সোমবার , ১৭ আগস্ট ২০২০ | ২০শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

বৈধ-অবৈধ পথে আসছে মাংস, বেশির ভাগই মহিষের

Paris
আগস্ট ১৭, ২০২০ ৯:১২ পূর্বাহ্ণ

চাহিদার চেয়ে দেশে মাংস এখন উদ্বৃত্ত। কোরবানির শতভাগ চাহিদা পূরণ হচ্ছে নিজেদের উৎপাদিত পশু দিয়েই। রপ্তানি বাজারেও দেশের মাংসের বেশ কদর। তার পরও দেশে বৈধ ও অবৈধ পথে আসছে পশুর মাংস। এর মধ্যে বেশির ভাগই মহিষের। গত বছর প্রতি মাসে গড়ে পাঁচ লাখ ১৬ হাজার কেজি মাংস আমদানি হয়েছে দেশে। প্রতিবেশী চীন, মিয়ানমার ও নেপাল থেকে দেশে এসব মাংস এলেও প্রধান উৎস কিন্তু ভারত। আমদানি করা নিম্নমানের মহিষের মাংস গরুর মাংস হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয়। সেই সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে চোরাই পথে আনা রোগাক্রান্ত গরুর পচা মাংসও। কোনো ধরনের উন্নত পরীক্ষা ছাড়াই এসব মাংস দেদার ঢুকছে দেশে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়ছে।

অথচ প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে প্রতিবছর প্রায় আড়াই লাখ টন মাংস উদ্বৃত্ত হয় দেশে। আর উদ্যোক্তারা বলছেন, প্রতিদিন গরু, ছাগল ও মহিষের মাংসের চাহিদা আসছে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে। প্রতিবেশী দেশগুলো মাংস রপ্তানিতে এগিয়ে গেলেও বাংলাদেশ আরো পিছিয়ে পড়ছে। মূলত তিন বাধায় আটকে আছে রপ্তানি। সরকারি পর্যায়ে রপ্তানির চুক্তি না থাকা, ওয়ার্ল্ড এনিম্যাল হেলথ অর্গানাইজেশনের (ওআইই) ডিজিজ ফ্রি সনদ অর্জন করতে না পারা এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দামের প্রতিযোগিতা। এসব সমস্যা দূর করতে সরকারের উদ্যোগ জরুরি বলেও মনে করছেন তাঁরা। সবার আগে বিদেশ থেকে মহিষের মাংস আমদানি বন্ধ করতে হবে।

এদিকে একটি চক্র সপ্তাহে তিন দিন ঢাকার তেজগাঁও থেকে অননুমোদিত প্যাকেটজাত মহিষের মাংস আনে। এরপর তারা গোপনে বিভিন্ন রেস্তোরাঁ ও স্থানীয় কসাইদের কাছে গরুর মাংস হিসেবে সেগুলো বিক্রি করে। কসাইরাও সেভাবেই মানুষকে তা গছিয়ে দেয়।

চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে দেশে ৫৭ লাখ কেজি মাংস আমদানি হয়েছে। অর্থাৎ বৈধপথে গড়ে আমদানি হয়েছে পৌনে পাঁচ লাখ কেজি মাংস।

এ ব্যাপারে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) মহাব্যবস্থাপক ও প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞ ড. শরীফ আহমেদ চৌধুরী বলেন, একটি গরু উৎপাদন থেকে ভোক্তার কাছে মাংস পৌঁছাতে ১০ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়। আমদানি হলে উদ্যোক্তাসহ মানুষের দারিদ্র্যকে আরো প্রকট করে তুলবে। এ ছাড়া দেশে হিমায়িত মাংস আমদানিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় ভোক্তারা ও প্রাণিসম্পদ খাত স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে ২০১৯-২০ অর্থবছরে গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়ার মোট উৎপাদন হয়েছে ৫৫৯ দশমিক ২৬ লাখ। গত বছর দেশে মাংসের চাহিদা ধরা হয়েছিল ৭৪ দশমিক ৩৭ লাখ মেট্রিক টন। বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ৭৬ দশমিক ৭৪ লাখ মেট্রিক টন। আগের বছর মাংসের উৎপাদন ছিল ৭৫ দশমিক ১৪ লাখ মেট্রিক টন।

