‘ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে যা দরকার, করা হবে’

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

 

বুধবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘অভয়নগর-মনিরামপুর-কেশবপুর-ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারি পদক্ষপ ও জনগণের দাবি’ শীর্ষক গনশুনানি অনুষ্ঠানে এ আশ্বাস দেন মন্ত্রী।

 

ভবদহ এলাকার মানুষদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা চাচ্ছেন, টিআরএম আগামী মৌসুমে হোক। তা বলতে পারব না যে, আগামী মৌসুমের আগেই হবে। কারণ, এতে সময় লাগবে। তবে এখন যা যা দরকার তা করা হবে। টিআরএম পারমানেন্ট সমাধান না। আমাদের অন্য কিছু উদ্ভাবন করতে হবে। টিআরএম বর্তমান সমাধান।’

 

মাঘি পূর্ণিমার আগে একটা বাঁধ নির্মাণের দাবির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি তা করার ব্যাপারে দেখব। তবে কথা দিচ্ছি না যে, করে দেব। আগে দেখতে হবে, কত সময় লাগবে, কত টাকা লাগবে। সব দেখার পর যদি সম্ভব হয়, তাহলে বাঁধ করে দেওয়া হবে। আপনার চিন্তা করবেন না, আমি মনিটরিং করব।’

 

ভবদহকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দুর্গত এলাকা ঘোষণা করার বিষয়টি জেলা প্রশাসক দেখেন। তবে আমি মনি করি না যে, দুর্গত এলাকা ঘোষণা করার প্রয়োজন আছে।’

 

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সমস্যা সমাধানের জন্য গঙ্গা বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘গঙ্গা বাঁধ করতে পারলে সামগ্রিকভাবে একটা সমাধান দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য করা যাবে। ফসল উৎপাদন, মাছ চাষসহ সব দিক থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে ওই এলাকার মানুষ। বাঁধটা করতে ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো লাগবে। অন্য দিকে একটু সমস্যার কারণে এ প্রকল্প করতে দেরি হচেছ।

 

গণশুনানিতে আলোচনা করেন- পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা) মো. মাহফুজুর রহমান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক ড. এম শাহজাহান মণ্ডল ও অভয়নগরের ৪ নং পায়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিষ্ণুপদ দত্ত।

 

বিশেষ অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক। সভাপতিত্ব করেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। ‘ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধ সমস্যার সমাধানে জনগণের ভাবনা’ শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভবদহ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আ. মতলেব সরদার। সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

 

মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘সরকার বাজেট বাড়ায়নি। তার মধ্যে রোয়ানু হয়ে গেছে। রোয়ানুর ক্ষতি সামাল দেওয়ার পর স্পেশাল বরাদ্দ দিয়ে মন্ত্রী জলাবদ্ধতা রোধের জন্য বলেছেন। সমস্যা হয়েছে ৪০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হওয়ায়। আমাদের দুটি ড্রেজার এবং একটি স্টেবেটার দেওয়া হয়েছে। তাতে গত দেড় মাসে আমরা এক মিটার পানি কমাতে পেরেছি।’

 

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের জায়গা থেকে এগোচ্ছি। আমাদের আগের যে স্টাডি ছিল, তা পরিবর্তন হয়ে গেছে। আমরা যদি পরিবর্তনগুলো চিহ্নিত করতে না পারি তাহলে কোনো কাজে আসবে না। সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলো না এনে প্রজেক্ট তৈরি করলে তাতে কোনো সুফল আসবে না। দেরি হলেও বা কষ্ট হলেও সুফল পাওয়ার জন্য একটু সময় নিতে হবে। আমরা যে সমীক্ষা চালাচিছ, তাতে আমরা ওই এলাকার জনগণের কাছে বেশি যাচ্ছি। ডিসেম্বরে সমীক্ষা চূড়ান্ত করা হবে। এলাকার মানুষের কোনো পরামর্শ থাকলে ডিসেম্বরের মধ্যে জানানোর আহ্বান জানাই।’

 

ড. এম শাহজাহান মণ্ডল বলেন, ‘ভবদহের জলাবদ্ধতার সসম্যা সত্তরের শেষ বা আশির দশকে শুরু। অনেকগুলো বিল এখানে আছে। কিছুটা নিচু এলাকা। আমার কাছে মনে হচ্ছে সমস্যাটা টেকনিক্যাল না ননটেকনিক্যাল। সমন্বয়ের সসম্যা রয়েছে। এ ছাড়া পক্ষ বিপক্ষ আছে।’

 

ভবদহ অঞ্চলের বাসিন্দা উজ্জল কুমার বালা বলেন, ‘স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া দরকার। প্রতিশ্রুতি শুনতে শুনতে আমরা ক্লান্ত। আমরা বাস্তবায়ন দেখতে চাই। যখন সমস্যা প্রকট হয় তখন তোলপাড় শুরু হয়। পরে আর থাকে না।’

 

চিত্তরঞ্চন বিশ্বাস বলেন, ‘দীর্ঘ ২০ বছর আমরা আউশ-আমন থেকে বঞ্চিত। আমরা ছেলেমেয়ে নিয়ে যেভাবে জীবনযাপন করছি, সেটা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। আমি দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানাই।’

 

সাফিয়া খানম বলেন, ‘জলাবদ্ধতার কারণে লোকজন ওই এলাকায় মেয়ে বিয়েও দিতে চায় না। এখানে মানুষের জীবনমান চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রন্ত হচ্ছে এখানকার মানুষ। গর্ভবতী নারীদের প্রসবের সময় হাসপাতালে নেওয়ার জন্য নৌকাই ভরসা। জায়গা আছে অনেক, কিন্তু তা পানির নিচে। তাই কেউ মারা গেলে দাফন ও দহনের কোনো উপযুক্ত জায়গা যাওয়া যায় না।’

সূত্র: রাইজিংবিডি