‘নিখোঁজ তরুণদের ভারী অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো পাহাড়ে’

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

বাংলাদেশ-মিয়ানমার-ভারত সীমান্ত লাগোয়া রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ির বড়থলি, বান্দরবানের রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলার দুর্গম এলাকাসমূহে যৌথবাহিনীর বিশেষ অভিযানে নবপ্রতিষ্ঠিত জঙ্গি গ্রুপের ৭ সদস্য এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে গজিয়ে ওঠা একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের ৩ সদস্য আটক হয়েছে।

আজ শুক্রবার বান্দরবানে আয়োজিত এক প্রেসব্রিফিংয়ে র‌্যাবের আইন ও জনসংযোগ শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গত ১০ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে বৃহস্পতিবার ২০ অক্টোবর রাতে একটি ক্যাম্প থেকে তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ, সামরিক পোশাক, জিহাদী বই উদ্ধার করা হয়েছে।

আটককৃতদের মধ্যে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়া নামের নবগঠিত জঙ্গি গ্রুপের সুরা সদস্য ও সামরিক শাখার দ্বিতীয় কমান্ডার মারুফ আহমদ মানিককেও আটক করা হয়েছে।

খন্দকার আল মঈন বলেন, সম্প্রতি বেশ কয়েকজন তরুণ নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দা সূত্রে জানতে পারি স্থানীয় একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের তত্ত্বাবধানে বেশ কিছু জঙ্গি বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির গহীন অরণ্যে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এমন খবরের ভিত্তিতে এসব এলাকায় অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। এই অভিযানে সেনাবাহিনী ও অন্যান্যরা সহযোগিতা করেছে বলে জানান তিনি।

অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছে জঙ্গি গ্রুপের মারুফ আহমদ মানিক (৩১), ইমরান হোসেন শাওন (৩১), কাওসার শিশির (৪৬), জাহাঙ্গীর আহম্মেদ জুনু (২৭), মোহাম্মদ ইব্রাহিম আলী (১৯), আবু বকর সিদ্দিক বাপ্পী (২৩) ও রুফু মিয়া (২৬) এবং স্থানীয় সন্ত্রাসী গ্রুপের যৌথান সাং বম (১৯), স্টিফেন বম (১৯) এবং মালসম বম (২০)। র‌্যাব তাদের সংগঠনের পরিচয় প্রকাশ না করলেও স্থানীয়ভাবে তারা কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ এর ক্যাডার হিসেবে পরিচিত।

তবে এই অভিযানে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দার শারক্কিয়ার মাস্টার মাইন্ড ও উপদেষ্টা শামীম মাহফুজকে আটক করা সম্ভব হয়নি। ধরা পড়া জঙ্গিরা জানিয়েছেন, কিছুদিন আগেও তিনি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে আসেন। তবে এখন তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে আছেন।

র‌্যাবের ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বিভিন্ন সময়ে নিখোঁজ হয়ে জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়ে পড়া ৩৮ জনের নাম ও পরিচয় আগে প্রকাশ করা হয়। শুক্রবার আরো ১৭ জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। এ নিয়ে জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়ে পড়া সন্দেহভাজন মোট ৫৫ জনের নাম প্রকাশ করা হলো।

বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার ভোরে তাদের র‌্যাব-১৫ এর বান্দরবান ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। দুপুরে অস্ত্রসহ তাদের সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করা হয়। র‌্যাবের একটি সূত্র জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। প্রাথমিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করা হলেও পরে দেশদ্রোহী মামলা দেওয়া হতে পারে।

এদিকে বেশ কয়েকজন সদস্য ধরা পড়ার পর কেএনএফ এর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রুমা উপজেলায় কেএনএফ নীতিনির্ধারকদের আর দেখা যাচ্ছে না। গত কয়েকদিন যাবৎ খোঁজ নেই সংগঠনের প্রধান নাথান বমের। এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব জনসংযোগ পরিচালক জানান, এই অভিযানে সরকারি কোনো বাহিনীর কেউ হতাহত হয়নি। নিহত-আহত হয়নি সন্ত্রাসী বা জঙ্গি গ্রুপের কেউ।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের কোনো সাধারণ মানুষ বা কোনো সংগঠন আমাদের টার্গেটে নেই। যারা জঙ্গি এবং সন্ত্রাসী কাজে জড়িত আমরা শুধু তাদের বিরুদ্ধেই অভিযান চালাচ্ছি। এই অভিযান আরো বেশ কয়েকদিন চলবে। সন্দেহভাজন জঙ্গিদের আটক করা ছাড়া আমরা অভিযান অব্যাহত রাখব।

 

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