নারীর ‘চূড়ান্ত যৌন সুখানুভূতি’ রহস্যের সমাধান

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ফিমেল অর্গাজম বা নারীর চূড়ান্ত যৌন সুখানুভূতির বিষয়টি এতদিন বিজ্ঞানীদের হতবুদ্ধি করে রেখেছিল। অবশেষে সম্প্রতি গবেষকরা দাবি করেছেন, তারা হয়ত নারীর চূড়ান্ত যৌন সুখানুভূতির বিবর্তনীয় শিকড় খুঁজে পেয়েছেন।

গর্ভধারণের জন্য নারীদের চূড়ান্ত যৌন সুখানুভূতির অভিজ্ঞতা লাভ জরুরি নয়। আর তা ছাড়া শুধু যৌনমিলনের সময়ই যে নারীরা এই অভিজ্ঞতা লাভ করেন তাও নয়। ফলে বিষয়টি এতদিন বিজ্ঞানীদের হতবুদ্ধি করেই রেখেছিল।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এর রহস্য উদঘাটনের ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের মতে নারীদের চূড়ান্ত যৌন সুখানুভূতি মূলত আমাদের বিবর্তনীয় অতীত থেকে এসেছে। আর এর অনুষঙ্গ হিসেবে নারী দেহে যে হরমোনগত জোয়ার আসে তা সন্তান উৎপাদনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।

গবেষণাটির সহ-রচয়িতা সিনসিনাটি চিলড্রেনস হসপিটালের চিকিৎসক মেহায়েলা পাভলিসেভ বলেন, ”একটি বিষয় জোর দিয়ে বলা দরকার যে, আজকের নারীদের মধ্যে চূড়ান্ত যৌন সুখানুভূতির যে রূপ দেখা যায় তা আগেও একই রকম ছিল সেটা ভাবা ঠিক নয়। আমাদের ধারণা, সন্তান উৎপাদনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য নারীদেহে হরমোনগত যে জোয়ার আসে সেটিই আগে এই চূড়ান্ত যৌন সুখানুভূতির কেন্দ্রে ছিল। আর সেটিই পরবর্তীতে নারীদের মধ্যে বিবর্তনের মাধ্যমে আরো পরিবর্তিত রুপ নিয়ে হয়ে হাজির হয়।”

জেইজেড মলকিউলার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টাল ইভোলিউশন নামের জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধে পাভলিসেভ এবং ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গুন্টার ওয়েগনার নারীদের চূড়ান্ত যৌন সুখানুভূতির রহস্য উদঘাটনে বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণির ওপর চালানো গবেষণার বিবরণ দিয়েছেন। চূড়ান্ত যৌন সুখানুভূতির আনুষঙ্গিক ঘটনা নারীদেহের হরমোনগত জোয়ারের ওপর ভিত্তি করে তারা স্তন্যপায়ী প্রাণীদের অ্যানাটমি ও আচরণগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে এর রহস্য উদঘাটন করেছেন তারা।

বিড়াল ও ইঁদুরের মতো স্তন্যপায়ী জীবদের মধ্যে হরমোনগত এই জোয়ার শুধু যৌনমিলনের সময়ই দেখা যায়। যা ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নিঃসরণের জন্য সংকেত পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে।

কিন্তু বর্তমানে মানুষসহ অন্যান্য সমজাতীয় স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ক্ষেত্রে নারীদেহের ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নিঃসরণের ঘটনাটি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ঘটে থাকে। এর জন্য চূড়ান্ত যৌন সুখানুভূতির মাধ্যমে সন্তান উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোনগত জোয়ার সৃষ্টি করে সংকেত পাঠানোর আর কোনো দরকার হয় না।

এই গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয়, নারী-পুরুষের যৌনমিলনের সময় নারীরা চূড়ান্ত যৌন সুখানুভূতির অভিজ্ঞতা লাভের মধ্য দিয়ে তাদের ডিম্বাশয়ে সংকেত পাঠানোর মাধ্যমে ডিম্বাণু নিঃসরণের যে ঘটনা ঘটাতো তা বিবর্তনের একধাপ আগে সত্য ছিল। সম্ভবত আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি বছর আগেই মানুষ ও তার সমগোত্রীয় স্তন্যপায়ী প্রজাতির প্রাণীদের নারীদেহের ডিম্বাশয় থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিম্বাণু নিঃসরণ প্রক্রিয়া চালু হয়।

