নির্ধারিত সময়ে খোলেনি রাজশাহী চিনিকল, আখ চাষিরা হতাশ

শাহিনুল আশিক:


মাড়াই মৌসুম শুরু হলেও রাজশাহী চিনিকল (রাচিক) খোলার দিনক্ষণ এখনও ঠিক হয়নি। তাই প্রায় ১৮ হাজার চাষী জমিতে আখ নিয়ে বেকাদায় পড়েছেন। শুধু চাষিরা নয়, বেতন নিয়ে বেকাদায় রয়েছেন ৬২২ শ্রমিক-কর্মচারী। তাদের চার মাসের বেতন বাকি রয়েছে।



শ্রমিক নেতারা বলছেন, আখ মাড়াই শুরুর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে কিছুদিন আগে চিনিকলের সার্বিক বিষয়ে (যন্ত্রপাতি, জমি, পরিবহন ইত্যাদি) রির্পোট হয়েছে। কেন্দ্র থেকে আভাস আসছে ১৫টি চিনি কলের মধ্যে নয়টি চালু রেখে, ছয়টি বন্ধ করা হতে পারে। এনিয়ে চাষিরা তাদের উৎপাদিত আখ বিক্রি নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ মাড়াই মৌসুমে ১৭ নভেম্বর চিনিকলের আখ মাড়াই মৌসুম শুরু হয়। ২০১৯-২০ মাড়াই মৌসুমে ২১ নভেম্বর আখ ওজন নেয়া শুরু হয়। আর চলতি বছরের (২০২০-২১) মাড়াই মৌসুমে এখনও চিনিকলের বয়লার স্লো-ফায়ারিং করা হয়নি। ফলে এই মৌসুমের আখ মাড়াই মৌসুম শুরু নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

সূত্র জানায়, রাজশাহী চিনিকল আওতায় প্রায় ১৮ হাজার আখচাষী রয়েছে। এরমধ্যে বেশিরভাগ চাষী চিনিকলের পক্ষ থেকে প্রতিবছর নগদ অর্থসহ সার, কীটনাশক, আখের বীজ ঋণ নিয়ে থাকেন। এমন আখঋণির সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। আখঋণীদের মধ্যে দরিদ্র আখচাষীই বেশি। তারা চিনিকল থেকে ঋণগ্রহণ করে ফসল ফলিয়ে থাকেন। ২০২০-২১ মাড়াই মৌসুমকে কেন্দ্র করে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রায় ৮ হাজার সাধারণ আখচাষী রয়েছেন।

রাজশাহী চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মজিবুর রহমান বলেন, রাচিক-এর আওতায় প্রায় ১৮ হাজার চাষির জমিতে আখ রয়েছে। বিগত বছরগুলোতে এ সময়ে চিনিকলে আখ ওজন নেয়া হয়েছে। কিন্তু এই বছর এখনো আখমাড়াই মৌসুম শুরু দিন নির্ধারণ হয়নি।

তিনি আরও বলেন, ২০১৯-২০ মাড়াই মৌসুমে রাচিক-এ ১ লাখ ২৯ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই হয়েছিল। আর এই মৌসুম অর্থাৎ (২০২০-২১) আখ মাড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। চিনিকলের গুদামে এই মুহূর্তে ১৮শ’ মেট্রিক টন চিনি অবিক্রিত আছে।

আখচাষী আজিজুল ইসলাম জানান, প্রতি বছরের নির্দিষ্ট সময় থাকে চিনিকল খোলার। এবছর চিনিকল খোলার বিষয়ে আমাদের (চাষীদের) এখন পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি।

তিনি বলেন, সময় মতো চিনি কলে আখ সরবারহ না নিলে পাগালি (ডগায়) ফুল হয়ে যায়। এতে আখের ওজন কমে যায়। এছাড়া আখের জমিতে সাথি ফসলও করা সম্ভব হয় না। ফলে চাষিদের লোকসান হয়।

রাচিক-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল সেলিমের মুঠোফোনে কল করে বন্ধ পাওয়া গেছে। ফলে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে, রাচিক-সহ আরও ১৫টি চিনিকল চালু রাখার দাবিতে আন্দোলন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভা থেকে ছয়টি বা নয়টি নয়, ১৫টি চিনিকল একসাথে চালু রাখার দাবি জানান হয়।