বিএনপির কাছে ওবায়দুল কাদেরের তিন প্রশ্ন

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: 

বিএনপির প্রতি তিনটি প্রশ্নের উত্তর চেয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী নির্বাচনে ভোট চাইতে গেলে জাতির কাছে বিএনপিকে তিন প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। তিনটি প্রশ্নের উত্তর আমরাও জানতে চাই।

শনিবার বিকালে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কাছে তিনি তিনটি প্রশ্ন করেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির কাছে আমি তিনটি প্রশ্নের উত্তর চাই। প্রথম প্রশ্নটা হল, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর হত্যাকারীদের বিচারের পথ রুদ্ধ করতে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হল কেন? এরপর এ অধ্যাদেশ সংবিধানের ৫ম সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কি ব্যাখ্যা জাতির সামনে আছে বিএনপির। খুনিদের রক্ষা করতে অধ্যাদেশ জারি আবার সেটিকে আইনি স্বীকৃতি দিতে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হল কোন যুক্তিতে এবং কেন? এর ব্যখ্যা আমরা বিএনপির কাছে জানতে চাই।

দ্বিতীয় প্রশ্ন হল, বিনা পয়সায় সাবমেরিন ক্যাবল প্রত্যাখ্যান করার মাধ্যমে দেশকে পিছিয়ে দেয়ার যে কাজটি তারা করেছেন এর ব্যাখ্যা কি?

তৃতীয় প্রশ্ন হল, খালেদা জিয়ার রায়ের ৮ দিন আগে তড়িঘড়ি করে বিএনপির গঠনতন্ত্র থেকে ৭ ধারা কেন বাতিল করা হল? এর ব্যাখ্যা আমরা জানতে চাই।

আন্দোলনের ব্যর্থতার জন্য বিএনপির সব নেতার পদত্যগ করা উচিত জানিয়ে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ১০ বছরে বিএনপি অনেক আন্দোলনের হুমকি দিয়ে একদিনও চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি। তাদের আন্দোলনের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেছে বিএনপি, এমন প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রথম বিষয়টি সংবিধানসম্মত নয়। আর দ্বিতীয় বিষয়টি আইনি বিষয়। তারা মামলা মোকাবেলা করে আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনতে পারলে, ওয়েলকাম।

তিনি বলেন, সরকার যদি বাধা দিত, সরকার যদি বিচার বিভাগকে কোনো প্রকারে প্রভাবিত করতে চাইত তাহলে খালেদা জিয়া এতগুলো মামলা থেকে জামিন পেতেন না। প্রায় ৩০টি মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন। সরকার হস্তক্ষেপ করলে কিভাবে এসব মামলা থেকে তিনি জামিন পেলেন। সেই মামলার জন্যও আপনারা আইনি লড়াইয়ে যান। গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, সরকারের পক্ষ থেকে মামলার ব্যাপারে খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ হবে না।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এত ব্যর্থ বিরোধী দল বাংলাদেশে আর আসেনি। এ ব্যর্থতার জন্য বিএনপির টপ টু বটম সব নেতার পদত্যাগ করা উচিত।

সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ বা মোশাররফ হোসেন রাস্তায় দাঁড়িয়ে কয়েকজনকে নিয়ে মাইক দিয়ে আওয়াজ দিলেই কী সরকার হটে যাবে?

তিনি বলেন, এ সরকারের গণভিত খুবই শক্তিশালী। এ সরকারের গণভিত বাংলাদেশের মাটির অনেক গভীরে প্রোথিত। আমাদের শিকড় অনেক গভীরে। আমরা হঠাৎ করে জনসমর্থহীনভাবে সরকারে আসিনি। এটা যেন কেউ ভুলে না যায়।

‘আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়’ মওদুদ আহমদের এমন বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, মওদুদ আহমদের কাছ থেকে কি আইনি প্রক্রিয়া শিখতে হবে? তিনি এমনও বলেছেন সংবিধানের বাইরে গিয়েও নির্বাচনের ব্যবস্থা করা যায়। তারা যেসব দাবি সংবিধানের বাইরে গিয়ে মেনে নেয়ার দাবি করেছেন। যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে, আইন লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় আসে এটা তাদের পক্ষে বলা সম্ভব। মওদুদ নিজেই আইন লঙ্ঘন করেন, তিনি মৃত ব্যক্তির নামে ভুয়া সার্টিফিকেট আদালতে জমা দিয়ে ৪০ বছরের দখল করা বাড়িটা রক্ষা করতে পারেননি। যিনি অপচেষ্টার দালাল। তার পক্ষে এ ধরনের দাবি আমরা সেভাবে নিচ্ছি না।

‘খালেদা জিয়াকে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করা হবে’ বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকারের ১০ বছর হয়ে গেল। এ ১০ বছরে বারবার তারা আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। সবই সর্বাত্মক আন্দোলনের ডাক, ছোটখাটো আন্দোলনের ডাক নয়। খালেদা জিয়াও সর্বাত্মক আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। এর সঙ্গে বাস্তবতা কতটুকু এটা আপনারা জানেন। ১০ বছরে একটা দিনও সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার মতো কোনো আন্দোলন বিএনপি করতে পারেনি। আমরা চাপ অনুভব করেছি এমন কোনো আন্দোলন বিএনপি করতে পারেনি।

‘জনগণের রায়ের ওপর আস্থা নেই বলে সরকার ইভিএমে নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র করছে’ বিএনপির এমন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ইভিএম আমাদের নতুন কোনো দাবি নয়। এটা সর্বশেষ প্রযুক্তি। ভারতে এটা নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। আম আদমির অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছিলেন এতে টেম্পারিংয়ের সুযোগ আছে। অনেক বিতর্ক আলাপ-আলোচনার পর শেষ পর্যন্ত অরবিন্দ কেজরিওয়াল অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ইভিএম নিয়ে বিএনপির কেন ভয় সেটা আমরা বুঝে ফেলেছি। বিএনপির ভয় হচ্ছে, ইভিএমে ভোট হলে বিএনপি আর কেন্দ্র দখলের পুরনো অভিযোগ আনতে পারবে না। ভোট জালিয়াতির কথা বলতে পারবে না। ভোট কারচুপির কথা বলতে পারবে না। বিএনপি আর পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়ার পুরনো অভিযোগ আনতে পারবে না। এসব কারণেই বিএনপি ইভিএম চায় না।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, আইন বিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম, ত্রাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।