বেড়েছে চালের দাম, তানোরে দিশেহারা নিম্ম আয়ের মানুষ

টিপু সুলতান, তানোর:


রাজশাহীর তানোর পৌর সদরের আব্দুল ওহাব স্ত্রী তিন ছেলের সংসার পেশায় তিন চাকার চার্জ ব্যাটারির ভ্যান চালাতেন।কিন্তু করোনাভাইরাসের সময় ভ্যান বিক্রি করে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সংসারের চাকা একটু সচল করতে প্রায় লাখ টাকা দিয়ে চার্জ দেয়া ছোট তিন মোটা চাকার বড় আকারের ভ্যান কিনেন। যা সম্পূর্ণ ঋণের টাকায়। প্রতি সপ্তাহে কয়েকটি এনজিওতে দিতে হয় কিস্তি।

এদিকে নেই তেমন ভাড়া পাইনি তেমন অনুদানও। টেনে মেনে চলে সংসার। তিন বেলার পরিবর্তে দু বেলা খেয়ে চালাচ্ছেন সংসার । পেটে খেতে পাক না পাক কিস্তি দিতেই হবে। ঝড় বৃষ্টি যাই হোক পেটের ক্ষুধা মিটাতে ও কিস্তির টাকা জোগাড় স্ত্রী ছেলেদের দুবেলা মুখে খাবার দিতে রাস্তায় থাকতে হয় সার্বক্ষণিক। লকডাউনের আগে কিছুটা ভালো থাকলেও লকডাউনের পর থেকে আয় রোজগার কমে গেলেও ব্যয় বেড়েই চলেছে। তার মত শতশত ভ্যান অটো চালক থেকে শুরু করে নিম্ম মধ্য বিত্ত ব্যাক্তিদের চলছে হাহাকারের সংসার।

ওহাবের বাড়ি রাজশাহীর তানোর পৌর সদরের গুবিরপাড়া গ্রামে। ভিটে বাড়ি ছাড়া কিছুই নেই। শুধু তারই না এমন হাহাকারের জীবন চলছে পৌর সদর থেকে শুরু করে উপজেলার গ্রাম গঞ্জের শতশত জনসাধারণের। যাদের দিনগুলো যাচ্ছে অভাবে। এসমস্ত জনসাধারণকে সব কিছু কিনে খেতে হয়।

লকডাউনের সময় আতঙ্কে হঠাৎ করে চাল ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে এক লাফে বাড়িয়ে দেয় চালের দাম। বাজার মনিটরিঙের অভাবের কারনেই ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাড়িয়ে দিয়েছেন চালের দাম বলেও দাবি অনেকের। ফলে বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে জোরালো ভুমিকার আহবান জানান নিম্ম আয়ের মানুষরা।

জানা গেছে, করোনাভাইরাসের জন্য এবং লকডাউনের কারনে চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে ব্যাপক হারে চালের দাম বেড়ে যায়। সেই দাম চলমান ছিল গত মাসেও। কিন্তু চলতি মাস থেকেই আবারো বেড়ে যায় চালের দাম। কোন ধরনের কারন ছাড়াই বস্তা প্রতি প্রকার ভেদে ৫০, ৬০, ৭০,৮০ এমনকি ১০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে।

এ উপজেলার মানুষরা বেশ কয়েক ধরনের চালের ভাত খেয়ে থাকেন। নিম্ম মধ্য বিত্ত দিন মজুর খেটে খাওয়া জনসাধারণরা তামড়ি নামক চালের ভাত খেয়ে থাকেন। কারন সব চেয়ে দাম কম এ চালের। করোনার আগে দাম কম থাকলেও লাফিয়ে ২০০, ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বস্তা প্রতি বেড়ে যায়। গত মাসে এই তামড়ি চাল বস্তা ১৭৫০ টাকা থেকে মুল্য দাড়িয়েছে ১৮০০ টাকায়, এর পরেই সুমন স্বর্ণা চাল যা আগে ছিল বস্তা ২১০০ টাকা বেড়ে হয়েছে ২২৫০ টাকা বস্তা, জিরা চাল বস্তা আগে ছিল ২৩৫০ টাকা বেড়ে ২৪০০ টাকা এবং কাটারি জাতের চাল বস্তা ২৪০০ থেকে ২৪৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

চাল ব্যবসায়ী অয়াদুদ জামান জানান, চলতি সপ্তাহে ধানের বাজার মনে ২০ টাকা কমেছে। এজন্য আসা করা যাচ্ছে চালের দামও কিছুটা হলেও কমে আসবে বলে ধারনা তাঁর।

সুত্রে মতে, প্রতিটি দোকানে সরকারের নির্ধারণ করা মুল্য তালিকা থাকতে হবে। কোন দোকানেই নেই সেই মুল্য তালিকা। যার ফলে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দোহায় দিয়ে বাড়িয়ে দিয়েছে দাম। নির্ধারিত মুল্য তালিকা থাকলে অনেকাংশেই সিন্ডিকেট কমে আসতে পারে। মাঝে মধ্যে ভোক্তা অধিকারের কর্তা বাবুদের দেখা যায়। তাও বছরে দু এক বার। যেই কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ধান উৎপাদন করে দেশের খাদ্য ঘাটতি পুরোন করছেন। ওই কৃষক ন্যায্য মূল্য পায়না। হাত বদলের সঙ্গে সঙ্গে ফড়িয়া চক্ররা লাভ গুনে কয়েকগুণ। এজন্য প্রতিটি দোকানে নির্ধারিত মুল্য তালিকা ঝুলানো এবং নিয়োমিত হাট বাজার মনিটরিংয়ের জোরালো দাবি তুলেছেন ভোক্তারা। চালের সাথে সাথে প্রতিটি নিত্যপন্যেরও বাড়তি দাম। শুধু মাত্র সরকারী বে-সরকারী চাকুরিজিবিরা ভালো অবস্থানে রয়েছেন। কারন তাঁরা প্রতি মাসে পাচ্ছেন বেতন ভাতা। অন্যসব শ্রেণী পেশার মানুষের মাঝে রয়েছে অভাব। যার কারনেও এক কেন্দ্রিক হয়ে পড়ছেন মানুষরা।

তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন অতিশীঘ্রই বাজার ঘাটে অভিযান চালিয়ে নির্ধারিত মূল্য তালিকা এবং মনিটরিংয়ের বিষয়েও জোরালো ভুমিকা রাখা হবে। যারা সিন্ডিকেট করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।