পাওনা আদায়ে পুরো পরিবারকে অপহরণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

 

পাওনা আদায়ে পুরো পরিবারকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে ঢাকা মহানগর (উত্তর) ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মোস্তফা কামাল উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে। শিশুসহ ওই পরিবারের ৩ জনকে ২৪ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনও করা হয়। গত শুক্রবার মধ্যরাতে রাজধানীর পল্লবীর ১১ নম্বর সেকশনের একটি বাসা থেকে অপহৃত ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম সবুজ, তার স্ত্রী সাথী ইসলাম আলেয়া ও তাদের ১১ বছরের শিশুকন্যা সানজিদা ইসলাম লামিয়াকে উদ্ধার করে র‌্যাব-৪। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রলীগ উত্তরের সহসভাপতি উজ্জ্বল এবং সুদের কারবারি মো. আবুল বাশারও গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় দুটি বেতের লাঠি ও মুক্তিপণ বাবদ আনা ১০ হাজার টাকা। তবে অপহরণকা-ের সঙ্গে জড়িত জনৈক মিরাজসহ ৫ জন র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায়।

জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়ে গতকাল শনিবার ভোররাতে ব্যবসায়ী সবুজ বাদী হয়ে ছাত্রলীগ নেতা উজ্জ্বলসহ এজাহারনামীয় ৩ জন ছাড়াও মোট ৬ জনের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় হত্যাচেষ্টাসহ কয়েকটি অভিযোগ এনে মামলা করেন। মামলা নম্বর- ৫৬। আসামিদের রিমান্ড না চেয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে আদালতে পাঠান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্লবী থানার এসআই তারিক-উর রহমান শুভ। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এসআই তারিক-উর রহমান আমাদের সময়কে জানান, অপহৃত তিনজনকে উদ্ধার এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত ২ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে একজন ছাত্রলীগ উত্তরের নেতা বলে জানা গেলেও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আসামিদের শনিবার কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, তিনি মিরপুর-১১ এলাকার ৩ নম্বর সড়কে দীর্ঘদিন ধরে মুদি ব্যবসা করেন। লোকসানের কারণে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে স্থানীয় সুদের ব্যবসায়ী মো. আবুল বাশারের কাছ থেকে মাসিক ৬ হাজার টাকা সুদের বিনিময়ে ২ লাখ টাকা নেন শফিকুল ইসলাম। করোনা মহামারীর কারণে ব্যবসায় ধস নামে। তারপরও সুদের কিস্তি চালিয়ে আসছিলেন। কিন্তু মূল টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেলেন আবুল বাশার। দিতে না পারায় হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলেন বাশার। এরই ধারাবাহিকতায়, গত বৃহস্পতিবার ধারের টাকার বিষয় মীমাংসার কথা বলে শফিকুলকে মোবাইল ফোনে পল্লবীর সেকশন-১২ এলাকায় আসতে বলেন বাশার। তার কথামতো শফিকুল- স্ত্রী সাথী ও ৫ম শ্রেণিতে পড়–য়া মেয়ে লামিয়াকে নিয়ে সে দিনগত রাত ৯টার দিকে পল্লবী সেকশন-১১ বাশারের বাড়ির কাছে যেতেই মোস্তফা কামাল উজ্জ্বল (ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি), মিরাজসহ (পলাতক) অচেনা ৩ থেকে ৪ যুবক তাদের আটকে রাস্তায় ফেলে স্ত্রী-শিশুকন্যার সামনেই মোটা বেতের লাঠি দিয়ে শফিকুলকে এলোপাতাড়ি পেটায়। এরপর তারা ৩ জনকেই রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যায় পল্লবী-১১ নম্বর সেকশনের এ-ব্লক ৯/৩ নম্বর সড়কের ১৫ নম্বর ভবনে। সেখানে আটকে রেখে সুদসহ পাওনা পুরো টাকার জন্য শফিকুলকে ফের অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। অনন্যোপায় হয়ে পাওনা টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বললে পরদিন অর্থাৎ শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে জিম্মিদশা থেকে এক ঘণ্টার জন্য ছাড়া পান শফিকুলের স্ত্রী সাথী। আটকে রাখা হয় বাবা-মেয়েকে। অনেক কষ্টে এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ধার এনে যথাসময়ে তা বাশারের হাতে তুলে দেন সাথী। কিন্তু মন গলেনি। পুরো টাকা না দেওয়ায় এবার শফিকুলের সঙ্গে তার স্ত্রী-শিশুকন্যাকেও বেধড়ক পেটায় আসামিরা। উপায়ান্তর না পেয়ে সাথী গোপনে মোবাইল ফোনে ঘটনার বিষয়ে জানায় তার বড় মেয়ে সাদিয়ার কাছে। সাদিয়া পরিবারের অন্যদের জানালে তারা ঘটনার বিস্তারিত জানান র‌্যাব-৪ এর কর্মকর্তাদের। খবর পেয়ে শুক্রবার রাত পৌনে ১০টার দিকে ওই বাসায় জিম্মিদশা অবস্থায় আহত ভিকটিমদের উদ্ধার করে র‌্যাব-৪ এর সিনিয়র এএসপি আক্তারুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি দল। এ সময় সুদের কারবারি মো. আবুল বাশার ও মোস্তফা কামাল উজ্জ্বলকে গ্রেপ্তার করা গেলেও পালিয়ে যায় অন্যরা। পরে আহত শফিকুল ও তার স্ত্রীকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ছাত্রলীগ নেতা মোস্তফা কামাল উজ্জ্বলের বিষয়ে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে জানতে গতকাল ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহিমের সেলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ওপাশ থেকে সাড়া দেননি তিনি।

 

সূত্র: আমাদেরসময়