বর্ষবরণে রাজশাহীর পদ্মা পাড়ে নামে মানুষের ঢল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

এসো হে বৈশাখ, এসো এসো…রমনার বটমূলে কথা হবে প্রাণ খুলে। বিগত বছরের অপ্রাপ্তির হিসাব চুকিয়ে বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে বিভিন্ন গানে আর দিনব্যাপী সাদা-লাল রঙয়ের আলোকচ্ছটায় বর্ণিল সাজে সেজে ওঠে রাজশাহী। নাচ-গান, আনন্দ-উচ্ছ্বাসে দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে সকাল থেকেই বিভিন্ন কর্মসূচি শুরু হয় এ অঞ্চলের যুবক-কিশোরসহ সর্বস্তরের মানুষের।

সর্বজনীন এ উৎসবে পরস্পরের ভেদাভেদ, সাম্প্রদায়িকতা আর মৌলবাদকে রুখে দিতে দৃঢ় প্রত্যয় প্রতিটি বাঙালির। বৈশাখের তীব্র খরতাপ আর হাজার প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বর্ষবরণ উপলক্ষে রাজশাহীজুড়ে চলে বাঙালি উৎসবের আমেজ।

পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে রাজশাহীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলো প্রতিবছরই বর্ণাঢ্য কর্মসূচি পালন করে থাকে। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে এদিন সকালেই নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীরা মাথায় তাজা ফুলের তাজ আর সাদা-লালের বাহারি পোশাক গায়ে জড়িয়ে বেড়িয়ে পড়েন।

দিনটি উদযাপন উপলক্ষে প্রতিবছরই রাজশাহী জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়।

শহরের বিভিন্ন কলেজ ও স্কুল মাঠে বসে বৈশাখী মেলা। রবিবার দুপুরের পরেই পদ্মা পাড়ে নামে মানুষের ঢল। যেখানে লোকজনের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। নগরীতে মঙ্গল শোভাযাত্রা ছাড়াও লালন শাহ পার্ক, বড়কুঠি ও চরসহ পুরো পদ্মার পাড়েই বৈশাখী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পান্তা-ইলিশ, নৃত্য, সঙ্গীত পরিবেশন, আবৃত্তি, গম্ভীরা, চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতা, গ্রামীণ খেলাসহ ইত্যাদি আয়োজনে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে রাজশাহী।

এ ছাড়াও রাজশাহী জেলা পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন, বিভাগীয় গ্রন্থাগার, রাজশাহী কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে শিক্ষার্থী ও সাধারণ পাঠকদের মধ্যে রচনা ও চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল ইনস্টিটিউট তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। এদিন বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান, শিশু পার্ক বিনা টিকেটে উন্মুক্ত রাখা হয়।


বর্ষবরণের মূল আকর্ষণ এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ।

ঋতু পরিবর্তনের মতো সমাজের মানুষ পরিবর্তিত হচ্ছে। রঙ পাল্টাচ্ছে গিরগিটির মতো। সেই চিন্তা থেকে গতবছর মঙ্গল শোভাযাত্রায় মূল বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করা হয় অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টায় নির্মিত গিরগিটি। বাংলার ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপালা, বাউল গানসহ বৈশাখী মেলাও বসে চারুকলায়।

এ ছাড়াও দিনটিকে নিজেদের মতো করে উদ্যাপন করতে বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী কলেজের বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নাটক, কবিতা, নৃত্য, আবৃত্তি ইত্যাদি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

বাঙালির এই উৎসবে মিশে যেতে আগ্রহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা বিদেশি শিক্ষার্থীরাও। মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন বাঙালির সংস্কৃতি, আবেগ আর প্রাণের উচ্ছ্বাস। বাংলা নববর্ষের প্রথম সূর্যকে স্বাগত জানাতে তারাও আনন্দের জোয়ারে শামিল হন।

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে।

সকাল থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার, হাসপাতাল, শিশু পরিবার, শিশু সদন (এতিম খানায়) ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার পরিবেশন করা হয়। কারাবন্দিদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং কয়েদিদের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্যের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। বর্ষবরণের এই দিনে আনন্দ ঐতিহ্য সব মিলিয়ে সর্বস্তরের মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয় রাজশাহী। আর এই মেলা ভালবাসা দিয়ে গড়া নতুন এক বাংলাদেশের জন্ম দেবে বলে আশা প্রতিটি বাঙালির।

স/আর