বগুড়ায় একদিনে করোনাভাইরাসে ছয়জনের মৃত্যু

বগুড়ায় গতকাল বুধবার রাত আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড-১৯ পজিটিভ (করোনাভাইরাস) শনাক্ত সাবেক সরকারি সরকারি কর্মকর্তা, দুজন ব্যবসায়ীসহ আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।

এর মধ্যে কোভিড–১৯ পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার পর সরকারি-বেসরকারি দুই হাসপাতালে চারজন এবং শহরের নিজ বাড়িতে করোনাভাইরাসে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

হাসপাতাল প্রশাসন ও কোভিড–১৯ রোগীদের লাশ দাফনে নিয়োজিত কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এর মধ্যে বগুড়ার করোনা ডেডিকেটেড মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে কোভিড পজিটিভ শনাক্ত একজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (আরএমও) এ টি এম নুরুজ্জামান বলেন, গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন কোভিড-১৯ পজিটিভ এক রোগীর মৃত্যু হয়। তিনি শহরের লতিফপুর কলোনি এলাকার বাসিন্দা। ওই ব্যক্তি শ্বাসকষ্ট নিয়ে ৯ জুন হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি হন। শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

ওই ব্যক্তির পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ওই ব্যক্তি সমাজসেবা অধিদপ্তরের সাবেক উপপরিচালক ছিলেন। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতায় হাসপাতাল চত্বরে জানাজা শেষে তাঁর লাশ গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার পণ্ডিত গ্রামে দাফন করা হয়।

অন্যদিকে বেসরকারি টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড পজিটিভ শনাক্ত ২৪ ঘণ্টায় আরও তিন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল বেলা চারটার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় একজনের। তিনি বগুড়া শহরের বড়গোলা টিনপট্টি এলাকার ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁর বাসা শহরের মাটিডালিতে।

বগুড়ায় ১৮৬ জনের করোনা শনাক্ত, মোট ১৭০২

টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (রফাতুল্লাহ্ কমিউনিটি হাসপাতাল) সহকারী নির্বাহী কর্মকর্তা (এইও) আবদুর রহিম বলেন, শ্বাসকষ্টসহ কোভিডের উপসর্গ নিয়ে ১৫ জুন সকালে ওই ব্যবসায়ী টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। করোনা পরীক্ষার জন্য ওই দিন তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে টিএমএসএস মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। ১৬ জুন পরীক্ষার প্রতিবেদনে তিনি কোভিড পজিটিভ শনাক্ত হন। শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার বিকেল ৪টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে জানাজা শেষে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।

টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রহিম আরও বলেন, টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সকাল পৌনে আটটার দিকে এক নারীর (১০৫) মৃত্যু হয়। ১৫ জুন তাঁকে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তাঁর নমুনা পরীক্ষা করে টিএমএসএস মেডিকেল কলেজের ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। সন্ধ্যায় নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনে তিনি পজিটিভ শনাক্ত হন। তিনি বগুড়া শহরের নিশিন্দারা মধ্যপাড়ার বাসিন্দা। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় তাঁকে দাফন করা হয়। গত মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক রোগীর (৪৫) মৃত্যু হয়। তিনি শহরের বৃন্দাবনপাড়ার বাসিন্দা। ওই দিনই বিকেলে তিনি শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখা যায়, তিনি করোনা পজিটিভ। এ নিয়ে হাসপাতালে কোভিড পজিটিভ ৯ রোগীর মৃত্যু হলো।

বগুড়ায় করোনায় আরও একজনের মৃত্যু, মোট ১৭

হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে দুই ব্যবসায়ীর মৃত্যু
কোভিড পজিটিভ শনাক্তের পর গতকাল দুপুরে বগুড়া শহরের বাদুরতলা জহুরুলপাড়া এলাকায় নিজ বাসায় মৃত্যু হয়েছে এক ব্যবসায়ীর (৫০)। গত ১১ এপ্রিল টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে তিনি করোনা পরীক্ষার নমুনা দেন। পরে মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় তিনি কোভিড পজিটিভ শনাক্তের পর নিজ বাসায় আইসোলেশনে ছিলেন। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে তাঁর মৃত্যু হয়।

অন্যদিকে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে শহরের বগুড়ার বেসরকারি টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় ফেরার পর মঙ্গলবার রাতে পৌনে আটটার দিকে মৃত্যু হয়েছে এক ব্যবসায়ীর (৫৭)। তিনি বগুড়া শহরের বাদুরতলা জহুরুলপাড়া এলাকার বাসিন্দা।

টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রহিম বলেন, ওই ব্যবসায়ী শ্বাসকষ্ট নিয়ে কয়েক দিন আগে এই হাসপাতালে ভর্তি হন। নমুনা পরীক্ষায় তিনি করোনা ‘পজিটিভ’ হয়েছিলেন। মঙ্গলবার তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় ফিরে যান। রাত পৌনে আটটার দিকে সেখানে তিনি মারা যান। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের বগুড়ার শাখার স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতায় তাঁর লাশ দাফন করা হয়।

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সংগঠক মিজানুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার রাত আটটা থেকে বুধবার রাত আটটা পর্যন্ত কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকেরা আইইডিসিআরের নির্দেশনা মেনে এক নারীসহ ছয়জনের দাফন সম্পন্ন করেন।

প্রথম আলো

আরো পড়ুন …

করোনা : রাজশাহী বিভাগে শনাক্ত ৩ হাজার ছাড়ালো, সুস্থ ২০.৫৩%