বৃষ্টির বাগড়াতেও শেষ মূহুর্তের কেনাকাটায় ভরপুর রাজশাহীর বাজার

শফিক আজম:

নতুন জামা আর প্রিয় মুখের হাসি সব কিছু ঈদ বাজারের কেনাকাটার মূল আকর্ষণ। পরিবারের ছোট সদস্যদের মধ্যে একদিকে যেমন কে কয়টা নিল-তা নিয়ে ঝুট ঝামেলা আর অন্যদিকে কে কত দামের পোশাক নিল তা নিয়ে মাথা ব্যথা।

ঈদুল ফিতরের বাজারের শুরু থেকেই নগরীর বিভিন্ন দোকান, বিপনী বিতান আর শোরুমগুলোতে ছিল কেনাকাটার ধুম। আর শেষ দিকে চলছে বাড়ির ব্যবহার্য জিনিসের কেনাকাটা। প্রথম হতে শেষ দিন পর্যন্ত কেমন ছিল এবারের ঈদুল ফিতরের বাজার? আসুন জেনে নিই ঈদের কেনাকাটায় বাজারগুলোর পারিপার্শিক অবস্থার কিছু সারাংশ। যদিও শেষ মূহুর্তে এসে বৃষ্টির বাগড়ায় ক্রেতাদের বাজারে আসতে অনেকটা বেগ পোহাতে হয়েছে বা বাজারে চলা-ফরা করতে গিয়েও বৃষ্টির বাধায় আটকতে থাকতে হয়েছে। তবুও বিক্রেতারা বলছেন বেচা-কেনা তাদের মোটামুটি ভালই হচ্ছে।

বৃষ্টির বাগড়া না থাকলে আরো ব্যাপক হতো গত দুইদিনে। আজ থেকে বাকি সময়টুকু সেই অবস্থা কেটে যাবে বলেও আশা করেন বিক্রেতারা।

রাজশাহীর বাজারে সাধারণত রমজানের শুরু থেকেই ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়। এবারো তার ব্যতিক্রম ছিল না। তবে এবারের কেনাকাটা শুরু হয় রোজার আগেই।সাধারণত মেয়েদের ছিটকাপড়ের দোকানগুলোতে গেলে ঈদ বাজারের পরিচয় পাওয়া যায়।  রোজার পঞ্চম দিন থেকে সাহেব বাজারের কাপড়পট্টির থান কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতা সমাগম দেখা যায়, ভীড় বাড়ে আট রমজানে। টেইলার্সগুলো ২০ রমজানের পরে আর অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দেয়। তাই থান কাপড় দিয়ে থ্রিপিস তৈরীতে নারীরা আগে ভাগেই বাজার সেরে ফেলেন।

দশ রমজানের পর ভালোভাবে জমে উঠে মেয়েদের পোশাকের বাজার। এবারে বিদেশী নামধারী পোশাকের সমারোহ না থাকলেও দেশী পোশাকগুলোকে বিভিন্ন নামে ক্রেতাদের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছিল। তবে মেয়েদের পোশাকে গত বছরের ফ্লোরটাচ, কিরণমালা, বউ কথা কউ আর ঝিলিকের তুলনায় দেশী বিদেশী ল্যাহেঙ্গা প্রাধান্য বেশি পেয়েছে।সে তুলনায় পোশাকের দামও ছিল বেশি।

শুরু থেকেই অন্যান্য জিনিসের চেয়ে জুতার দোকান গুলোতে ব্যাপক ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। শিশুদের কেনা কাটায় জুতা স্যান্ডেলের জন্য বিশেষ করে ব্রাণ্ডের শোরুম গুলোতে ছিল ভীঢ়।

ঈদে নিত্য পণ্যের মান ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে রাজশাহীতে মোবাইল কোর্ট ছিল তৎপর। প্রথম দিনেই রাজশাহী জেলা প্রশাসন থেকে বিভিন্ন বাজারের খুচরা ও পাইকারী দোকানগুলোতে অভিযান চালানো হয়। এতে নিন্মমানের খাবার এবং পণ্য পরিবেশনের জন্য বিভিন্ন প্র্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়।

ঈদের কেনাকাটায় নিরাপত্তার স্বার্থে রাজশাহীর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর থাকতে দেখা যায়। নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় গুলোতে ছিল পুলিশের উপস্থিতি। পাশাপাশি বাজার এলাকায় নাশকতা ঠেকাতে ছিল টহল পুলিশের অভিযান।

