পরিযায়ী পাখির আগমনে মুখরিত জবই বিল


প্রদীপ কুমার সাহা, সাপাহার :
শীতের শুরুতেই নওগাঁ জেলার সীমান্ত ঘেষাঁ সাপাহার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জবই বিলে পরিযায়ী পাখির আগমন শুরু হয়েছে এবং সারা বিল এখন দেশী বিদেশী পরিযায়ী পাখির আনাগোনায় মুখরিত।

সাপাহার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জবই বিলের জীববৈচিত্রের পটভুমিতে বলা হয়েছে বিলটি সাপাহার উপজেলা সদর হতে প্রায় ১৩ কি:মি: পশ্চিমে অবস্থিত, জীববৈচিত্র ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ বিল। প্রকৃত পক্ষে এই বিলের নাম ডুমরইল, বোরা মির্জাপুর, মাহিল ও কালিন্দর চার বিলের সমন্বয়ে এই জবই বিল।

বিলের উত্তরে ভারতের দক্ষিন দিনাজপুর জেলা দক্ষিনে ভারত ঘেঁষা পূর্ণভবা নদী। এই বিলের আয়োতন প্রায় ১৫শ’ হেক্টোর ভর বর্ষা মৌসুমে এর পরিধি বিস্তার লাভ করে প্রায় ২হাজার হেক্টোরে পরিণত হয়। সরকারী হিসেব মতে বিলে খাস জমির পরিমান ৪০৩ হেক্টোর।

প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই বিলের নানাময় সম্ভাবনা দেখে ২০১৮সালের দিকে স্থানীয় কিছু তরুনদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষন ও সমাজ কল্যাণ সংস্থা নামে একটি সংগঠন আত্নপ্রকাশ করে বিলের জীববৈচিত্র সংরক্ষনে কাজ শুরু করেন।

তারা প্রথমে উপজেলা প্রশাসন পরে স্থানীয় সাংসদ বাংলাদেশ সরকারের খাদ্যমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা সাধন চন্দ্র মজুমদার এম পি, এর সহায়তায় এলাকায় বিভিন্ন সভা সমাবেশ শুরু করেন।

তাদের এ কাজে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগ রাজশাহী ও যোগ দিয়ে কাজের গতিবিধি আরোও বৃদ্ধি করেন ও সেবছর হতেই তারা বিলের পাখি শুমারী বা জরিপ কার্যক্রম শুরু করেন।

জবই বিল জীববৈচিত্র সংগঠনের সভাপতি সোহানুর রহমান সবুজ জানিয়েছেন বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী এই বিলে পাতি-সরালি,লাল ঝুটি-ভুতিহাস, গিরিয়া হাস, তিলি হাঁস, টিকি হাঁস, পিয়াং হাঁস, ঠেঙ্গি হাঁস, চা পাখি, বেগুনী বক, বাজলা বক, শামুখ খোল, মাছ মুরাল, সাপ পাখি, চখা চখি, হরেক রকম হাঁসের আনাগোনা শুরু হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে বিলটি অতিথি পাখির সমাহারে সারা বিল ভরে উঠবে।

তাদের জরিপ মতে গত ২০১৯সালে এ বিলে দেশী বিদেশী মিলে মোট পাখির সংখ্যা ৫হাজার ৫৯৩টি, ২০২০ সালে ৭হাজার ৬৮৩টি, ২০২১সালে ৯হাজার ৭১২টি এবং ২০২২সালে বিলে মৎস্য শিকারীদের ব্যাপক দাপাদাপিতে পাখির সংখ্যা কমিয়ে দাঁড়ায় ৬হাজার ৬৯২টিতে। ২০২৩সালের পাখি জরিপ কাজ চলমান প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

সোমবার বেলা সকাল ১০টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ হোসেন জানান- এই বিলে যাতে সারা বছর পাখি থাকতে পারে সে জন্য এবারেই বিলের ভুতকুড়ী অংশে পাখির জন্য একটি অভয়াশ্রম গড়ে তোলা হবে এবং গত ২১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধান অথিথি হিসেবে জবই বিলে মৎস্য আহরনের শুভ উদ্বোধন করেন নওগাঁ জেলা প্রশাসক গোলাম মাওলা। তিনি আরও জানান, এবছর এই বিলে ৫৫৫ মেট্রিকটন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য ধরা হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। গত বছর এই বিলে মৎস্য আহরণের পরিমান ছিলো ৫২৭ মেট্রিকটন।