রাজশাহী মহানগর আ.লীগ: বির্তকিতদের নিয়েই হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ছাত্রলীগ নেতা গোলাম মূর্শিদ হত্যা মামলার যাবজীব্বন সাজাপ্রাপ্ত আসামিসহ বিতর্কিতদের নিয়েই হচ্ছে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। বলা যায়, ঘুরে-ফিরে তাঁরাই আসছেন নতুন কমিটিতে। যাদের অনেকেই শুধুমাত্র পদ দখল করে বালু বাণিজ্য, বালুর টেন্ডার বাণিজ্য, ভূমিদস্যুতা, নিয়োগ, তদবির বাণিজ্য করে এখন কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন গত পাঁচ বছরে, আবার পদ পেলেও অনেকেই থেকেছেন নিস্ক্রিয়। পদ ভাঙ্গিয়ে কারও কারও বিরুদ্ধে মাদক করাবারে জড়িত থাকাও অভিযোগও রয়েছে। কিন্তু সেই নেতাদেরই পুরস্কার স্বরুপ দেওয়া হচ্ছে নতুন কমিটিতেও ঠাঁই।

এমনকি গত সিটি নির্বাচনে যেসব নেতাদের কারণে ভোট নষ্ট হতে পারে টের পেয়ে মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষে জনসংযোগে নামতেও দেয়া হয়নি, তেমন নেতাদেরও পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে রাখা হচ্ছে। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ তৈরী হয়েছে ত্যাগী ও পরিশ্রমি নেতাদের মাঝে।

অভিযোগ উঠেছে, সভাপতি-সম্পাদকের ইচ্ছে না থাকা সত্তেও কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার চাপেও বিতর্কিত অনেককেই রাখতে হচ্ছে পুর্ণাঙ্গ কমিটিতে।

অন্যদিকে ছাত্রলীগের সাবেক তিন ত্যাগী নেতাকে এবার নতুন কমিটির সম্পাদকীয় পদে রাখা হচ্ছে। নতুন কমিটির এটিই ভালো দিক বলে মনে করছেন মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের জন্য ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কেন্দ্রে তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে। সেই হিসেবে ঘোষিতা আংশিক কমিটির সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার দফায় দফায় বৈঠক করে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছেন। এর বাইরে কেন্দ্রীয় নেতাদের ম্যানেজ করেও কেউ কেউ মহানগর সভাপতি-সম্পাদককে চাপ প্রয়োগ করেছেন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ বাগিয়ে নিতে। ফলে সভাপতি-সম্পাদকের ইচ্ছে না থাকা সত্তেও শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার চাপেও বিতর্কিত অনেককেই রাখতে হচ্ছে পুর্ণাঙ্গ কমিটিতে। যাদের মধ্যে ছাত্রলীগ নেতা গোলাম মূর্শিদ হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এক আসামিও রয়েছেন।

দলীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, রাজশাহী মহানসগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে এবারো জেষ্ঠ্য সহ-সভাপতির পদটি পেতে যাচ্ছেন সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সহধর্মিনী ও পরিশ্রমী নেত্রী শাহীন আকতার রেনী। তিনি গত কমিটিতেও একই পদে ছিলেন।

এছাড়াও সহ-সভাপতি পদে আগের কমিটির একই পদে থাকা মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, সৈয়দ শাহদত হোসেন, নিঘাত পারভীন, অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, মাহফুজুল আলম লোটনকেই রাখা হচ্ছে। তবে প্রয়াত রফিক উদ্দিনের স্থলে যায়গা করে নিতে পারেন আগের কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক মোস্তাক হোসেন। সহ-সভাপতি পদ পেতে যাওয়া এই নেতাদের মধ্যে অধিকাংশই নানা কাণ্ডে বিতর্কিত ছিলেন গত ৫ বছরজুড়ে। আবার কেউ ছিলেন একেবারেই নিস্ক্রিয়। কেউ মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয়দাতা নামেও পরিচিত ছিলেন। কেউ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে করেছেন নিয়োগ বাণিজ্য।

যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাক হোসেনের স্থলে আসতে পারেন আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আজাদ। একই পদে আগের কমিটির রেজাউল ইসলাম বাবুল, নাঈমুল হুদা রানা এবারও থাকছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

সাংগঠনিক সম্পাদক পদে তিনজনের মধ্যে আগের কমিটির শুধুমাত্র আসাদুজ্জামান আজাদের স্থলে সেখানে আসতে পারেন আগের কমিটির সদস্য পদে থাকা ত্যাগী নেতা আহসানুল হক পিন্টুকে। তবে থেকে যাচ্ছেন আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসলাম সরকার ও ছাত্রলীগ নেতা গোলাম মূর্শেদ হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি আজিজুল আলম বেন্টু।

আইন বিষয়ক সম্পাদক পদেই থাকছেন দলের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত অ্যাডভোকেট মোসাব্বিরুল ইসলামকেই রাখা হচ্ছে। এছাড়াও আগের কমিটির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক পদে থাকা জহির উদ্দিন তেতু, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সাইদুর রহমান রেন্টু, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক পদে ফিরোজ কবির সেন্টু, দফতর সম্পাদক মাহবুবুল আলম বুলবুল, ধম বিষয়ক সম্পাদক পদে আলহাজ্ব জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, প্রচার সম্পাদক প্রভাষক কামরুজ্জামান, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক নকিবুল ইসলাম নবাব, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব ওয়াহেদুন্নবী অনু, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ইয়াসমিন রেজা ফেন্সি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা সফিকুর রহমান রাজা, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মীর তৌফিক আলী ভাদু, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক বিতর্কিত সিদ্ধার্থ শংকর, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক এএসএম ওমর শরীফ রাজীব, শ্রম সম্পাদক ব্যাপক ব্যাপক বিতর্কিত মাহাতাব হোসেন চৌধুরী, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক কামার উল্লাহ সরকার কামাল, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. ফ. ম. আ. জাহিদ, উপ-দফতর সম্পাদক শফিকুল ইসলাম দোলান, উপ-প্রচার সম্পাদক মীর ইসতিয়াক আহম্মেদ লিমন এবং কোষাধ্যক্ষ ঢাকায় অবস্থানকারী শামসুজ্জামান খান আওয়াল এবারও পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে থাকছেন বলেই শোনা যাচ্ছে।

এমনকি এসব পদেও খুব একটা রদবদল হচ্ছে না। তবে সম্পাদকীয় এই পদগুলোতে এবার যায়গা করে নিতে পারেন ছাত্রলীগের সাবেক ত্যাগী নেতা যোবায়ের হোসেন রুবন, আমিনুর রহমান রুবেল ও শাহেন আলী সোভা।

দলীয় দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, এবারকার পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে এই তিন নেতা পদ পেলে এটিই হবে সবচেয়ে ভালো সংবাদ।

এর বাইরে নির্বাহী সদস্য পদেও আগের কমিটির অধিকাংশরাই থাকছেন এবারো-এমনটিও নিশ্চিত করেছে দলীয় দায়িত্বশী সূত্র। অথচ এই নেতাদের অনেকেই বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি করার সুবাদে ছিলেন নিস্ক্রিয়। এমনকি কেউ কেউ নানাকাণ্ডে ছিলেন বিতর্কিত।

এদিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা কেন্দ্রে জমা দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘আমরা তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। কেন্দ্রের দেওয়া সময়ের মধ্যেই তালিকা জমা দিব। তবে চেষ্টা করেছি এবার বিতর্কিতদের দলে যায়গা বা পদে না রাখার।’

স/আর