এই গবেষণা থেকে এও প্রমাণিত হয় যে, আগে মানব প্রজাতির নারী-পুরুষের যৌনমিলনের সময়ও নারীরা চূড়ান্ত যৌন সুখানুভূতির অভিজ্ঞতা লাভের মাধ্যমেই তাদের ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণু নিঃসরণের জন্য সংকেত পাঠাতো। কিন্তু সাড়ে ৭ কোটি বছর আগে নারীদের দেহের ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নিঃসরণের স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর থেকে ডিম্বাণু নিঃসরণে চূড়ান্ত যৌন সুখানুভূতির আর কোনো ভূমিকাই রইল না। এরপর নারীদের চূড়ান্ত যৌন সুখানুভূতির অভিজ্ঞতা সম্ভবত অন্য কোনো কাজে নিয়োজিত হয়।

পাভলিসেভ বলেন, ”ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নিঃসরণের জন্য সংকেত পাঠানোর কাজে ভূমিকা হারানোর পর থেকে নারীদের চূড়ান্ত যৌন সুখানুভূতির অভিজ্ঞতা নারী-পুরুষের বন্ধন শক্তিশালী করার মতো আচরণ সৃষ্টি বা তেমনই কোনো ক্ষেত্রে হয়ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সুতরাং আমরা বলতে পারিনা যে ফিমেল অর্গাজম পুরোপুরিভাবে মানব প্রজাতির পুনরুৎপাদন থেকে ভিন্ন কোনো ভূমিকায় সহযোজিত হয়েছে। কেননা, নারী-পুরুষের বন্ধন শক্তিশালী করার কাজও প্রজাতির পুনরুৎপাদন সংশ্লিষ্ট কাজ বটে।

গবেষকরা বলেছেন, এই তত্ত্বের পক্ষে বিভিন্ন প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীদের জননাঙ্গে ভগাঙ্কুরের অবস্থানের একটি তুলনামূলক চিত্র হাজির করা হয়। ভগাঙ্কুরই চূড়ান্ত যৌন সুখানুভূতির অভিজ্ঞতা লাভের প্রধান মাধ্যম। যেসব প্রজাতির নারী সদস্যরা তাদের ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নিঃসরণের জন্য যৌনমিলনের সময় চূড়ান্ত যৌন সুখানুভূতি এবং হরমোনগত জোয়ারের ওপরই নির্ভরশীল তাদের জননাঙ্গের যোনিপথের সম্মুখভাগেই এই ভগাঙ্কুরের অবস্থান থাকে। যাতে যৌনমিলনের সময় সহজেই এতে ঘর্ষণের মাধ্যমে উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। কিন্তু যে প্রজাতির নারী সদস্যরা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নিঃসরণ করে তাদের জননাঙ্গের যোনিপথ থেকে এই ভগাঙ্কুরের অবস্থান অনেক দূরে থাকে।

পাভলিসেভ বলেন, ”এ থেকে বেশির ভাগ নারীই কেন যৌনমিলনের সময় চূড়ান্ত যৌন সুখানুভূতির অভিজ্ঞতা লাভ করেন না তারও একটি ব্যাখ্যা মিলবে। মানব প্রজাতির নারী সদস্যদের জননাঙ্গের যোনিপথ থেকে ভগাঙ্কুরের অবস্থান দূরে হওয়ার কারণেই সঙ্গমের সময় তাদের চূড়ান্ত যৌন সুখানুভূতির অভিজ্ঞতা লাভ না করাই স্বাভাবিক।”

দ্য কেস অফ দ্য ফিমেল অরগাজম বইয়ের লেখক ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক এলিজাবেথ লয়েড বলেন, ”নারীদের চূড়ান্ত যৌন সুখানুভূতি এখন আর শুধু ইন্দ্রিয় সুখানুভূতি সৃষ্টি করা ছাড়া সন্তান উৎপাদনের ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকাই পালন করছে না। তার মানে এই নয় এটি এখন গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং এটি শুধু এখন আর প্রজাতির বিবর্তনে কোনো ভুমিকা পালন করছে না।”

তবে নারী-পুরুষের বন্ধন আরো শক্তিশালী বা ঘনিষ্ঠ করার ক্ষেত্রে এর ভুমিকা রয়েছে বলে অন্যান্য গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।
সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান,কালের কন্ঠ