বাগমারায় পেঁয়াজ উঠতে এখন সময়ের ব্যাপার, ফুলকার দামে খুশি কৃষক

বাগমারা প্রতিনিধি:

রাজশাহীর বাগমারায় রবি মওসুমের পেঁয়াজ উঠতে এখন সময়ের ব্যাপার। আর মাত্র কয়েকদিন পর আমদানী হবে এলাকার তাহেরপুরী লাইলা পেঁয়াজ। অনেকে বেশী দামের আশায় আগাম অপরিপক্ক পেঁয়াজ উত্তোলন করলেও মুল পেঁয়াজ আর কয়েক দিনের মধ্যে উঠতে শুরু করবে। তবে পেঁয়াজ উঠতে দেরী হলেও ব্যাপক হারে বাজারে পেঁয়াজের ফুলকা বেচাকেনা চলছে।

এলাকার চেয়ে ঢাকার বাজারে ফুলকার দাম বেশী হবার কারণে ফুলকা ব্যবসায়ীরা কিনতে ভিড় করছে। এতে চাষীরা ব্যাপক হারে পেঁয়াজের ফুলকা তুলে বাজারজাত করছেন। পেঁয়াজ বাদে বাড়তি ফুলকার দামে পেঁয়াজচাষীরা বেজায় খুশি।

জানা যায়, বাগমারার তাহেরপুরের পেঁয়াজ দেশ জুড়ে সুনাম রয়েছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এই অঞ্চলের পেঁয়াজ দেশের বাইরে বেশ কদর। এলাকার কৃষকরা দুই মওসুমে পেঁয়াজচাষ করে। রবি মওসুমের পেঁয়াজকে লাইলা ও সেচা পেঁয়াজ নামে খ্যাত। যা কার্তিক মাসে লাগানো পেঁয়াজ লাইলা যা ছোট পেঁয়াজ অথবা বড় পেঁয়াজ কেটে রোপণ করা হয়। এছাড়া দানা বীজ বা বীজ দানা ফেলে ওই চারা গাছ রোপণ করা যায়। বীজ বা রোপণ চারার পেঁয়াজকে আল পেঁয়াজ নামে খ্যাত এই পেঁয়াজ সাধারণত কার্তিকের শেষে আগ্রাণ-পোষ মাসে চাষ করা হয়।

বাগমারা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মওসুমে উপজেলার ১৬ টি ইউনিয়ন ও দু’টি পৌর এলাকায় ৪ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতি মধ্যে আগাম চাষের পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। সময়ের আগে রোপণকৃত হবার কারণে পেঁয়াজের ফলন কম হয়েছে। পুরাদমে পেঁয়াজ উঠতে ১ থেকে দেড় সপ্তাহ লাগবে। গত কয়েক বছরে পেঁয়াজ উঠার সময় দাম কম পেয়ে এবারেও সেই শঙ্কায় থাকলেও তা আর নেই। দেশে যথেষ্ট পেঁয়াজের ঘাটতিতে এবারে পুষিয়ে নিবে তারা এমন আশা করছেন।

বাসুপাড়া ইউনিয়নের বালানগর গ্রামের পেঁয়াজচাষি আব্দুল মান্নান জানান, গত বছর তিনি এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজেরচাষ করেছিলেন। এতে তার খরচ হয়েছিলো ২০ হাজার টাকা। কিন্তু এর বিপরীতে তিনি তেমন লাভ পাননি। এবারে বাজারে পেঁয়াজের চাহিদা থাকায় ৪ মন পরিমান বীজ পেঁয়াজ লাগিয়েছেন। পেঁয়াজের দাম হিসেবে ১৬ হাজার ও অন্যান্য খরচ দিয়ে ৩৫/৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

একই ভাবে গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম, আব্দুস সামাদসহ কয়েক জন পেঁয়াজচাষি জানান, পেঁয়াজের দাম ভালো দেখে বেশী খরচ করে রোপণ করেছেন। প্রতি বারের ন্যায় এবারে দাম নিয়ে শঙ্কা নেই। বেশী দামের আশায় পরিচর্যায় ব্যস্ত তারা। চাষিদের দাবি বাজার ব্যবস্থা বৈষম্য থাকায় কৃষকদের দুরবস্থা। যখন ফসল উঠে তখন দাম কম। ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত না থাকায় গত বছর মওসুমে পেঁয়াজ বিক্রি না করতে পেরে তারা রাস্তায় ফেলে খালি হাতে বাড়ি ফিরেছে। মওসুমের সার, বীজ, কীটনাশকসহ মহাজনদের টাকা সুদ দিতে জমির ফসল বিক্রি করে নিঃশ্ব হয়ে পড়ে তারা। এবার পেঁয়াজচাষিদের বেশী খরচ পড়লেও বেশি লাভবান হবেন বলে অনেক কৃষকই মন্তব্য করেছেন। এছাড়া বাড়তি আয়ে পেঁয়াজের ফুলকা বিক্রি করে তারা বেশ আয় করছেন। বাজারে প্রতি কেজি ফুলকা ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি চলছে। পেঁয়াজের উপরে আগাছার মত ফুলকা। এটা থাকলে পেঁয়াজ বাড়তি কম হয়। এমনি ফুলকা ভেঙ্গে ফেলতে হতো। আর এর মধ্যে বাজারে এর চাহিদা থাকায় বেশী দামে বিক্রি করতে পারায় পেঁয়াজ চাষীরা বেশ খুশি।

বালানগর গ্রামের পেঁয়াজচাষী জানান, বিঘায় তার প্রায় প্রতি সপ্তাহে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকার ফুলকা বিক্রি চলছে। যা বিগত বছর গুলোতে পিঁয়াজের দাম মিলেনি। বাড়তি আয়ে তিনি বেশ খুশি বলে জানান।

এদিকে বাগমারার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিবুর রহমান বলেন, উপজেলার অনেক কৃষক গত বছর পেঁয়াজের দাম না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। বাজারে পেঁয়াজের অস্থিরতায় দেশে যখন পেঁয়াজের হাহাকার এসুযোগ হাতছাড়া না করতে বাগমারার কৃষকরা পেঁয়াজচাষে ঝুঁকে পড়েছেন। এবারে দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন বাজারে এ পেঁয়াজ সরবরাহ করে দেশের ঘাটতি পেঁয়াজ সামলায়ে নিতে এলাকার চাষিরা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

স/অ