পাটের ‘ন্যায্য মূল্য’ পাচ্ছেন না বাঘার চাষীরা

আমানুল হক আমান, বাঘা: রাজশাহীর বাঘার কৃষকের মুখে হাসি ফোটাতে পারছে না পাট। অনেক আশা নিয়ে পাট চাষ করেন কৃষকরা। কিন্তু পাটের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা।

জানা যায়, মৌসুমের শুরুতে কৃষকরা ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতিমণ পাটের দাম পেলেও পরে তা কমতে শুরু করে। বুধবার উপজেলার দিঘা হাটে প্রতিমণ ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা দরে পাট কেনাবেচা হয়। এলাকায় সময়মত বৃষ্টি না হওয়ায় কারণে পাটের বীজ বপন করতে বিলম্ব হয়। এছাড়া জাগ দেয়ার (পাট পঁচানো) পানি সঙ্কটের জন্য পাট কাটতে দেরি করে কৃষকরা। শ্রাবণ মাসের শেষ দিকে স্বস্তির বৃষ্টিতে ডোবা-নালা, খাল-বিলে কিছুটা পানি জমা হলে সকল চাষী এক সঙ্গে তাড়াহুড়ো করে পাট কাটতে শুরু করে। ফলে পাট কাটার জন্য শ্রমিকের বাড়তি মজুরি গুনতে হয়। বিঘা প্রতি পাট চাষে খরচ গুনতে হয় ১৪ হাজার ৭০ টাকা। এরমধ্যে জমি চাষ ৮০০ টাকা, বীজ ১২০ টাকা, সার ও ওষুধ ১ হাজার ১৫০ টাকা, নিড়ানী ৩ হাজার ৫০০ টাকা, কাটা ২ হাজার টাকা, পনিতে ডুবানো ১ হাজার ৫০০ টাকা, পাটের আঁশ ছাড়ানো ও শুকানো ৩ হাজার ৫০০ টাকা, যাতায়াত ১ হজার ৫০০ টাকা।
এ টাকা খরচ করেও চাষিরা প্রতি বিঘা জমিতে পাটের ফলন পেয়েছেন ৯ থেকে ১০ মণ। যার বর্তমান বাজার মূল্য ১৩ হাজার ৫০০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। পাট চাষ করে ধানের ক্ষতি কাটিয়ে উঠাতো দূরের কথা, খরচ উঠানো দায় হয়ে পড়েছে চাষিদের।

আড়ানী গোচর গ্রামের চাষি একরাম আলী বলেন, ১৫ থেকে ২০ বছর আগে হাটে পাট বিক্রি করে মনের আনন্দে হাসতে হাসতে ইলিশ মাছ কিনে বাড়ি ফিরেছি। কিন্তু এখন এক মণ পাট বিক্রি করে এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ পাওয়া যায় না।
বাঘার পদ্মার মধ্যে চরকরাজাপুর চরের খিদির শিকদার বলেন, আমি চলতি মৌসুমে ৩ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। এরমধ্যে ২ বিঘা জমির পাট বিক্রি করা হয়েছে। এক বিঘা জমির পাট পানিতে ডুবানো আছে। ২ বিঘা জমির হিসাব-নিকাশ করে পাটখড়ি ব্যতীত লাভ হয়নি। এর আগে বোরো মৌসুমে ২ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। ধান চাষ করে লাভ হয়নি। পাট চাষ করেও একই অবস্থা। এতে পরিবারের মৌলিক চাহিদা মিটাতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, এ উপজেলায় ৩ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। তবে সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় পাট কাটতে দেরি হয়েছে। তারপরও হেক্টর প্রতি ফলন হয়েছে ২ পয়েন্ট ৬৫ মেট্রিকটন। উপজেলায় মোট উৎপাদন হয়েছে ৯ হাজার ৬৫৮ মেট্রিকটন।

 

স/শা