নিম্নমাণে বিটুমিনে নাকাল রাজশাহীর দুটি রাস্তায় চলাচলকারী লাখো মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর হরিয়ান থেকে দুর্গাপুরের দূরুত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। এই রাস্তাটির একটি অংশ বছর তিনেক আগে সংস্কার করেছিলো বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে প্রায় ৩ কিলোমিটার অংশ বছর দূয়েক সংস্কার করা হয়েছিলো দুর্গাপুর পৌরসভা থেকে এবং আরও তিন কিলোমিটার সংস্কার করা হয় বছর খানেক আগে কাটাখালি পৌরসভার অর্থে। কিন্তু পুরো রাস্তাটি এখন ভয়ঙ্কর খানা-খন্দকে ভর্তি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিম্নমাণের বিটুমিন ব্যবহার করার কারণে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে পুরো রাস্তাটি। পরিস্থিতি এমন যে, রাস্তাটি ব্যবহাকারী তিনটি উপজেলারর প্রায় দেড় লাখ জনসাধারণকে এখন ব্যবহার করতে হচ্ছে বিকল্প পথ। এতে করেও এলাকাবাসীকে যেমন বাড়তি সময় ব্যয় করতে হচ্ছে, তেমনি বাড়তি খরচও হচ্ছে। এর মধ্যেও বাধ্য হয়ে যেসব যানবাহন চলাচল করছে, সেগুলো দুর্ঘটানর কবলে পড়ছে প্রতিনিয়ত। আর এ নিয়ে সাধারণ দুর্ভোগের শিকার জনসাধারণের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ।


সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহীর শুধু এই রাস্তাটিই নয়, জেলার বায়া থেকে তানোর পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার রাস্তাটিরও একই অবস্থা। এই রাস্তাটিও বছর খানেক প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হয়। কিন্তু বছর না ঘুরতেই সেই রাস্তাটির এখন বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই রাস্তাটি সংস্কারকাজেও নিম্নমাণের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়েছে। যার ফলে রাজশাহী-তানোর যাতায়াতকারী হাজার হাজার মানুষকে প্রতিদিন ব্যাপক দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় খানা-খন্দকে ইট-খোয়া ফেলার ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয় এমপি ওমর ফারুক চৌধূরি। কিন্তু সেটিও হয়নি। ফলে দুর্ভোগও কাটেনি পথচারীদের।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহীর হরিয়ান থেকে দুর্গাপুর প্রায় ১৫ কিলোমিটার রাস্তাটির খানা-খন্দকে ভরে গেছে। কোথাও কোথাও রাস্তার একাংশ ভেঙে পাশে পুকুরের মধ্যে চলে গেছে। আবার কোথাও বড় বড় গর্তে সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও এবার গোটা বর্ষায় হাঁটপানি জমে আছে। এর মধ্যে প্রতিদিন লাখো মানুুষকে চলাচল করতে হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। রাস্তাটিতে হরিয়ান থেকে চৌপুখরিয়া পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন পথচারিরা।
দুর্গাপুরের গৌরিহার গ্রামের আবুল কালাম বলেন, ‘বাধ্য হয়ে পারিলা, ঝাললুকা বা হাড়িয়াপাড়া হয়ে ৭-৮ কিলোমিটচার ঘুরে অধিকাংশ যানবাহন চলাচল করছে। কিন্তু তা পরেও একেবারেই যেসব এলাকায় বিকল্প রাস্তা নাই, সেসব যানবাহনকে যেতেই হচ্ছে এই ভয়াবহ রাস্তা দিয়ে। তাতে করে প্রতিদিন ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। বার বার সংস্কার করা হয়েছে এর আগে। কিন্তু নিম্নমাণের বিটুমিন ব্যবহার করার কারণে সংস্কারকাজ দীর্ঘমেয়াদী হয়নি। কাজ শেষ না হতেই আবার ভাঙ্গা শুরু হয়েছে। ফলে বছর না যেতেই যেকার সেই অবস্থায় পরিণত হয়েছে।’


এই রাস্তায় চলাচলকারী জেলার চৌপুখরিয়া গ্রামের আবুল কালাম বলেন, ‘রাস্তাটি ভয়ঙ্কর হয়ে আছে। যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল করায় দায় হয়ে পড়েছে। তার পরেও মানুষ জীবনের ঝূঁকি নিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হয়ে। অথচ কিছুদন আগেও সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু এখন একেবারেই চলাচলেল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে নিম্নমাণের বিটুমিন বা পরিমাণে বিটুমিন কম দেওয়ার কারণে।’


এদিকে তানোর-রাজশাহী মহাসড়কে খানা-খন্দকের হাত থেকে কিছুটা মুক্তি দিতে ১৫ দিনের মধ্যে ইট-সুড়কি ফেলা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। কিন্তু শুধুমাত্র উপজেলার চান্দুড়িয়া হাড়দহ বিলের রাস্তায় নামমাত্র কয়েকটি গর্তে ইট ফেলে হলেও অন্য স্থানগুলোতে খানা-খন্দকে ভর্তি থাকায় যানবাহন চলাচল করছে ব্যাপক দুর্ভোগ নিয়ে। ফলে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে জনসাধারণের মাঝে।

এ দুটি রাস্তা সংস্কার ও বিটুমিন নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহীর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সানিউল হক বলেন, ‘কিছু কিছু রাস্তায় খোলা বিটুমিন ব্যবহার করা হয়েছে এটা সঠিক। কারণ ওইসব রাস্তায় বিটুমিনের গাড়ি ঢুকতে পারেনি। তবে এখন আমা চেষ্টা করছি সরকার ঘোষণা অনুযায়ী রিফেইনারী বিটুমিন ব্যবহার করার। নিম্নমাণের বিটুমিন আর রাস্তায় ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। এর বাইরে ওই দুটি রাস্তা সংস্কারের জন্য দ্রুতই টেন্ডারকাজ শেষ করা হবে। আশা করছি আমরা কাজও দ্রুত শুরু করতে পারব।’