বিপন্ন পঙ্খিরাজ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: 

কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য, ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাটসহ প্রভাবশালীদের দখলের কারণে এক সময়ের খরস্রোতা সোনারগাঁর পঙ্খিরাজ খালটি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। অথচ এ খালের তীরঘেঁষেই গড়ে উঠেছিল প্রাচীন বাংলার বিশ্বখ্যাত জনপদ পানাম নগরী। নগরীর ব্যবসা-বাণিজ্যের একমাত্র পানিপথ ও সুরক্ষা দেয়াল ছিল পঙ্খিরাজ।

একসময় সোনারগাঁ, আড়াইহাজার, রূপগঞ্জসহ অনেক গ্রামের মানুষের নৌকাযোগে চলাচল ও পণ্যসামগ্রী আনা-নেওয়ার একমাত্র ভরসা ছিল এটি। এ খালের পানি ব্যবহার করে চাষাবাদ করত সোনারগাঁর কৃষকরা। অথচ আজ দখলদারদের দৌরাত্ম্যে মৃতপ্রায় পঙ্খিরাজ।

বর্তমানে চৈতী কম্পোজিট নামের একটি কারখানার দূষিত বর্জ্য এ খাল দিয়ে নিষ্কাশন করা হয়। এতে খালের পানি নষ্ট হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। উপজেলার পৌরসভার মেনিখালী নদ ও পঙ্খিরাজ খালের সংযোগস্থলে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার প্রভাবশালী দখলদাররা পঙ্খিরাজ খালের পশ্চিমপাশে বালু ভরাট ও পূর্বপাশে আরসিসি দেয়াল দিয়ে পানিপ্রবাহ প্রায় বন্ধ করে রেখেছে। দখলের কারণে সরু হয়ে যাওয়া খাল দিয়ে পানি সরতে না পারায় ১০ গ্রামে জলাবদ্ধতাসহ নৌচলাচল বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, খালটি অবমুক্ত না করলে পৌরবাসী পরিবেশদূষণের শিকার হবে। ভট্টপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছন দিকে খাল দখল করে বড় বড় বাড়ি করা হয়েছে। পুরো খালটি বর্তমানে দখলদারের লোলুপ দৃষ্টিতে রয়েছে। তা ছাড়া বাগমুছা ঋষিপাড়ায় খালের ওপর অপরিকল্পিতভাবে একটি ছোট্ট কালভার্ট তৈরি করা হয়েছে। ফলে কালভার্টের নিচে ময়লা জমে পানি চলাচল প্রায় বন্ধ রয়েছে।

ইতিহাসবিদদের মতে, বিশ্বনন্দিত মসলিনের শহর সোনারগাঁ একসময় একটি ব্যস্ত বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিল। পঙ্খিরাজের তীরে গড়ে ওঠা অট্টালিকা, সরাইখানা, মসজিদ-মন্দির, টাঁকশাল, দরবারকক্ষ ও গুপ্তপথ এখনো এ খালের দুরন্ত প্রবাহের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনেকে একে মসলিন কেনাবেচার প্রধান বন্দর বলেও আখ্যায়িত করেছে। সোনারগাঁর সমৃদ্ধি ও বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষায় খালটি বর্ম হিসেবে কাজ করেছে। চমৎকার স্থাপত্যশৈলীর পানাম নগরী তৈরি করতে কাঁচামালসহ আনুষঙ্গিক মালপত্র এ খাল দিয়ে এসেছে।

ইবনে বতুতা (১৩৪৬) সোনারগাঁকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী রূপে বর্ণনা করেন। চীন, ইন্দোনেশিয়া (জাভা) ও মালয় দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে এর সরাসরি বাণিজ্যিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। এ খাল দিয়েই চলত সেই বাণিজ্যযাত্রা।

পঙ্খিরাজ খালটি উদ্ধারের ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম জানান, নকশা অনুযায়ী অবস্থান ও আয়তন নির্ণয় করে পঙ্খিরাজ খালকে দখলমুক্ত করতে শিগগিরই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।