতা, দিল্লি এবং চেন্নাই—ভারতের এই তিনটি শহরে বিমান চলাচল করবে, আর বাংলাদেশের ঢাকা এবং চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে ভ্রমণ করা যাবে।

বাংলাদেশ থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, এবং নভো এয়ার যাত্রী পরিবহন করবে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ থেকে যাত্রী নেবে ভারতের এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো, স্পাইসজেট, ভিস্তারা এবং গোএয়ার নামে ৫টি বিমান সংস্থা।

এয়ার বাবল কী?

বিমান ভ্রমণের ক্ষেত্রে মূলত দুইটি ধরণ প্রচলিত—কমার্শিয়াল ফ্লাইট এবং চার্টার্ড ফ্লাইট।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মি. হক বলেছেন, এয়ার বাবল প্রক্রিয়া হচ্ছে ওই দুইটি ধরণের মাঝামাঝি একটি প্রক্রিয়া।

“অর্থাৎ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালিত হবে বিমান যাত্রা, কিন্তু সংশ্লিষ্ট দুইটি দেশের নিজেদের সম্মত হওয়া শর্তে। শর্ত সাপেক্ষে এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এই ফ্লাইটগুলো পরিচালিত হবে।”

এদিকে, আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা আইএটিএ’র সংজ্ঞা অনুযায়ী এয়ার-বাবল হচ্ছে, এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে নির্দিষ্ট দুইটি দেশের মধ্যে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে আকাশপথে যাত্রী পরিবহন করা হয়।

একে ট্রাভেল বাবল, ট্রাভেল করিডর কিংবা এয়ার ব্রিজেস—এমন নামেও অভিহিত করা হয়।

এক্ষেত্রে মহামারির সময় দুই কর্তৃপক্ষকে উভয়ের স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে একমত হতে হয়।

সাধারণত এয়ার-বাবল প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে উভয় দেশই স্বাস্থ্য বিধি কিছুটা শিথিল করে, যেমন এক্ষেত্রে কোন যাত্রীকে কোয়ারেন্টিন করতে হবে না। সূত্র: বিবিসি বাংলা