বাগমারায় আলু ক্ষেতে লেট ব্রাইট রোগের আক্রমন, ফলন বিপর্যয়ের আশংকা

বাগমারা প্রতিনিধি:
রাজশাহীর বাগমারায় রবি মওসুমের এলাকার প্রধান অর্থকারী ফসল আলু গাছে মড়কে কৃষকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। অন্যান্য ফসলের চেয়ে এই এলাকায় আলু বেশী পরিমান হওয়ায় এই অঞ্চলের মওসুমের জনপ্রিয় ফসল আলু।

বর্তমানে আলুচাষের এক দেড় মাসে আলুর গাছ মাঠ ভরে উঠেছে। তবে হঠাৎ ঘনকুয়াশায় ও মাঝে মধ্যে কয়েক দফা ঝিরি ঝিরি বৃষ্টিতে আলুর গাছে মড়ক লেগেছে আলুর গাছ পচন থেকে রক্ষা পেতে এলাকার কৃষকরা গাছে ছত্রানাশক স্প্রে করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। আলুর গাছ ৯০ দিনে টিকাতে পারলেই আশানুরুপ ফলন মিলবে। এতে করে আবারো অতিরিক্ত গাছে ছত্রানাশক ঔষুধ স্প্রে করতে হচ্ছে। গাছ টিকাতে বিভিন্ন ধরনের বালাইনাশক স্প্রে করে কোন লাভ হচ্ছে না এমনটি নিয়ে এলাকার কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

জানা গেছে, বাগমারা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় আলুচাষের মাটি উপযোগী। উর্ব্বর মাটি ও অনুকূল আবহাওয়ায় এলাকায় প্রচুর পরিমানে আলু চাষ হয়। বিগত বছর গুলোতে আলুর ভালো ফলন ও দাম পেয়ে বেশী লাভের আসায় অধিক আলু চাষে কৃষকরা ঝুঁকে। প্রতিবারের ন্যায় এবারে মাঠে মাঠে আলুর তরতজা গাছে মাঠ ভরে গেছে। ইতি মধ্যে আগাম জাতের আলু উত্তোলন শুরু হয়েছে। বর্তমানে বাজারে মন ৫০০/- টাকা মন দরে কেজিতে ১৩/- টাকা কেজি আলু বিক্রি চলছে। অগ্রহায়ণ মাসে আলু বীজ রোপণের পর বিভিন্ন পর্যায়ে সার কীটনাশক প্রয়োগ ও সেচ দেওয়ার পর আলু গাছগুলো তরতাজায় আলুচাষিরা বেজায় খুশি। আলু গাছে মাঠ ভরে পরিপুন্ন মাত্র ২০/২৫ দিন পরে আলু উত্তোলন শুরু হবার কথা।

এরই মধ্যে মাঘ মাসের মাঝে হতে ঘন কুয়াশা আর শৈত্য প্রবাহ শুরু হয়। শেষ পর্যায়ে গাছে লেট ব্রাইটের আক্রমনে গাছে পচন দেখা দিয়েছে। কৃষকরা লেট ব্রাইটের আক্রমন থেকে আলু গাছকে রক্ষা করতে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ মত ঔষুধ প্রয়োগ ছাড়াও বিভিন্ন কীটনাশক কোম্পানীর স্থানীয় এজেন্ট ও কীটনাশক ব্যবসায়ীদের পরামর্শ মোতাবেক বিভিন্ন ঔষুধ প্রয়োগ করে কিছুতেই গাছ টিকাতে পারছেন না। অধিকাংশ আলুচাষির ক্ষেত নষ্ট হয়ে পড়েছে। এতে করে আলুর মারাত্মত ফলন বিপর্য ঘটতে পারে।

বালানগর, গোপালপুর, বালিয়া, মচমইল, নন্দনপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আলুর গাছের পাতা পচনের সাথে আলুর গাছের গোড়া ও ডাল পালা পচে নষ্ট হয়ে পড়ছে। আগাম আলুর দাম ভালো পেলেও অধিকাংশ জমির আলু এখনও মাঠে। গাছ টিকলে ভালো আশা করা যায়। এছাড়া জমিতে মড়ক লাগায় উৎপাদন কম হবে এমন শঙ্কা করছেন আলুচাষিরা। এতে করে কমে উৎপাদনে খরচ জুটবে না।

মোহম্মাদপুর গ্রামের আলুচাষি হেলাল উদ্দিন জানান, অতিরিক্ত দামে সার ঔষুুধ, শ্রমিকসহ বিভিন্ন উপকরন ক্রয়ে আলুচাষে বেশী খরচ পড়েছে। যে হারে জমিতে আলুচাষে খরচ হচ্ছে সে হারে মূল্য কয়েক বছর থেকে মিলছে না।

বালানগর গ্রামের আলুচাষি দুলাল হোসেন জানান, জমির আলু এখন মাঠে মাঠে এক থেকে দেড় ফুট আকারের আলুর গাছ বড় হয়েছে। পুরো আলু উঠতে এখনো ২০/২৫ দিন সময় লাগবে। পুরা আলুর সময়ে মড়ক দেখা দিয়েছে ঔষুধ স্প্রে করে কোন কাজ হচ্ছে না। তার মত সগুনা, দেউলিয়া, গোপালপুরসহ এলাকার একাধিক গ্রামের কৃষকরা আলুর গাছ টিকাতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রাজিবুর রহমান জানান, আলু চাষাবাদের শুরুতে অতি মাত্রায় ইউরিয়া সারের ব্যবহার ও ঘনকুয়াশাসহ আবহাওয়াগত কারণে সাধারণত আলু ক্ষেতে লেট ব্রাইট রোগের আক্রমন হয়ে থাকে।

তিনি উপজেলা ব্যাপি বিভিন্ন আলু ক্ষেতে লেটব্রইটের আক্রমন ছড়িয়ে পড়ার কথা স্বীকার করে জানান, এ থেকে পরিত্রানের উপায় ও করনীয় সম্পর্কে আমার প্রতিনিয়ত কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছি। এসব ক্ষেত্রে তিনি কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, লেটব্রাইট আক্রান্ত জমিতে প্রথম পর্যায়ে মেটালক্রিন পরবর্তিতে মানকোজেব এবং শেষে আবার মেটালক্রিন ব্যবহার করতে হবে। এসব ব্যবহারের নিয়ম প্যাকেটের গায়ে সুন্দর করে লিখা আছে। এছাড়া বেশি পচন দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে ৬ গ্রাম পটাশ সার এবং ৬ গ্রাম থিয়োভিট মিছিয়ে আলুর গাছে স্প্রে করতে হবে। এতে আলুর গাছে শক্তি ফিরেও আসবে বলে তিনি দাবি করেন।

স/অ