পাকিস্তানের হাসপাতালে হামলায় ইমেইলে তালেবান, আমাক-এ আইএসের দায় স্বীকার

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

পাকিস্তানের কোয়েটার হাসপাতালে আত্মঘাতী বোমা হামলার দায় স্বীকার করেছে দুই জঙ্গিগোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর একাংশ এবং ইসলামিক স্টেট (আইএস)। ওই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ জনে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন এবং ডন খবরটি নিশ্চিত করেছে।
সোমবার কোয়েটার স্থানীয় সিভিল হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে এ আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়। বেলুচিস্তান প্রদেশের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ডা. মাসুদ নওশেরওয়ানি জানিয়েছেন, ‘এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭০ জনে দাঁড়িয়েছে, আর আহত হয়েছে ১১২ জন।’ আশঙ্কা করা হচ্ছে, হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে। ২৯ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লাহোরে পাঠানো হয়েছে।

লাহোরে বোমা হামলার পর দায় স্বীকার করেছিল জামায়াত-উর-আহরারপাকিস্তানভিত্তিক তালেবান ধারার জঙ্গিগোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর একাংশ জামায়াত-উর-আহরার ইমেইলের মাধ্যমে হামলার দায় স্বীকার করেছে। সংগঠনটির মুখপাত্র এহসানুল্লাহ এহসান ইমেইলে দায় স্বীকার করে লিখেছেন, ‘তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান জামায়াত-উর-আহরার এই হামলার দায় স্বীকার করছে। আর সামনেও এমন হামলা চালানো হবে। শিগগিরই আমরা এই ঘটনার ওপর একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করব।’

পাকিস্তানে আইএসমধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে সংগঠনটির কথিত বার্তা সংস্থা আমাক নিউজ এজেন্সিতে। সেখানে তারা উল্লেখ করেছে, “ইসলামিক স্টেট-এর এক ‘শহীদ’ কোয়েটা শহরে বিচার মন্ত্রণালয়ের চাকরিজীবী এবং পুলিশ সদস্যদের এক জমায়েতে নিজের সঙ্গে থাকা বিস্ফোরক বেল্টের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।”

এর আগে প্রাথমিক তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী সানাউল্লাহ জেহরি দাবি করেন, হামলায় ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) জড়িত। সোমবার পাকিস্তানি টেলিভিশন চ্যানেল জিও নিউজকে এ কথা বলেন তিনি।

বোমা নিষ্ক্রিয়কারী ইউনিটের প্রধান আবদুল রাজ্জাক জানিয়েছেন, ওই আত্মঘাতী হামলাকারীর শরীরে প্রায় আট কেজি ওজনের বিস্ফোরক বাঁধা ছিল।

বেলুচিস্তান বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিলাল আনোয়ার কাসিসোমবার ভোরে অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের গুলিতে বেলুচিস্তান বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিলাল আনোয়ার কাসি নিহত হন। তার মরদেহ কোয়েটার ওই হাসপাতালেই রাখা ছিল। হাসপাতালে বিলালের মৃতদেহ দেখতে আইনজীবীরা উপস্থিত হওয়ার পরই হাসপাতালের অভ্যন্তরে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের পর বেশ কিছু গুলির শব্দও শোনা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

চারিদিকে ছড়িয়ে আছে হতাহতদের রক্তের দাগনিহতদের বেশিরভাগই আইনজীবী বলে জানা গেছে। ফরিদুল্লাহ নামে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা এক সাংবাদিক জানিয়েছেন,  বিস্ফোরণের পূর্বে কাসির মরদেহ দেখতে অন্তত ৫০ জন আইনজীবী হাসপাতালে প্রবেশ করেন।

এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, কোয়েটার হামলার পর সেনাপ্রধান রোহেল শরীফের নেতৃত্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বেলুচিস্তান সদর দফতরে এক জরুরি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে সন্ত্রাসীদের ধরতে দেশজুড়ে চিরুনি অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ এবং সেনাপ্রধান রাহিল শরীফ হাসপাতাল পরিদর্শন করেনপাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মামনুন হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। নওয়াজ শরীফ এবং সেনাপ্রধান রাহিল শরীফ হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন।

এদিকে, পাকিস্তান বার কাউন্সিল (পিবিসি) এ হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক সপ্তাহ শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছে। সেই সঙ্গে হামলার প্রতিবাদে ৯ আগস্ট দেশব্যাপী কর্মবিরতি ডেকেছে। লাহোর হাইকোর্টের আইনজীবীরাও হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন।

পিবিসি-র ভাইস চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ফারুক নাসিম এবং নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল ফায়াজ তীব্রভাবে এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। তারা ৯ আগস্ট দেশব্যাপী কর্মবিরতি এবং সপ্তাহব্যাপী শোক পালনের কর্মসূচী সফল করার জন্য আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

স্বজনদের আহাজারিসম্প্রতি পাকিস্তানে বিশেষ করে বেলুচিস্তানে একের পর এক আইনজীবী হামলার শিকার হয়েছেন।

৩ আগস্ট অজ্ঞাতদের গুলিতে নিহত জাহানজেব আলভি নামের এক আইনজীবী। এ হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন সোমবার নিহত বিলাল কাসি। এ হত্যার প্রতিবাদে দুইদিন কোর্টের কার্যক্রম বয়কটের ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি।

জুনে স্পিনি রোডে বেলুচিস্তান আইন কলেজের প্রিন্সিপাল ব্যারিস্টার আমানুল্লাহ আচাকজিকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

স্বজনদের আহাজারিএর আগে পাকিস্তানি খ্রিস্টান নাগরিকের পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য এক আইনজীবীকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।

গত এক দশক ধরে বেলুচিস্তানে বেশ কিছু সহিংসতা ও টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। গত ১৫ বছরে সংখ্যালঘু শিয়া ও হাজারা সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে অন্তত এক হাজার ৪০০টি হামলা হয়েছে।

আয়তনে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় এ প্রদেশটিতে স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলনকারী সশস্ত্র সংগঠন ও আল-কায়েদা জঙ্গিরা বেশ সক্রিয়। আফগানিস্তান ও ইরানের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে প্রদেশটির।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন