হামলার সময় সন্ত্রাসীগোষ্ঠী সক্রিয় ছিল ইন্টারনেটে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ঢাকার গুলশানে গত শুক্রবার রাতে সন্ত্রাসী হামলার সময়ও সক্রিয় ছিল হামলাকারীদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ মাধ্যম। রাত সোয়া ৮টা থেকে পরের দিন সকাল সাড়ে ৮টায় জিম্মি উদ্ধার অভিযান শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রায় ১২ ঘণ্টা সন্ত্রাসীরা তাদের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে যোগাযোগ রেখেছিল। তারা নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে দেয় মুহূর্তে মুহূর্তে।

জিম্মি সংকট শুরুর পর থেকে এ হামলার ঘটনা চলে আসে সিএনএন, বিবিসি, আল-জাজিরা, এনডিটিভিসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের মূল সংবাদে। মাওলানা ভাষানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আশরাফুল আলম গতকাল শনিবার রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, সন্ত্রাসবাদের মূল লক্ষ্য থাকে সমাজে ভীতি ছড়ানো। নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়া। গত শুক্রবারের হামলায় তারা এ ক্ষেত্রে কিছুটা সফল হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সন্ত্রাসবাদীরা প্রথমে ছোট ছোট হামলা করে রাষ্ট্রের সামর্থ্য সম্পর্কে একটা ধারণা লাভের চেষ্টা করে। সরকার যদি অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করতে পারে, তাহলে সন্ত্রাসবাদ দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু বাংলাদেশে এর আগে কোনো ঘটনার বিচার হয়নি। যদি বিচার হতো, তাহলে এ ঘটনা হয়তো ঘটত না।

015934kalerkantho-2016-07-03-P-34

সন্ত্রাসীরা রেস্টুরেন্টে হামলার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগাযোগ রক্ষা করেছিল। এ সম্পর্কে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, সন্ত্রাসীরা হামলার শুরু থেকে জিম্মি উদ্ধার অভিযানের আগ পর্যন্ত সন্ত্রাসীরা নিহতদের ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়। ছবিগুলো নিখুঁত। বোঝা যায় দক্ষ হাতে সেগুলো তোলা। এত হাই রেজ্যুলেশনের ছবি পাঠাতে হলে বেশ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেটের প্রয়োজন।

আইএসের গণমাধ্যম থেকে দাবি করা হয়েছে ২৪ জনকে হত্যার কথা; যদিও এ সংখ্যা ঠিক নয়।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সন্ত্রাসীরা রেস্টুরেন্টে ইন্টারনেট ব্যবহার করেছে। হতে পারে ছবি তারা মোবাইলের মাধ্যমে পাঠিয়েছে। অথবা রেস্টুরেন্টের ইন্টারনেটও তারা ব্যবহার করে থাকতে পারে। তাঁরা আরো বলছেন, জিম্মি ঘটনার মূলে থাকে দাবি আদায়। তবে অন্য আর দশটি সাধারণ জিম্মি ঘটনার সঙ্গে এর তুলনা চলে না। কারণ এ ঘটনায় তাদের দাবিগুলো স্পষ্ট নয়। মূলত তাদের টার্গেট ছিল বাংলাদেশে নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়া।

হামলার আগে শুক্রবার সকাল ১১টা ২ মিনিটে হামলাকারীদের পক্ষ থেকে টুইটারে ঢাকায় বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করার কথা বলা হয়। আর হামলার পরপরই রাত ১০টা ৬ মিনিটে গুলশানে জিম্মি ঘটনার দায় স্বীকার করে টুইট করে এবিটি। এরপর রাত ১টা ২৪ মিনিটে আইএসের কথিত মুখপত্র আমাক নিউজের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জঙ্গি কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ এক টুইট বার্তায় এ খবর দেয়। এর মধ্য দিয়ে জঙ্গিদের হাতে নিহতদের ছবি ছড়িয়ে পড়ে সারা পৃথিবীতে।

হামলার ঘোষণা দেওয়া হয় মে মাসে : জানা গেছে, ঘটনার দিন শুক্রবার সকালেই শুধু হামলার আগাম খবর ঘোষণা করেনি সন্ত্রাসীরা—এ বছরের মে মাসের শেষের দিকে একটি অডিও বার্তা প্রকাশ করে আইএস। তাতে পবিত্র রমজান মাসে সারা পৃথিবীতে হামলার কথা বলা হয়েছিল। গত শুক্রবার রাতের হামলার প্রেক্ষাপটে সিএনএনের এক বিশ্লেষণে বলা হয়, ওই অডিও বার্তার পর গত মাসে মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিমা বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ ব্যাপকতা পায়। বাংলাদেশেও রমজান মাসজুড়ে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে।

সূত্র: কালের কণ্ঠ