ঈদ উপলক্ষে রাজশাহীর বিভিন্ন বাজারে চাঁদাবজি করতে আসে হিজড়াদের দল। নানাভাবে অঙ্গভঙ্গি দেখিয়ে ক্রেতা বিক্রেতাদের কাছে বেপরোয়াভাবে অর্থেআদায় করে। এতে ব্যপক ভোগান্তিতে পড়েন দোকান মালিক এবং ক্রেতা সাধারন।

Rajshahi photo-03-07-16-7 copy

১৫ রমজানের পর নগরীর আরডিএ মার্কেটের ব্যবসা জমে উঠে। রাজশাহীর বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলা থেকে ক্রেতারা ঈদ বাজার করতে আসেন।অপরদিকে রাজশাহীতে অবস্থানরত অনেকেই দেশের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার আগে বাজার করতে আসেন। ভীড় বাড়ে জুয়েলারীর দোকান গুলোতেও।

ঈদ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানীগুলো বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করে। তাই রমজানের শুরু থেকেই জমজমাট ছিল মোবাইল বাজার ও বিভিন্ন ব্রাণ্ডের শোরুম গুলো।

Rajshahi photo-29-06-16-2 copy

ছেলেদের পোশাকের অধিক ভীড় বাড়ে ২০ রমজানের দিকে। নগরীর নিউমার্কেট, হকার্স মার্কেট, গনকপাড়া এবং আরডিএ মার্কেটে দেখা যায় তরুনদের ভীড়।ছেলেদের ঈদ বাজারে শুরুর দিকে পাঞ্জাবির চাহিদা ছিল কম তুলনামূলক বেশি ছিল শার্ট প্যান্ট এবং জুতোর দোকানে। তবে দিন বাড়ার সাথে সাথে পাঞ্জাবির দোকানগুলোতেও ক্রেতা বাড়তে থাকে।

ঈদ উপলক্ষ্যে এবারো নগরীর নিন্ম আয়ের মানুষদের জন্য গড়ে উঠেছ ফুটপাতের মার্কেট।নগরীর স্বল্প এবং নিন্ম আয়ের মানুষদের জন্য একমাত্র ভরসা এই ফুটপাত মার্কেটে ২০ রমজানের পরে কেনাকাটা বৃদ্ধি পেতে থাকে।মার্কেট চলবে ঈদের ভার পযন্ত। আর ফুটপাতের কোলঘেষে স্যাণ্ডেল পট্টিতে ক্রেতার দেখা মেলে সবসময়ই।

পোশাকের সাথেই দরকার সানগ্লাস। সব কেনাকাটা শেষে নগরীর নিউমার্কেট, গনকপাড়ার চশমার দোকানগুলোতে দেখা যায় ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীড়।আর ঘড়ির দোকানগুলোতেও ক্রেতাসমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো।

দর্জিপাড়া ছিল ব্যপক ব্যস্ততায়।বেশির ভাগ টেইলার্সে ২০ রমজানের পর পরই মেয়েদের পোশাকের অর্ডার নেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তাই বাড়তি অর্ডার না নিয়ে পূর্বের অর্ডার মোতাবেক পোশাক তৈরীতে মরিয়া হয়ে উঠেন তারা।চাপ ছিল ছেলেদের পাঞ্জাবি তৈরীর টেইলার্সেও।

এদিকে রমজানের শেষ দিকে বৃষ্টির বাগড়ায় বাজারের কেনাকাটায় ধস নেমে পড়ে। কয়েকদিনের টানা দুই তিন ঘন্টার বৃষ্টিপাতে বাজার ক্রেতাশূন্য হওয়ার উপক্রম। তবে বৃষ্টি থামলে ব্যবসায়ীদের জীবনে নেমে আসে স্বস্তি।

Rajshahi photo-03-07-16-10 copy

শেষ মূহুর্তে কেনাকাটায় আতর টুপি আর সুরমার দোকানে ভীড় জমান ক্রেতারা। ঈদের দিনে নামাজের প্রধান উপকরণ টুপি আর জায়নামাজের দোকানগুলোতে ছিল ক্রেতাদের ব্যপক উপস্থিতি।সাহেব বাজারের দোকান ছাড়াও নগরীর জিরোপয়েন্ট সংলগ্ন বড়মসজিদের পাশে ফুটপাতে বসে অস্থায়ী কিছু টুপির দোকান। সেখানে পাওয়া যায় বিশেষ বিশেষ আতর, জায়নামাজ আর পায়জামা।

মুসলমানদের প্রধান উৎসব এই ঈদুল ফিতরের কেনাকাটায় স্বপরিবারে দূরদুরান্ত থেকে ক্রেতারা আসতে থাকেন। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে এবং ধনীগরীব নির্বিশেষে সকলের মুখে হাসি ফুটিয়ে শেষ হচ্ছে এবারের ঈদের কেনাকাটা।

 

স/আর