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, কৃষিঋণের মাধ্যমে চরাঞ্চলে পশু পালন করা গেলে মাংস ও কোরবানির চাহিদা পূরণ করেও বিদেশে মাংস, হাড়, শিং, নাড়ি-ভুঁড়ি, চামড়া রপ্তানি করে ৬০ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব।

জানা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশই ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমারসহ আশপাশের দেশ থেকে মাংস আমদানি করে। কিন্তু হালাল মাংস হিসেবে মুসলিম দেশের প্রতি আস্থা অনেক বেশি। শুধু হালালের জন্য নয়, মাংসের গুণগত মানের দিক থেকেও কদর রয়েছে বাংলাদেশের মাংসের।

দেশের গরুর মাংস রপ্তানিকারক একমাত্র প্রতিষ্ঠান ‘বেঙ্গল মিট’। প্রতিষ্ঠার পর দুবাই, কুয়েত, মালদ্বীপ ও বাহরাইনে রপ্তানির বাজার খুলেছিল তারা। এ ছাড়া ওমান, কাতার ও মালয়েশিয়ায় মাংস রপ্তানির অনুমতিও পেয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। সৌদি আরবে রপ্তানির চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় ২০১৬ সালের পর এখন শুধু মালদ্বীপ ও কুয়েতে বছরে দুই লাখ কেজি বা ২০০ টন গরুর মাংস রপ্তানি করছে প্রতিষ্ঠানটি। অথচ ২০১৬ সালের আগ পর্যন্ত বছরে ১০ লাখ কেজি মাংস রপ্তানি করত ‘বেঙ্গল মিট’।

বেঙ্গল মিটের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. আল আমিন বলেন, ‘দেশের মাংসের রপ্তানি বাজার খুবই সম্ভাবনাময়। প্রতিদিন বিভিন্ন দেশের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান থেকে রপ্তানির চাহিদা আসে আমাদের কাছে। কিন্তু আমরা দিতে পারি না। কারণ জিটুজি কোনো অ্যাগ্রিমেন্ট নেই। নেই ওআইই সনদও। তার চেয়ে বড় সমস্যা হলো প্রতিবেশী দেশগুলো যে দামে রপ্তানি করে, আমরা সে দামে দিতে পারি না। আমাদের উৎপাদন খরচ বেশি। ফলে দামের প্রতিযোগিতায় আমরা পিছিয়ে পড়ি।’

জানা যায়, রপ্তানি বাজারে ভারত ও পাকিস্তানের মাংসের দাম সাড়ে চার ডলার। দেশীয় টাকায় ৩৯০ টাকা কেজি। অথচ দেশের বাজারে মাংস বিক্রি হয় ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি। ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান হোসেইন বলেন, ‘আমাদের গোখাদ্যের দাম, পরিবহন খরচ, মধ্যস্বত্বভোগীর সংখ্যা বেশি। এক কেজি মাংস উৎপাদনের জন্য গরুকে শুধু দানাদার খাবার দিতে হয় ২৪০ টাকার। এর সঙ্গে রয়েছে ওষুধ, শেড ভাড়া, কর্মচারীর বেতন ও আঁশযুক্ত খাবারের খরচ।

এদিকে ওয়ার্ল্ড এনিম্যাল হেলথ অর্গানাইজেশনের (ওআইই) ছাড়পত্র থাকলেও আমদানিকারক দেশগুলো মাংস নেয় না। তাই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মতো কিছু অঞ্চলকে রোগমুক্ত এলাকা ঘোষণার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ

সর্বশেষ - জাতীয়