ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ভালোই পরিচালন মুনাফা করেছে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসায় ঋণপ্রবাহও বেড়েছে। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ভালো থাকায় সামগ্রিকভাবে বছরের প্রথম ভাগে বেড়েছে ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফাও।

গত শুক্রবার দেশের ব্যাংকগুলো তাদের ছয় মাসের আয়-ব্যয়ের হিসাব করে। পরিচালন মুনাফা ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। নিট মুনাফাই ব্যাংকের প্রকৃত আয়। পরিচালনগত মুনাফা থেকে ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি (প্রভিশন) এবং কর (৪২.৫ শতাংশ) বাদ দিয়ে নিট মুনাফার পরিমাণ হয়।

এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। নতুন অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকগুলোরও মুনাফা ভালো হয়েছে। এ সময়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। রাজনৈতিক অস্থিরতা কেটে বিনিয়োগে গতি ফেরায় মুনাফা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কয়েকটি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তাঁরা জানিয়েছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফেরায় সার্বিকভাবে আগের বছরের তুলনায় বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বেড়েছে। বিশেষ করে রিটেইল, এসএমই, কৃষি ও কনজ্যুমার খাতে ব্যাংকের বিনিয়োগ বেশি হয়েছে। এ ছাড়া সার্ভিস চার্জ থেকেও মুনাফার একটি বড় অংশ এসেছে। কলমানি ও বাংলাদেশ ব্যাংকে রিভার্স রেপোর লেনদেন থেকেও ভালো আয় হয়েছে। এগুলোর প্রভাব পড়েছে মুনাফার ওপর।

ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, ব্যাংকটি ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করছে। এ সময়ে তাদের বিভিন্নমুখী কার্যক্রম বেড়েছে। ফলে অতিরিক্ত তারল্য কমে এসেছে। এ ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফেরায় নতুন বিনিয়োগও বেড়েছে। যা মুনাফা বাড়াতে ভূমিকা রাখছে।

মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আমিন বলেন, প্রাইভেট ব্যাংকের পরিকল্পনা, কাজ, পর্ষদের নির্দেশনা, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টা, সার্ভিসের কোয়ালিটি সবই মুনাফা বাড়াতে কাজ করে। এর বাইরে করপোরেট লেন্ডিং কমে গেলেও বেসরকারি ব্যাংকগুলো রিটেইল, এসএমই, কৃষি, হাউস বিল্ডিং ও কনজ্যুমার ফিন্যান্সিংয়ে বেশি জোর দিয়েছে। এখান থেকে তারা সাফল্যও পেয়েছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৮৫৪ কোটি টাকা। গত বছরের প্রথমার্ধে ব্যাংকটি ৮৪২ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছিল। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক। আলোচ্য সময়ে ব্যাংকটি পরিচালন মুনাফা করেছে ৬১০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ৩৯৫ কোটি টাকা। এ সময়ে সাউথইস্ট ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে ৪১৫ কোটি টাকা। গত বছরের প্রথমার্ধে ব্যাংকটি মাত্র সাড়ে ২৭ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল।  প্রাইম ব্যাংক গত বছরের প্রথমার্ধে ৩১৫ কোটি টাকা মুনাফা করলেও এবার করেছে ৪০১ কোটি টাকা।

এ সময়ে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে ৩৫০ কোটি টাকা। গত বছর একই সময়ে ব্যাংকটি মুনাফা করেছিল ২৬৩ কোটি টাকা। সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২৬ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে ব্যাংক মুনাফা করেছিল ২১০ কোটি টাকা। এনসিসি ব্যাংক গত বছর প্রথমার্ধে ১৭৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল। চলতি বছরের প্রথমার্থে ব্যাংকটির মুনাফা বেড়ে হয়েছে ২০১ কোটি টাকা। এক্সিম ব্যাংক মুনাফা করেছে ২৫৫ কোটি টাকা। যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২৬৮ কোটি টাকা। চলতি বছরের প্রথমার্ধে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক মুনাফা করেছে ১৭৫ কোটি টাকা। গত বছরের প্রথমার্ধে ব্যাংকটি মুনাফা করেছিল ১৪০ কোটি টাকা। এ ছাড়া যমুনা ব্যাংক এ সময়ে ২০১ কোটি, পূবালী ব্যাংক ৩১০ কোটি ও ব্যাংক এশিয়া ২৭৮ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে।

অন্যদিকে এ সময়ে নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ১০৭ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। গত বছরের প্রথমার্ধে ব্যাংকটি ৩৬ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল। গত বছরের প্রথমার্ধে মেঘনা ব্যাংক ২৫ কোটি টাকা মুনাফা করলেও এবার করেছে ৫৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার ব্যাংক ৬৬ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। মধুমতি ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে ৩২ কোটি টাকা। এ ছাড়া মিডল্যান্ড ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক এ সময়ে ভালো মুনাফা করেছে বলে জানা গেছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে জনতা ব্যাংকও ভালো মুনাফা করেছে। মুনাফার ধারায় রয়েছে সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকও।

বিশ্বব্যাপী পরিচালন মুনাফা প্রকাশ একটি স্বীকৃত বিষয়। যদিও বাংলাদেশে এই পরিচালন মুনাফা প্রকাশে নানা বিধিনিষেধ রয়েছে। এই বিধিনিষেধ এসেছে বিএসইসির অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। তবে শেয়ারবাজারে যারা প্রতিনিয়ত কেনাবেচা করে এবং যাদের কোনো ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগ রয়েছে, তারা ব্যক্তি যোগাযোগের মাধ্যমেই এ তথ্য পায়।