বাস বন্ধ: তৃতীয় দিনেও রাজশাহীতে দুর্ভোগ চরমে

নিজস্ব প্রতিবেদক:


তৃতীয় দিনের মতো জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ধর্মঘট পালন করেছে রাজশাহীর পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। এনিয়ে যাত্রীদের পড়তে হয়েছে ভোগান্তিতে। ছোট যানবাহনে চেপে আশে-পাশের জেলা উপজেলায় গেলেও গুনতে হয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া। তবে উপচে পড়া ভিড় ছিল রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে।

বাস বন্ধের কারণে সারাদিন রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে ছিল যাত্রীতে ঠাসা। কাউন্টার থেকে শুরু করে প্লাটর্ফম ছিল যাত্রীতে ভর্তি। স্টেশনে যাওয়া-আশা করা ট্রেনগুলো ছিল যাত্রীতে পূর্ণ। স্টেশনে ট্রেন এসে থামার পরেই যাত্রীতে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন রুটের আন্তঃনগর ট্রেন।

আরেক যাত্রী মিনহাজ রহমান জানান, ‘বেশ কয়েকদিন থেকে ছোট মেয়ে অসুস্থ। ছুটির অভাবে যেতে পারিনি। ছুটি পেলাম তো যানবাহনের অভাবে যেতে পারছি না। ওই দিকে স্ত্রী একা সন্তানকে সামলাতে পারছে না। ছুটি যখন পেয়েছি ঢাকায় যাব। টিকিট পায়নি। স্ট্যান্ডিং টিকিটের চিন্তাভাবনা করছি। না পেলেও যাব।’

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার জাহিদুল ইসলাম বলেন, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অধীনে মোট ১৩ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। এছাড়া মেইল ট্রেন চলে তিনজোড়া এবং কমিউটর ট্রেন চলে দুই জোড়া। এর মধ্যে শুক্রবার (৫ নভেম্বর) রাজশাহী-ঢাকা রুটে চলাচলরত বিরতিহীন ট্রেন বনলতা এক্সপ্রেসের সাপ্তাহিক বন্ধ ছিল। আর রোববার (৭ নভেম্বর) আন্তঃনগর সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে। বাস বন্ধ। ট্রেন চালু আছে। তাই যাত্রীরা মনে করেছেন রাজশাহীতে আসলে একটা ব্যবস্থা হবে গন্তেব্যে যাওয়ার। ফলে যাত্রীরা রেলওয়ে স্টেশনে ভিড় করছে।

অন্যদিকে, সকালে নগরীর ভদ্রা, তালাইমারী, কাটাখালী, রেলগেট গোরহাঙ্গা এলাকায় যাত্রীদের যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। তারা সর্বশেষ অটোরিক্সা ও সিএনজিতে যাত্রা করেছেন অতিরিক্ত ভাড়ায়। এসময় সবেচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে বৃদ্ধ ও নারী-শিশুদের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে বা বসে থাকতে দেখা গেছে তাদের।

যাত্রী মোহনপুরের রায়হান জানান, ঢাকার একটি কোম্পানিতে চাকরি করি। কোনোভাবে বুঝিয়ে বৃহস্পতিবার-শুক্রবার ছুটি নিয়েছিলাম। ছুটি শেষ এখনও ঢাকায় যেতে পারিনি। অফিস থেকে ফোন দিয়ে বকাবকি করছে।’ তিনি বলেন, ‘বাস বন্ধ। ট্রেনের টিকিট নেই। সিএনজিতে এতো পথ যাওয়া সম্ভব না। মাইক্রোবাস ভাড়া করার মতো সামর্থ নেই। কী করবো বুঝে উঠতে পারছি না। ট্রেনে ঝুলে হলেও ঢাকা যেতে হবে আমাকে।’

বিকেলে রাজশাহী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে- কিছু কিছু বাস কাউন্টার খোলা ছিল। তবে কাউন্টারে কোনো টিকিট বিক্রি হয়নি। যাত্রীরা কাউন্টারে এসে ফিরে গেছেন। যাত্রীদের কেউ কেউ টিকিট মাস্টারের কাছে জানার চেষ্টা করেছেন, বাস ছাড়ার বিষয়ে। তবে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি কাউন্টার থেকে।

মিজানুর ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, ‘তেলের দাম বেড়েছে। ভাড়া বাড়ালেই তো হয়। অযথা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করেছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। বাস যে ভাবেই চলছে, সেভাবেই চলুক। এর মধ্যে সরকারের সাথে বসে আলোচনার মাধ্যমে ভাড়া বাড়ালেই হোত। তা না করে বাস বন্ধ করে মানুষকে জিম্মি করা হয়েছে।

রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় ভালো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। বলা যাচ্ছে না; কবে থেকে বাস চলবে। তবে সিদ্ধান্ত আসলে আপনাদের (গণমাধ্যম কর্মী) জানানো হবে।’

স/আ