বাঘা পৌর নির্বাচনকে ঘিরে রমরমা হয়ে উঠেছে চা ব্যবসা

আমানুল হক আমান:
নির্বাচনের আগে রাত নয়টাতেই ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ত চায়ের দোকান। এখন চলছে ভোটের আমেজ। কনকনে শীতে ভোটাভুটির এই আড্ডায় অন্তত এক কাপ চা কিংবা কফি না হলে তো জমে না। তাই বিক্রেতারা এখন দিন-রাত তুমুল ব্যস্ত। বিশ্রামের সময় নেই তাদের। বিশেষ করে পৌর শহরের বিভিন্ন প্রান্তের মোড়ে মোড়ে ফুটপাতের অস্থায়ী দোকানগুলোতে প্রার্থী থেকে শুরু করে ভোটার, কর্মীরা দিন-রাত আড্ডা দিচ্ছেন, গনসংযোগের ফাঁকে ফাঁকে। তাই এসব দোকানে বেড়ে গেছে বিক্রি। আর এখন নির্বাচনী হৈচৈ এ চা বিক্রি করতে করতেই রাত প্রায় শেষ হয়ে যায়। তবে সদরের দোকানের তুলনায় বিক্রি বেড়েছে পাড়া মহল্লার দোকানগুলোতে। ফুটপাতের এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের এখন পোয়াবারো। বাঘা পৌর নির্বাচন সামনে রেখে এই চিত্র চা বিক্রেতাদের ।

রাত সাড়ে ১০ টায় বাঘা পৌর মোড়ের একটু উত্তরে বাদশা কফি হাউসে দেখা গেল মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্ম-সমর্থকদের খন্ড খন্ড আড্ডা। ভালো পরিবেশ ও গুনগত মানের কপিসহ চা পাওয়া যায় এখানে। তাই অনেক ব্যস্ততার মাঝে ছুটে আসেন কপি কিংবা চা প্রেমিরা।

কফি হাউসের মালিক বাদশা সিল্কসিটি নিউজকে জানান, সপ্তাহ খানেক আগে বিক্রির পরিমান ছিল তুলনামুলক কম। ভোটের দিন এগিয়ে আসার সাথে সাথে বিক্রিও বাড়ছে। তবে পাড়া মহল্লায় দোকান গড়ে তুলায় সদরে বিক্রি হচ্ছে কম।

শুধু চা-কফি বিক্রেতাই নয়, একইভাবে বাদাম বিক্রেতা, ফুচকাওয়ালা, বারো ভাজার দোকান, চিতই পিঠা, ভাপা পিঠা ও কালাই রুটি ব্যবসায়ীরাও নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন ভোটের আমেজে। মোড়ের এই দোকানগুলোতে আড্ডা জমছে ভোটার, কর্মী আর সমর্থকদের। এজন্য সব খবরই পাওয়া যায় তাদের কাছে। কোন প্রার্থী কোন দিকে প্রচারণা করছেন, ভোটের মাঠে কে কি বলছেন, কোন পরিবারের ভোটটি কোন দিকে যাবে-এদের কাছেই জেনে নেন আরেক প্রার্থীর কর্মীরা। অনেকে এসব খবর দিয়ে ভালো বকশিশও পাচ্ছেন।

থানা মোড়ের পলান প্রামানিক এখন প্রতিদিন প্রায় হাজার কাপ চা বিক্রি করছেন। তার চেয়ে বেশি বিক্রি করছেন বাসষ্ট্যান্ড মোড়ের মাইনুল ইসলাম।

বাসষ্ট্যান্ড মোড়ের মাইনুল ইসলাম জানান, ‘আগে বিক্রি হতো ৫০০ কাপ। এখন দ্বিগুণ আয় বেড়েছে। পৌর শহরের মাজার গেটের ব্যবসায়ী সালাম জানান, ভোটের হাওয়ায় আগের তুলনায় বিক্রি বেড়েছে।

সয়াবিন তেলে পিয়াজ, মরিচ, আদা, রসুনের ভুনার সঙ্গে চানাচুর, বুট, মুড়ি আর মসলা মিশিয়ে বারো ভাজা বিক্রি করছেন সাইদুল। বাড়িতে বউ, জামাই, মেয়ে আর এক নাতি। জামাই রাজ মিস্ত্রির কাজ করলেও এখন ভোটের সময় আরেকটি বারো ভাজার দোকান করেছেন। ভোটের সময় কেনাবেচা বেশি। প্রতিদিন বিক্রি এক হাজার ২০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা। খরচ ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা।

ব্যবসা কেমন হচ্ছে- জিজ্ঞাসা করলে আরেক বারো ভাজা বিক্রেতা আবদুর রহিম হাসতে হাসতে জানান, ‘ভোটের সময় বিক্রি বেড়েছে।’

কালাই রুটির দোকান দিয়েছেন মনিরা বেগম। কাঠের তৈরি পিড়ার ওপর বসে মাটির তিনটি চুলাই রুটি বানাচ্ছেন তিনি। একা একা সামলাতে না পেরে স্বামীর সাহায্য নিচ্ছেন। গরম গরম রুটির সঙ্গে ক্রেতাদের তিনি দেন বিনামূল্যে ধনে ভর্তা, শুঁটকি ভর্তা, আর পেঁয়াজ মরিচের ভর্তা। ক্রেতাদের যার যেটা ইচ্ছা নিয়ে খাচ্ছেন আর ভোটের গল্প চলছেই। ক্রেতা ভিড়ে রুটি দিয়ে শেষ করতে পারছেন না তিনি। কিন্তু ক্রেতাদের অপেক্ষায় কোনো বিরক্তি নেই। কারণ ভোটের আলাপ চলছে।

মনিরা বেগম বলেন, ‘এখন ব্যবসা ভালো হচ্ছে। কোন কোনদিন রাত ১২টা পর্যন্ত ক্রেতা পাওয়া যায়। ভোট শেষ হইলে আবার কমে যাবে ব্যবসা।

বাঘা পৌর নির্বাচন অনষ্ঠিত হবে আগামী ২৮ ডিসেম্বর। এর মধ্যে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে লড়াই হবে। তবে গণসংযোগে কোন প্রার্থীই পিছিয়ে নেই। তারা রাতদিন গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে কে বিজয়ী হবে কেউ সঠিক হিসাব কষতে পারছে না। এই পৌর সভায় আ.লীগের প্রার্থী আক্কাছ আলী ও বিএনপির আবদুর রাজ্জাক প্রার্থী ছাড়া অন্য কোন দলের প্রার্থী নেই। ফলে এই দুই দলের মধ্যেই হাড্ডা হাড্ডি লগাই তবে। এছাড়া ৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ৫৩ ও সংরসিক্ষত নারী কাউন্সিল প্রার্থী ১৮ জন। পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৭৮৯। এরমধ্যে পরুষ ভোটার ১৪ হাজার ১৭ ও নারী ভোটার ১৩ হাজার ৭৭২।
স/শ