পিঠখোলা ব্লাউজ বা হালকা ক্লিভেজ!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

‘এ কী! এই পোশাক পরে তুমি বিয়েবাড়ি যাবে? তোমার না থাকতে পারে, আমার একটা সম্মান আছে।’’ স্ত্রী’র খোলামেলা পোশাক দেখে বিরক্ত স্বামীর এহেন উক্তি শুনতে যতই নাটকীয় লাগুক, এটা কেবল মেগা সিরিয়াল বা বাণিজ্যিক ছবির সংলাপ মাত্র নয়। ছাপোষা মানুষের অন্দরমহলেও এমন বিষাক্ত উক্তি মোটেই বিরল নয়। অনেকে আবার এমনও আছেন, যাঁরা মুখে হয়তো কিছু বলছেন না, কিন্তু তাকিয়ে দেখতে থাকেন, তাঁর সঙ্গিনীকে কেউ বক্র দৃষ্টিকে দেখছে কি না।

অথচ এদেশেই লেখা হয়েছে বাৎসায়নের ‘কামসূত্র’। অজন্তা-ইলোরার ছবি ও ভাস্কর্যও এদেশেরই। তবু শরীর নিয়ে এক আশ্চর্য ‘ট্যাবু’ রয়ে গিয়েছে আজও। নায়িকা বৃষ্টিতে ভিজে নেচে উঠলে অন্ধকার হলে সিটির বন্যা বয়ে যায়। অথচ নিজের স্ত্রী বা প্রেমিকার পোশাক নিয়ে তীব্র মাথাব্যথা। যেন পোশাক এক ইঞ্চি কম বা বেশির উপরেই নির্ভর করছে সম্মানের ব্যালান্স-ক্রীড়া।

দীপিকা পাডুকোন। ছবি: দীপিকার ফেসবুক পেজ থেকে

‘‘হ্যাঁ, আমি একজন মহিলা। আমার স্তন আছে এবং ক্লিভেজও। আপনাদের কী সমস্যা?’’ কয়েক বছর আগে অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোনের সেই বিস্ফোরক উক্তি হয়তো মনে আছে অনেকেরই। দেশের এক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবির তলায় প্রকাশিত একটি ক্যাপশনের উত্তরেই ক্ষুব্ধ দীপিকা এমন মন্তব্য করেছিলেন। সেই সময়ে দীপিকার মন্তব্যের সমর্থনে এগিয়ে এসেছিলেন অন্য তারকারাও। অনেকেই তাঁর সেই টুইটকে রিটুইট করেছিলেন।

দীপিকার ঘটনা একটা উদাহরণ মাত্র। কিন্তু সেই ঘটনা ভারতীয় জনমানসে ‘শরীর’-এর আবেদনকে বুঝতে সাহায্য করে। ‘শরীর’-এর ‘ব্র্যান্ড ভ্যালু’ এমনই, যে নায়িকার খোলামেলা পোশাক পরা ছবি দেখে পাবলিক খুশি হয়, তারাই আবার নিজের সঙ্গীর পিঠখোলা কিংবা ক্লিভেজ দেখানো ব্লাউজ, উরু দেখানো শর্ট স্কার্টে অস্বস্তিতে ভোগে।

বহু মহিলাই অস্বস্তিতে ভুগতে থাকেন, যখন তাঁরা দেখেন তাঁর সঙ্গে কথা বলার সময়ে সামনের পুরুষটির চোখ বার বার চলে যাচ্ছে তাঁর সূক্ষ্ণ ক্লিভেজের ফাঁকে। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই, পুরুষের চোখে নারীর সৌন্দর্য অনেকটাই থমকে রয়েছে সঙ্গিনীর স্তনের আকৃতির উপরে।

‘দুপুর ঠাকুরপো’ ওয়েবসিরিজে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। ছবি: সিরিজের ফেসবুক পেজ থেকে

একটি মনোবিজ্ঞানের ওযেবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার এক গবেষক দল জানিয়েছেন, ১৮ থেকে ৬৫ বছরের প্রায় ৫২ হাজার পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গে কথা বলেছেন তাঁরা। সেখান থেকে জানা যাচ্ছে, ৫৬ শতাংশ পুরুষ সঙ্গিনীর স্তন নিয়ে খুশি। পাশাপাশি উঠে আসছে আর একটা চমকে দেওয়া তথ্যও। মাত্র ৩০ শতাংশ মহিলা নিজেদের স্তন নিয়ে সন্তুষ্ট। বাকিরা নন! তবে দুটোর মধ্যে ফারাক আছে। পুরুষের স্তনপ্রিয়তা পুরোপুরি যৌনতাময়। অন্যদিকে নারীর ক্ষেত্রে বিষয়টা একেবারেই আলাদা ও বহুমুখী। তবে মূল সুরটা একই, আমাকে পুরুষের চোখে সেরা হতে হবে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের এ এক বড় বালাই।

সে যাই হোক, কথা হচ্ছে খোলামেলা পোশাক পরা নিয়ে। আমেরিকান অভিনেত্রী ক্রিস্টিনা হেনড্রিকস জানিয়েছিলেন, ক্লিভেজ দেখানো পোশাক পরলে নিজেকে শক্তিশালী মনে হয়। সবাই তাঁর দিকে দেখছে এই অনুভব তাঁকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।

তবে সকলেই যে ক্রিস্টিনার মতো করে ভেবে ক্লিভেজ দেখান, তা তো নয়। তাছাড়া যতই আমরা ভুবন গ্রাম বলে চিৎকার করি না কেন, মার্কিন সমাজ আর ভারতীয় সমাজের চেহারা এক নয় মোটেই। আমরা ‘শরীর’ দেখে হলে বসে সিটি মারি, অথচ সঙ্গিনীর পোশাকের খাঁজে অন্যের দৃষ্টি আটকে গেলে অস্বস্তিতে ভুগতে থাকি। তাই শরীরকে প্রকৃত সম্মান ভারতীয়রা আর করতে পারল কই।

তবে সকলেই ‘ঝাঁকের কই’ নয়। ব্যতিক্রম তো আছেই। কিন্তু, ব্যতিক্রম তো নিয়মকেই স্পষ্ট করে। তাই প্রেমিকার খোলামেলা পোশাক পরা নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে তুমুল মনোমালিন্যের পরে মাথা ঠান্ডা করতে ইউটিউবে সেই প্রেমিকই চালিয়ে দেয় ‘তু চিজ বড়ি হ্যায় মস্ত মস্ত’-এর নতুন রিমিক্স!  এবেলা