বগুড়ায় অক্সিজেন সংকটে ১৩ ঘণ্টায় ৭ রোগীর মৃত্যু!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

হাই ফ্লো নজেল ক্যানোলার অভাবে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিটে ভর্তি থাকা সাতজন করোনা রোগী শ্বাসকষ্টে মারা গেছেন। শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত মাত্র ১৩ ঘণ্টার ব্যবধানে তাদের মৃত্যু হয়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের মোট সাতটি আইসিইউ বেডের মধ্যে দুটি সচল রয়েছে। বাকি ছয়টি বেডে এখন পর্যন্ত হাই ফ্লো নজেল ক্যানোলা লাগানো হয়নি। এ কারণে এই হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিষ্টেম থাকার পরেও উচ্চ শ্বাসকষ্টের রোগীরা প্রয়োজনীয় অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারছেন না। এ বিষয়টি বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই স্বাস্থ্য বিভাগকে জানানো হয়। কিন্ত কোন সমাধান দেওয়া হয়নি।

শুক্রবার দেখা গেছে বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে করোনা রোগীদের উপচে পড়া ভীড়। সেখানে শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছেন গাবতলী উপজেলার আজিজুল হক (৬৪)। শয্যা ফাঁকা না থাকায় বারান্দায় রেখে চলছে তাঁর চিকিৎসা। একই অবস্থা গাবতলী উপজেলার আজিজুল হক (৬৪)।

একদিনে এতো রোগী মারা যাওয়া প্রসঙ্গে রোগী স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন সরবরাহকারী সরঞ্জাম হাই ফ্লো নজেল ক্যানোলা সংকটে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সাপোর্ট না পেয়ে রোগীদের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে সংকটাপন্ন অবস্থায় এই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরো ২০-২৫ জন রোগী।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে হাই ফ্লো নজেল ক্যানোলার আছে মাত্র দুটি। আরও দুটি হাই ফ্লো নজেল ক্যানোলার বরাদ্দ পাওয়া গেলেও তা চালু করা যায়নি। অপর্যাপ্ত সরঞ্জাম নিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে গত ২৪ ঘণ্টায় ছয়জন রোগী মারা গেছেন। দুই হাসপাতাল মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যা ১৩ জন।

মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত মারা যাওয়া সাতজন রোগী হলেন জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার রাবেয়া বেগম (৬০), বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মীরা বেগম (৩৫), বগুড়া শহরের সুলতানগঞ্জ পাড়ার আলী জাহিদ (৬৫), নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার আবদুল মতিন চৌধুরী (৮২), সারিয়াকান্দি উপজেলার টুকু মন্ডল (৬৫), শিবগঞ্জ উপজেলার আবদুল হান্নান (৬৫) ও সিরাজগঞ্জ সদরের লিলি চৌধুরী (৫৫)।

নিহতদের স্বজনদের মধ্যে আবুল বাশার নামের একজন জানান, করোনায় আক্রান্ত তাঁর চাচা অতিমাত্রায় শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। তাঁর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা (লেভেল) ৭০ এ নেমে এসেছিল। রাত থেকেই শ্বাসকষ্টে তিনি ছটফট করেছেন। তাঁকে উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন সরবরাহ করতে হাই ফ্লো নজেল ক্যানোলার দরকার ছিল। এ জন্য চিকিৎসক-নার্সের কাছে ছোটাছুটি করেছেন। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসকের দেখা পাননি, নার্সরাও পাত্তা দেননি। সকালে ছটফট করতে করতে বাবা চোখের সামনে মারা গেছেন।

এনামুল হক নামের আরো একজন অভিযোগ করেন, তাঁর মায়ের অক্সিজেন লেভেল ৬৮ তে নেমে এসেছিল। তাঁকে হাই ফ্লো নজেল ক্যানোলার মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য হাসপাতাল জুড়ে ছোটাছুটি করেছেন। কিন্তুহাই ফ্লো নজেল ক্যানোলার ব্যবস্থা করতে পারেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে করোনা বিশেষায়িত মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে বর্তমানে বেশির ভাগ করোনা রোগীই শ্বাসকষ্টে ছটফট করছেন।

কয়েকজন স্বজন জানান, তাঁদের রোগীর উচ্চমাত্রার অক্সিজেন সরবরাহের জন্য হাই ফ্লো নজেল ক্যানোলার দরকার। অথচ রোগীকে সাধারণ মাস্ক দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে।

মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ টি এম নুরুজ্জামান সঞ্চয় বলেন, কেউ হাই ফ্লো নজেল ক্যানোলার সংকটে মারা গেছেন এমনটা এখনো দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা তাকে জানাননি। তবে এই মুহূর্তে একসঙ্গে দুজনের বেশি রোগীকে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানোলায় অক্সিজেন সরবরাহের সক্ষমতা এখানে নেই। তবে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ রয়েছে। আর হাই ফ্লো নজেল ক্যানোলার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সেগুলো হাতে পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, এখন মাস্ক দিয়ে প্রতি মিনিটে ১৫ লিটার অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই হাসপাতালে দুটি হাই ফ্লো নজেল ক্যানোলার বেশ কিছুদিন যাবত বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এ ব্যাপারে তত্ববধায়ক বলেন, বেশ আগে বরাদ্দ পাওয়ার পর নিজ উদ্যোগে টেকনিশিয়ান ডেকে এটি চালু করার চেষ্টা করা হয়েছিলো। তবে সেটি চালু করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকেও জানানো হয়েছে। যার কারণে আরো ন্যূনতম ২৫টি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানোলা চেয়ে অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এখনো সাড়া মেলেনি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে অল্প সংখ্যক পাবার সম্ভাবনা রয়েছে।

সূত্র: কালের কন্ঠ