ব্যবসা-বাণিজ্যের নিরাপত্তায় ব্যয় বাড়ছে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
গুলশান হামলার পর দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের নিরাপত্তায় ব্যয় বাড়ছে।জঙ্গি হামলার পর থেকে দেশের বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠানে নতুন করে বসানো হয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাসহ (সিসি ক্যামেরা) নিরাপত্তার নানা সরঞ্জাম। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যাও। এর ফলে নিরাপত্তা খাতে আগের তুলনায় ব্যয় বাড়ছে।

 

এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, আমাদের আগে থেকেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো উচিত ছিল। তবে গুলশান হামলার পর দেশের সব প্রতিষ্ঠানই নতুন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। ব্যবসা বাণিজ্যের নিরাপত্তায় এই ব্যয় বৃদ্ধিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন উল্লেখ করে আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, খরচের চেয়ে এখন নিরাপত্তার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। আগে এ খাতে আমরা ব্যয় কম করেছি। কারণ, আগে প্রয়োজন কম ছিল। এখন এর প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে।

 

গুলশান হামলার পর সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা, মার্কেট,বিপণীবিতান এমনকি বাসাবাড়িতেও লাগানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। এছাড়া মেটাল ডিটেক্টর, লাগেজ স্ক্যানার, ডোর ফোন, আর্চওয়ে, কার মিরর, মেটাল ডোর গেট কিনতেও বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। এর বাইরে নতুন করে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দিতে হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে। এর ফলে আগের তুলনায় নিরাপত্তা খাতে ব্যয় বাড়ছে।

 

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মান ও প্রকারভেদে প্রতিটি সিসি ক্যামেরার পেছনে ব্যবসায়ীদের ১ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে।  আউটডোর বুলেট ক্যামেরার (স্পিড ডোম) একেকটির পেছনে খরচ করতে হচ্ছে ৪৮ হাজার থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ৪টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও সংযোগের জন্য বক্সের দাম পড়ছে সর্বনিম্ন ৪ হাজার টাকা থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত। ৮টি ক্যামেরা সংযোগের জন্য খরচ করতে হচ্ছে ৫ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত। ১৬টি ক্যামেরা সংযোগের জন্য সর্বনিম্ন খরচ করতে হচ্ছে ৮ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১৬ হাজার টাকা ‌পর্যন্ত । আর ৩২টি ক্যামেরা সংযোগের জন্য বক্সের দাম পড়ছে ৮ হাজার টাকা থেকে ৩৫ হাজার টাকা। এছাড়া, আউটডোর সিসিটিভি লাগাতে খরচ পড়ছে ৪৫ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা।

 

সাধারণত বড় শপিংমল বা জনগুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে প্রবেশের আগে যে যন্ত্রটির মাধ্যমে প্রত্যেককে পরীক্ষা করা হয় সেটিই মেটাল ডিটেক্টর। এই যন্ত্রটি আগ্নেয়াস্ত্র, যেমন-পিস্তল, রিভলবার, গ্রেনেড ও বড় ছুরি সহজেই শনাক্ত করতে পারে। একটি পরিপূর্ণ ভালো মানের মেটাল ডিটেক্টর কিনতে খরচ পড়ে ১ লাখ ১৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত।

 

বড় অফিস বা মিল-কারখানার নিরাপত্তার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ৮ বা ১৬ চ্যানেলের স্ট্যান্ড অ্যালোন এমবেডেড ডিভিআর (ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার) এবং বিল্ট-ইন ডিভিডি রাইটার। এই ডিভিআর লাগাতে খরচ করতে হচ্ছে ৩৫ হাজার থেকে ৯৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ।

 

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, এখন এটার প্রয়োজন বেড়েছে। এ কারণে নিরাপত্তা খাতে ব্যয়ও বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি মনে করেন, নিরাপত্তা বাড়াতে প্রয়োজনে আরও ব্যয় বাড়ানো দরকার। কারণ. অর্থনীতিতে সুফল পেতে হলে এবং মানুষের আস্থা বাড়াতে হলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে।

 

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গুলশান হামলার পর বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা বাবদ অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে ১০ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত। মাঝারি মানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা বাবদ অতিরিক্ত খরচ ১০ লাখ থেকে ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত। আর ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে খরচ করতে হচ্ছে ৫০ হাজার টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন