পাবনায় প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা, অভিযুক্তদের বাড়িতে আগুন

স্থানীয় লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিহত সুমন প্রামাণিক একসময় বিদেশে থাকতেন। এরপর দেশে ফিরে কিছুদিন গাড়ি চালিয়েছেন। পরে বালুর ব্যবসা করছিলেন। বেলা পৌনে দুইটার দিকে তিনি জেলা শহরের অনন্ত বাজার এলাকায় ব্যবসার কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়িতে পৌঁছার ঠিক আগমুহূর্তে পাঁচ থেকে ছয়জনের একদল দুর্বৃত্ত তাঁকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। বিষয়টি দেখতে পেয়ে সুমনের স্ত্রী ঘটনাস্থলে ছুটে এসে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলে কোপাতে থাকা লোকজন তাঁকে ফেলে পালিয়ে যান। পরে প্রতিবেশী ও স্বজনেরা সুমনকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতের স্ত্রী রিমা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তাঁর সামনেই প্রতিবেশী টিটু ও মিঠু দুই ভাই এবং তাঁদের সহযোগী মান্নাসহ কয়েকজন প্রকাশ্যে তাঁর স্বামী সুমনকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন। তিনি বাধা দিতে গেলে তাঁরা তাঁকেও কোপানোর চেষ্টা করেছেন। পরে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে সবাই পালিয়ে গেছেন। তিনি এই হত্যার বিচার চান।

এদিকে এ খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে নিহত সুমনের স্বজন ও প্রতিবেশীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তাঁরা একত্র হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা টিটু হোসেন ও মিঠু হোসেন নামে গ্রামের বাসিন্দা দুই ভাই এবং মান্না নামে তাঁদের এক বন্ধুর বাড়িতে আগুন দেন। এতে তিনটি বাড়ি পুড়ে যায়, বাড়ির বাসিন্দারা প্রাণভয়ে পালিয়ে যান।

সুমন প্রামানিককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ স্বজন ও প্রতিবেশীরা হামলাকারীর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। শনিবার বিকেলে পাবনার দক্ষিন রামচন্দ্রপুর গ্রামে

বিকেল তিনটার দিকে গ্রামটিতে সরেজমিনে দেখা যায়, তখনো বাড়ি তিনটি থেকে আগুনের ধোঁয়া ওপরে উঠছে। পুরো গ্রাম থমথমে। পুলিশ অবস্থান নিয়েছে গ্রামজুড়ে। নিহত ব্যক্তির পরিবারে চলছে মাতম। প্রতিবেশী ও আশপাশের গ্রামের লোকজন ভিড় জমিয়েছেন তাঁদের বাড়িতে।

এ সময় স্বজন ও প্রতিবেশীরা দাবি করেন, গত বছরের ১১ ডিসেম্বর গ্রামের বাসিন্দা ও ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বকুল খানকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত সুমন প্রামাণিক বকুল খানের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তাঁদের ধারণা, সেই বিরোধের জের ধরেই এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পলাতক থাকায় তাঁদের কাউকে পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মাসুদ আলম  বলেন, খবর পেয়ে গ্রামটিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গ্রামের পরিবেশ এখন শান্ত আছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, পূর্বের একটি খুন ও অর্থনৈতিক লেনদেনসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরেই এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। নিহত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সূত্র: প্রথম আলো