বেসামরিক মৃত্যুর ঝুঁকি সত্ত্বেও ইয়েমেনে অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন ট্রাম্প

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ৫ দিন পর এক ডিনারে বসে ইয়েমেনে অভিযানের অনুমোদন দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড  ট্রাম্প। ১ ফেব্রুয়ারি নিউ ইয়র্ট টাইমস-এ প্রকাশিত এক খবর থেকে জানা যায়, ঝূঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও ট্রাম্প আল কায়দার বিরুদ্ধে ওই অভিযানের অনুমোদন দিয়েছিলেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম স্টেট.কম-এর এক খবর বলছে, এই সিদ্ধান্ত দিতে গোয়েন্দাদের পরামর্শ দেওয়ার প্রয়োজনটাও বোধ করেননি ট্রাম্প।  সবমিলে মার্কিন মদদে সৌদি আগ্রাসনের ধারাবাহিকতা রক্ষার পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন সদ্য দায়িত্ব নেওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আমলে নেননি বেসামরিক হত্যাকাণ্ডকে।

 
নিউ ইয়র্ক টাইমসের ১ ফেব্রুয়ারির প্রতিবেদনে বলা হয়েছিলে, ট্রাম্পের মুখ্য পরকিল্পনাকারী স্টিভ ব্যানন, জামাতা জ্যারেড কুশনার এবং হোয়াইট হাউসের শীর্ষ এক কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে ওই পরিকল্পনা অনুমোদন করেন। ঝুঁকির কথা জানলেও তা আমলে নেননি তারা। জানুয়ারির ২৫ তারিখ ওই রাত্রিকালিন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আর ২৮ জানুয়ারি আল কায়েদা প্রতিরোধের লক্ষ্যের কথা বলে সৌদি আরবকে সহায়তা দেওয়ার নামে মার্কিন সেনাবাহিনী ওই অভিযান চালায়। তালগোল পাকানো অভিযানটিতে ৯ শিশু, ৮ নারী ও এক মার্কিন সেনার মৃত্যু হয়েছে।

 

যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পরিচালিত বোমা অভিযানের কারণে ইয়েমেনের স্কুল, হাসপাতাল, অপরিহার্য অবকাঠামো ও প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলো পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তুপে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত অবরোধের কারণে খাদ্য ও মৌলিক পণ্যের বেচাকেনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ৯০ শতাংশ খাদ্য আমদানির ওপর নির্ভরশীল দেশটি এখন অনাহারী। ফলে ইয়েমেন দুর্ভিক্ষের কিনারে পৌঁছে গেছে বলে মন্তব্য জাতিসংঘের।

 

গত ৮ ফেব্রুয়ারি ইয়েমেনের সরকারি কর্মকর্তারা এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, তাদের ১ কোটি ৯০ লাখ নাগরিকের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। এই অঙ্ক দেশটির মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশের বেশি। তাছাড়া ৭৩ লাখ মানুষ জানে না তারা আবার কবে খেতে পারবে। সেদেশে অর্ধেকেরও বেশি চিকিৎসা সুবিধা বন্ধ হয়ে গেছে।

ইয়েমেনে ওয়েডিং হলের ধ্বংসস্তুপজাতিসংঘের প্রাক্তন কর্মকর্তা ও নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জেন এজিল্যান্ড বলেন, ‘বোম মানুষকে মেরে না ফেললেও অনাহারের কারণে ধীরে ধীরে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু এখন হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে ইয়েমেনে।’

 

২০১৫ সালের মার্চে ইয়েমেনে বোমা নিক্ষেপ শুরু করে সৌদি আরব। তাদেরকে সমর্থন জানিয়ে ট্রাম্পের অনুমোদন দেওয়া একটি অপারেশন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। আল কায়েদাকে উৎখাত করার পরিবর্তে মার্কিন সেনাদের অভিযানে উল্টো ইয়েমেনের স্থানীয় ক্লিনিক, মসজিদ ও স্কুলগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েকদিন আগে একটি ওয়েডিং হলের ধ্বংসাবশেষে ইয়েমেনের সশস্ত্র সদস্যদের হাঁটতে দেখা গেছে।

 

ট্রাম্পের অমানবিক সিদ্ধান্তের কারণে পশ্চিম এশিয়ার আরব দেশটির পরিস্থিতি কতোটা অবনতি হয়েছে তা কল্পনা করাও দুঃসাধ্য উল্লেখ করে দি ইন্টারসেপ্ট ওয়েবসাইটে একটি কলাম লিখেছেন মার্কিন সাংবাদিক অ্যালেক্স ইমন্স। তার দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দারিদ্রপীড়িত ইয়েমেনে দুই বছরে গৃহযুদ্ধে ১০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। এছাড়া উদ্বাস্তু হয়ে গেছে লাখ লাখ মানুষ।

ইয়েমেনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাএ ঘটনায় সংবাদ সংস্থা সিএনএন গত ১ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজনীতিবিদ ন্যানসি পেলোশির একটি উদ্ধৃতি দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে। ইয়েমেনের শরণার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, ‘আপনাদের পরিবার ভুগছে, কারণ আমাদের প্রেসিডেন্ট বেপরোয়া। পরিণাম কি হবে তা না ভেবেই তিনি যে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।’

 

এদিকে ট্রাম্পের লেজেগোবরে অভিযানের সমালোচনা করেছেন ইয়েমেনের ক্ষমতাচ্যুত সরকারপ্রধান আবদু রাব্বু মনসুর হাদি। নিউইয়র্ক টাইমস গত ৭ ফেব্রুয়ারি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, হাদির মন্ত্রীরা ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযান পরিচালনা থেকে নিজেদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। সৌদি সমর্থিত নেতা হাদির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের সরকার এ অভিযানকে খতিয়ে দেখছে।

 

সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সাতটি দেশের অভিবাসী প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এর মধ্যে ইয়েমেন অন্যতম। যদিও মার্কিন একটি আদালত এই নিষেধাজ্ঞাকে স্থগিত রেখেছে।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন